শরীরের দুর্বলতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি রোগ ভোগের কারণে অনেক সময় শারীরিক দুর্বলতা অনুভব হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিশ্রামের তুলনায় অতিরিক্ত কাজের ফলে পেশীর ক্লান্তির কারণেও দুর্বলতা হতে পারে। শরীর দূর্বল লাগার কারণ যাই হোক না কেনো, এই সমস্যার সমাধান জরুরী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক খাদ্যাভ্যাস দুর্বলতা দূর করতে সক্ষম হয়। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জেনে নেব যে, শরীর দুর্বল হলে কি খেতে হয়?
দুর্বলতা কি? What is Weakness?
সাধারণভাবে দেখতে গেলে শরীরের এক বা একাধিক মাংসপেশীর কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়াকে দুর্বলতা বলে। তবে কিছু ব্যক্তি শুধুমাত্র দুর্বল অনুভব করেন, কিন্তু শারীরিকভাবে কোনওরকম শক্তিক্ষয় উপলব্ধি করেন না। যেমন : কোনও রকম ব্যথার জন্য দুর্বলতা, আবার কিছু ক্ষেত্রে কর্মক্ষমতা হ্রাসের ফলে দুর্বলতা হয়, একে “অবজেক্টিভ উইকনেস” বলে।
অন্যদিকে দুর্বলতার অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে দুর্বলতার চিকিৎসা করা হয়। দুর্বলতার অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে দুর্বলতার চিকিৎসা করা হয়।
জেনে রাখা ভালো যে দুর্বলতা মূলত দুই ধরনের হয়, শারীরিক ও মানসিক। চিকিৎসা দুই সমস্যার ক্ষেত্রেই সম্ভব। তাই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা উচিত।
শরীর দুর্বল এর লক্ষণ গুলো কি কি? What are the symptoms of weakness?
- ওজন কমে যাওয়া,
- পায়ে ক্রমাগত ঝাঁকুনি বা অসাড়তা লক্ষ্য করা,
- ত্বক রুক্ষ হওয়া,ত্ব
- কের যেকোনো স্থানে লাল দাগ তৈরি,
- অত্যধিক তৃষ্ণা পাওয়া,
- ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া,
- দৃষ্টি শক্তি ঝাপসা হওয়া,
- কোনো কিছুতে মনোযোগ সহজে দিতে না পারা,
- রক্ত চলাচল কমে যাওয়া,
- ক্ষত স্থান সহজে না শুকানো ইত্যাদি।
শরীর দুর্বল লাগে কেন? Why does the body feel weak?
শরীর দুর্বল লাগার বিভিন্ন কারণ জেনে নিন :
১. কম ঘুম:
ঘুম পর্যাপ্ত পরিমাণে না হওয়ার ফলে শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে। কোন কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে বা পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আপনি স্লিপ ইনারশিয়ায় ভুগতে পারেন। তাই রোজ ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম দরকার। তবে পুরোপুরি ৮ ঘন্টা ঘুমালে ভাল।
২. রোগ-ব্যধি:
ক্লান্তির সমস্যার পেছনে অনেক গুরুতর অসুখও দায়ী হতে পারে। তাই ঘুমিয়ে উঠেও ক্লান্ত লাগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. জীবন যাপন:
আপনি যদি সারা দিন শুয়ে বসে থাকেন তবেও শরীর ঝিম ধরে, ফলে মনে হবে আপনি খুব ক্লান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্কদের সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট বা আড়াই ঘন্টা মাঝারি শারীরিক ব্যায়াম করা বা হাঁটা উচিত।
৪. বিষন্নতা:
বিষন্নতার কারণে ঘুমের সমস্যা হলেও শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে। তাই বিষন্নতায় ভুগলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৫. জলশূন্যতা:
শরীরে জলশূন্যতা হলে শরীর দুর্বল হয়। এর ফলে ঠিকঠাক ঘুম হয় না। তাই জল পান করা উচিত।
৬. পুষ্টিকর খাবারের অভাব :
শরীরে পুষ্টির অভাব থাকলে সামান্য পরিশ্রমেই শরীর ক্লান্ত হয়। তাই পুষ্টিকর ও শক্তি সঞ্চয়কারী খাবার যেমন ডিম, কলা, দুধ, ফল, বাদাম, মাছ, মাংস, শাক-সবজি ইত্যাদি খেলে শরীরের পুষ্টির চাহিদা মিটবে এবং দিনভর ক্লান্তিভাব দূর হবে।
৭. শরীরচর্চা সঠিকভাবে না করলে :
সকালে ঘুম থেকে উঠে কমপক্ষে এক ঘণ্টা হালকা এক্সারসাইজ করা উচিত। এতে অলসতা দূর হওয়ার পাশাপাশি শরীর সুস্থ ও সবল থাকবে। এছাড়াও আধঘণ্টার হাঁটা শরীর ফুরফুরে রাখে। এটি ক্লান্তি দূর করার প্রধান উপায় হতে পারে। তবে ব্যায়ামে অনিয়ম করলেও শরীর দূর্বল হয়ে পড়তে পারে।
দুর্বলতার জন্য চিকিৎসার বিকল্পগুলি কী কী? What are the treatment for weakness?
শারীরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনশীল অবস্থা দুর্বলতায় অবদান রাখতে পারে। দুর্বলতার জন্য চিকিৎসার কিছু সাধারণ উপায় হল :
পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা :
আয়রন, ভিটামিন B 12 বা ভিটামিন D এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব পূরণ করা। ফল, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন এবং শস্য সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্যতালিকা পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে। ডিহাইড্রেশন না হতে দেওয়া : পর্যাপ্ত তরল গ্রহণের ফলে হাইড্রেশন বজায় রাখা যেতে পারে। ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন বা ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকসও হারানো তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইট পূরণ করতে সাহায্য করে।
শারীরিক অত্যধিক পরিশ্রম না করা :
সঠিক বিশ্রাম ছাড়া অত্যধিক শারীরিক কার্যকলাপ না করায় উচিত। নয়তো পেশী ক্লান্তি এবং দুর্বলতা হতে পারে। বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত ঘুম পেশীর স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য অপরিহার্য। অ্যানিমিয়ার সমস্যা সমাধান : রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দুর্বলতা এবং ক্লান্তি হতে পারে। তাই আয়রন সম্পূরক, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
স্নায়বিক ব্যাধি দূর করা :
স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এমন অবস্থা দুর্বলতা এবং ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে।তাই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী দ্বারা নির্ধারিত ওষুধ, শারীরিক থেরাপি এবং জীবনধারা পরিবর্তন করা উচিত। এর মাধ্যমে অন্তর্নিহিত স্নায়বিক অবস্থার ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব।
জ্বরের পর দুর্বলতা কাটাতে কি খাবেন ? What to eat to reduce weakness after fever?
প্রত্যেক সময় ঋতু বদলের কারণে অনেকেরই জ্বর হয়। জ্বরে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ধরনের দুর্বলতা উঠতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগে। এই ধরনের দুর্বলতা কমানোর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ। জ্বরের পর দুর্বলতা কাটাতে কি করতে হবে দেখে নিন :
- জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
- বিভিন্ন ধরনের ডাল, মটরশুঁটি, ছোলা, সয়ামিট, মাশরুম, বাদাম, তিসি, চিয়াসিড এসব খাবারে ভালো পরিমাণে প্রোটিন থাকে। পাশাপাশি মাংস দিয়ে স্যুপ করে খেলে এটি শরীরের দুর্বলতা কমায়।
- মৌসুমি নানা রকমের তাজা ফল, কমলা, মাল্টা, আপেল, পেয়ারা, আমড়া, পাকা পেঁপে, আম, আনারস, আঙুর, ডালিম, আনার লেবু জাতীয় ফল, ডাবের পানি নিয়মিত খেতে হবে।
- কচুশাক, পালংশাক, মিষ্টিকুমড়া, আলু, গাজর এগুলো শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে ।শ
- রীরে জলে পরিমাণ ঠিক রাখতে ডাবের জল ও বিভিন্ন ধরনের ফলের রস খেতে হবে।
- খেতে যাদের সমস্যা হয় তারা নরম সেদ্ধ জাউ ভাত, খিচুড়ি, বিভিন্ন ধরনের সবজি স্যুপ খেতে পারেন।
- জ্বরের পরের দুর্বলতা কাটাতে আদা দিয়ে চা পান করলেও উপকার পাবেন। এসব ছাড়াও রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে, যা রোগীকে দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করবে।
অ্যাথেনিয়া জনিত দুর্বলতার জন্য প্রতিরোধ কি? What is the prevention for weakness caused by asthenia?
যে কোনো ভাইরাসজনিত রোগের পর শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল লাগা, অবসাদ বা ক্লান্তি বোধ হওয়া, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, হাত-পা অবশ অবশভাব, ঝিঁঝিঁ লাগা, মাংসপেশি, হাড় বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, কোমরে ও মেরুদণ্ডে ব্যথা, অরুচি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। একে অ্যাথেনিয়া বলে।
এই সমস্যা প্রতিরোধ করা পুরোপুরি সম্ভব নয়। তবে, একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে যা অ্যাথেনিয়াও হতে পারে। অ্যাথেনিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমাতে কিছু পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে:
- ধূমপান ত্যাগ করুন।
- অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন এড়ান।
- স্বাস্থ্যকরভাবে খাওয়া।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- প্রয়োজনে ওজন হ্রাস করুন।
- চাপের মাত্রা কমাতে পদক্ষেপ নিন।
- পর্যাপ্ত ঘুম।
অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণ কি? What are the causes of additional weakness?
অতিরিক্ত দুর্বলতার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- জলশূন্যতা, পুষ্টির অভাব, অস্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইল, অনিয়মিত ব্যায়াম, ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি, সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের ঘাটতি, শ্বাসনালি অথবা মূত্রনালির সংক্রমণ, শরীরের ভিতর দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগের বসবাস (যেমন-থাইরয়েডের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, স্টোক, অনিয়মিত জ্বর) ইত্যাদি।
সকালবেলা শরীর দুর্বল লাগে কেন? Why does the body feel weak in the morning?
সকালবেলা ক্লান্তির পেছনে অনেক গুরুতর অসুখও দায়ী হতে পারে। এর নেপথ্য কারণ হতে পারে অ্যানিমিয়া, অ্যাংজাইটি, ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম, অবসাদ, ডায়াবিটিস, থাইরয়েড ইত্যাদি। তাই ঘুমিয়ে উঠেও ক্লান্ত লাগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফেলুন।
শরীর খুব দুর্বল লাগার কারণ কি? Why does the body feel too much weak?
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ভাইরাসের সংক্রমণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এমনকি প্রচণ্ড মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থেকেও শরীর দুর্বল হতে পারে। ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার পরিমাণ ওঠানামার কারণেও ক্লান্তি হতে পারে।
ঘুমানোর পর পা দুর্বল হয় কেন? Why legs feel weak when you wake up?
পায়ে অপর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় । এটি শ্বাসকষ্টের সমস্যা যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া, সেইসাথে অ্যালার্জি, সাইনাসের সমস্যা এবং উপরের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে হতে পারে। এটি আয়রনের অভাবের কারণেও হতে পারে।
কোন ভিটামিন খেলে ক্লান্তি দূর হয়? Which vitamin relieves fatigue?
আপনার সক্রিয় জীবনধারা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়। ভিটামিন B 12 এবং আয়রন উভয়ই ক্লান্তি এবং ক্লান্তির অনুভূতি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তাই ভিটামিন B 12 এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
শেষ কথা, Conclusion :
আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যগুলো থেকে আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে, শরীর দুর্বল হলে কি খেতে হয় ? তাহলে আর দেরি না করে আজই পুষ্টিকর খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।