আলহামদুলিল্লাহ একটি আরবি বাক্যাংশ যার অর্থ হল ‘সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর’, কখনও কখনও আল্লাহকে ধন্যবাদ হিসেবেও এই কথাটির ব্যবহার করা হয়। এই শব্দগুচ্ছকে বলা হয় তাহমিদ বা হামদালাহ। মুসলমানদের দ্বারা এই শব্দটির ব্যবহার প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়। যেকোনো ভালো কাজের শেষে মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই দোয়া পড়া আবশ্যক।
আলহামদুলিল্লাহ কথার অর্থ, Meaning of the word Alhamdulillah
আলহামদুলিল্লাহ বাক্যাংশটির তিনটি মূল অংশ রয়েছে। এর অর্থ হল :
- আল-, নির্দিষ্ট কোন কিছুকে বোঝাতে, ইংরেজি “দ্য” এর মত।
- হামদ (উ ), এর আক্ষরিক অর্থ “প্রশংসা”, “ধন্যবাদ”।
- লি-(আ)ল্লাহ, পদান্বয়ী অব্যয় “লি” + বিশেষ্য আল্লাহ। লি- একটি সম্প্রদানকারী অব্যয়, এর অর্থ হলো “জন্য”।
এই বাক্যাংশটি কোরআনের প্রথম সূরার (সূরা ফাতিহা) দ্বিতীয় আয়াতে প্রথম পাওয়া যায়।
ঐতিহাসিক উৎসে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ কথাটির ব্যবহার , Historical importance and usage of the term Alhamdulillah
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ একটি হাদীসে লিখেছেন, মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যে, আল্লাহকে সর্বাধিক স্মরণ করার জন্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হল সর্বোত্তম পুনরাবৃত্তি এবং সর্বোত্তম প্রার্থনা (দোয়া) হল আলহামদুলিল্লাহ।
আবু দাউদ থেকে আনাস ইবনে মালিক লিখেছেন যে মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে বান্দা আলহামদুলিল্লাহ বলেন, যখন খাবারের অংশ গ্রহণ করেন এবং পানির খসড়া পান করেন।
আলহামদুলিল্লাহ কথাটি কখন ব্যবহার করা যেতে পারে ? When can Alhamdulillah be used?
মুসলমানদের বিশ্বাস যে, আপনি যত বেশি আল্লাহ ও রাসূলের নিয়ম কানুন মেনে চলবেন তত বেশি সওয়াব পাবেন এবং পরকালে আপনার জীবন তত বেশি সুন্দর হবে। তাই তারা যখন কোনো ভালো কাজ সম্পন্ন করবে বা যখন কোন কিছু খাবে তখন আলহামদুলিল্লাহ বলবে। আলহামদুলিল্লাহ বলতে আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া যেকোনো কিছুর (ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয়ই) প্রতিক্রিয়া বোঝানো হয়।
সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে ভাল জিনিসের জন্য ধন্যবাদ জানাতে এই কথাটি ব্যবহার করে। লক্ষ্য করে দেখবেন কেউ ‘আপনি কেমন আছেন?’ জিজ্ঞাসা করলে আরবিতে প্রায়শই আলহামদুলিল্লাহ বাক্যাংশ দিয়ে উত্তর দেওয়া হয়। যখন কোন খুশির সংবাদ শোনা হয় তখন আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ মূলত জীবনের প্রতিটা মুহূর্তের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের একটি মাধ্যম।
কৃতিত্ব বা সৌভাগ্যজনক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার সময়ও এর ব্যবহার করা যেতে পারে। মুসলমানদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই খাবার শেষ করার পরে অথবা হাঁচি দেওয়ার পরেও আলহামদুলিল্লাহ বলে থাকেন।
আলহামদুলিল্লাহ এর পরিবর্তে কি বলতে হয়? What to say in reply of of Alhamdulillah?
কেউ যদি আলহামদুলিল্লাহ বলে তবে উত্তর বলতে হয় ইয়ারহামুকাল্লাহ। যেমন কোনো হাঁচিদাতা আলহামদুলিল্লাহ বললে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলুন। ইয়ারহামুকাল্লাহ এর অর্থ হলো ‘আল্লাহ আপনার উপর রহম করুণ’। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা মুসলিমের হক ও ওয়াজিব।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ কথার ব্যবহার ছাড়াও পরিবর্তে ‘মাশাল্লাহ’ কথা ব্যবহার হয় পূর্ববর্তী ঘটনার জন্য, এছাড়াও ‘ইনশাআল্লাহ’ কথার ব্যবহার হয় ভবিষ্যতের জন্য। মাশাল্লাহ একটি আরবি শব্দগুচ্ছ যার অর্থ হল “আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন।” যা কিছু ঘটেছে তার জন্য উত্তেজনা এবং ধন্যবাদ দেখানোর জন্য মাশাল্লাহ কথাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু অনেকেই ভুল করে অনেক সময় “ইনশাআল্লাহ” বলার যায়গায় “আলহামদুলিল্লাহ” বলে ফেলেন। আবার কখনো বা সুবহানাল্লাহ এর জায়গায় আলহামদুলিল্লাহ বলে ফেলেন। আসলে শব্দগুলোর অর্থ সঠিকভাবে না জানার কারণে এমন বিপাকে পড়তে হয়।
আলহামদুলিল্লাহ কথাটি ব্যবহারের ফজিলত ? Fazilat of using the word Alhamdulillah
ইসলামের এক অপূর্ব শিক্ষা-আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামীন। দুনিয়ার নেয়ামতের জন্যও আলহামদুলিল্লাহ, আসল নেয়ামত ঈমান ও ইসলামের নেয়ামতের জন্যও আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা এবং শুকরিয়ার অর্থ বহন করে এবং এটা সর্বোত্তম দোয়া। হাদিসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সর্বোত্তম ফজিলতপূর্ণ বাক্য এবং সর্বোত্তম দোয়া হলো আলহামদুলিল্লাহ।
- নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, আলহামদুলিল্লাহ মিজানকে পূর্ণ করে দেয়। আর সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ শব্দ দুটি আসমান ও জমিনের খালি জায়গা পূর্ণ করে দেয়। (মুসলিম. ২২৩)
- নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি আমার কোনো উম্মতকে পুরো দুনিয়া দিয়ে দেওয়া হয় আর সে আলহামদুলিল্লাহ বলে তাহলে এই শব্দ পুরো দুনিয়া থেকে উত্তম অর্থাৎ, পুরো পৃথিবী পেয়ে যাওয়া এতো বড় নেয়ামত নয়, যা আলহামদুলিল্লাহ বলার মধ্যে রয়েছে, কারণ এই পৃথিবী তো একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহর সওয়াব থেকে যাবে। (ইবনে মাজা)
- হাদিসে নবীজি বলেছেন, যখন তুমি আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করবে তখন আল্লাহ তায়ালা নেয়ামতে বরকত দেবেন।
- হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, বান্দা যখন নামাজে ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ বলে তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।
- সামুরা বিন জুনদুব রা. বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয় বাক্য চারটি, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার…(মুসলিম, ২১৩৭)
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যখন কষ্টের মধ্যে থাকতেন তখন “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল” বলতেন। আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লী হাল এর অর্থ- “সর্ব অবস্থায় আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।”
আল্লাহ তায়ালা যখন তাঁর কোনো বান্দাকে নেয়ামত দান করেন এবং সে এতে আলহামদুলিল্লাহ বলে, তবে সেই বান্দা আল্লাহ তায়ালাকে যেই জিনিস দিলো (আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়) তা ওই জিনিস থেকেও উত্তম যা সে নিয়েছে (আল্লাহর নেয়মত)।
অসুস্থ ব্যক্তির ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলার ফজিলত, Fazilat of saying ‘Alhamdulillah’ to a sick person
অসুস্থ হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করা বা আল্লাহর প্রশংসা করায় রয়েছে নিষ্পাপ হওয়ার মহাসুযোগ।
- হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, অসুস্থ অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা করলে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে নিষ্পাপ করে দেন।
- হাদিসে কুদসিতে এসেছে-মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমি আমার মুমিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি, আর বান্দা সে অবস্থায় আমার প্রশংসা করে- ‘اَلْحَمْدُ لله আলহামদুলিল্লাহ’ বলে; তবে সে বিছানা থেকে এমনভাবে ওঠে দাঁড়ায়; যেন তার মা তাকে ভূমিষ্টকালে যেমন জন্মদান করেছিল।’ (হাদিসে কুদসি)
- শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘যে নেয়ামত মানুষকে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়; তার চেয়ে বিপদে পড়ে আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া অনেক উত্তম’।
তাই মুমিন মুসলমানের উচিত, অসুস্থ হলেও মহান আল্লাহর প্রশংসা করতে ভুলে না যাওয়া, বরং অসুস্থ অবস্থায় মহান আল্লাহর বেশি বেশি তাসবিহ ও প্রশংসা করা। এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাঁর অসুস্থ বান্দাকে গুনাহমুক্ত করে দেবেন।
শেষ কথা, Conclusion
মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করার জন্য অন্যতম একটি তাসবিহ হলো আলহামদুলিল্লাহ। কৃতজ্ঞতা একটি শক্তিশালী আবেগ যা আমাদেরকে সুখী এবং সন্তুষ্ট বোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এটি আমাদেরকে আমাদের জীবনে ভাল জিনিসগুলির প্রতি মনোযোগ দিতে এবং আমাদের হতাশার উপর মনোনিবেশ করা এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
কোনো কাজ করার পর বা কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ বললে ব্যক্তির ব্যাক্তিগত আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং মহান আল্লাহ তায়ালা কাজের মধ্যে সফলতা দান করেন বলে মুসলমানদের বিশ্বাস। আল্লাহ এই পৃথিবীর পালনকর্তা এবং সৃষ্টিকর্তা। তাকে খুশি করতে পারলে ইহকাল এবং পরকাল অনেক সুখের হবে।