দোয়া ইউনুস-এর ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি। মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন যে এ দোয়ার সঠিক আমলে মানুষ দুনিয়ায় যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে উপকার পায়। হাদিসেও দোয়া ইউনুস-এর ফজিলত ও উপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে।
দোয়া ইউনুস-এর পরিচয়, Know about Doa Yunus
দোয়া ইউনুস নিয়ে গল্পে বর্ণনা করা হয় যে আল্লাহর পয়গাম্বর হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দেশ ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে দেন, তখন একটি বড় মাছ তাঁকে গিলে গেলে, তিনি মাছের পেটে বন্দি হন। এ অবস্থায় মাছের পেটে বন্দী থাকায়, বিপদে পড়ে তিনি মহান আল্লাহর কাছে যে দোয়া পড়েন আর সে দোয়ার বরকতে আল্লাহ তাকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তাই দোয়া ইউনুছ। আর দোয়াটি হলো-
لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
দোয়া ইউনুস উচ্চারণ, Pronunciation
লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।’
দোয়া ইউনুস অর্থ : Meaning
তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।’
দোয়া ইউনুস-এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন, Benefits of Doa Yunus
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানের জন্য সে ঘটনা ও এ ফজিলতপূর্ণ দোয়াটি তুলে ধরে বলেন-
وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ – فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ ۚ وَكَذَٰلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ
‘আর মাছ ওয়ালার (ইউনুস আলাইহিস সালাম) কথা স্মরণ করুন। তিনি রাগ করে চলে গিয়েছিলেন। অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধরতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে (মাছের পেটে থাকা অবস্থায়) এ কথা বলে আহ্বান করলেন-
لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।’
অর্থ : তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।’
অতপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭)
তাফসিরে তাবারিতে আয়াতের ব্যাখ্যায় যা বলা হয়েছে :
আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লাহর কথায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে বন্দি থাকা অবস্থায় আমাকে ডাকার ফলে যেভাবে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম সেভাবে আমি মুমিনদেরকেও বিপদ থেকে উদ্ধার করব যখন তারা আমার কাছে সাহায্য চায় এবং আমাকে ডাকে।’
হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যুননুন (মাছ ওয়ালা) ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে দোয়া করেছিলেন-
لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।’
অর্থাৎ ‘তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি গোনাহগারদের দলভুক্ত। যখনই কোনো মুসলিমের (দোয়া ইউনুস) মাধ্যমে দোয়া করে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তার দোয়া কবুল করে থাকেন।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
দোয়া ইউনুস পড়লে কি হয়? What happens if you recite Doa Yunus?
আল্লাহর নবী ইউনুস আ. এই দোয়া পাঠ করেই আল্লাহর রহমতে মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কেউ দোয়া ইউনুস কয়েকবার পড়ে দোয়া করে তার দোয়া কবুল হয়। কেউ যদি বিপন্ন বা বিপদগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পাঠ করে, আল্লাহর রহমতে সে বিপদ থেকে উদ্ধার পায়।
দোয়া ইউনুস কত নাম্বার আয়াত? Doa Yunus koto number Ayaat?
সূরা ইউনুস (আরবি ভাষায়: سورة يونس) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের দশম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১০৯ টি।
খতমে ইউনুস কত বার পড়তে হয়? How many times to read Khatme Yunus?
বিভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে, দৈনিক এক হাজার বার দোয়া ইউনুস পড়লে পদমর্যাদা সমুন্নত হয়। আল্লাহ তার রুজি-রোজগারে সমৃদ্ধি দান করেন। দুঃখ-যন্ত্রণা, পেরেশানি, অশান্তি ও কষ্ট-প্রভৃতি দূর করেন।
দোয়া ইউনুস নামকরণ, Why is Surah Yunus named so?
সূরাটির নাম 98 নং থেকে নেওয়া হয়েছে, যেখানে হযরত ইউনুস (যোনা) এর উল্লেখ রয়েছে । নামটি, যথারীতি, প্রতীকী এবং ইঙ্গিত করে না যে সূরাটি হযরত ইউনুসের গল্পের সাথে সম্পর্কিত।
ইউনুস বইটি কে লিখেছেন এবং কবে লেখা হয়েছিল? Who wrote the book of Yunus and when was it written?
যোনার বইটি বেনামী । আমাদের আসলেই কোন ধারণা নেই যে এটি কে লিখেছে এবং বইটি আসলেই কোন সূত্র দেয় না যে এটি কে লিখেছেন। অবশ্যই, এই ধরনের একটি গল্প এমন একটি গল্প যা সম্ভবত এটির ব্যক্তিকে নিয়ে উদ্ভূত হবে। এর মানে এই নয় যে যোনা বইটি লিখেছেন।
হযরত ইউনুস সম্পর্কে কুরআন কি বলে? What does the Quran say about Hazrat Yunus?
মহান কোরানে, আমরা পড়ি যে ইউনূস “অন্ধকারের মধ্য দিয়ে কেঁদেছিলেন ।” তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ, তিনি নন, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণে আছেন। তিনি চিৎকার করে বলেন, “তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই” এবং সাহায্য প্রার্থনা করে। সাহায্য চাওয়ার সময়, তার প্রার্থনা শোনা যায়।
দোয়া ইউনুস পড়ার নিয়ম জেনে নিন, Know the rules of reading Doa Yunus
যে কোনো বালা বা মুসিবত, বিপদ-আপদ, দুশ্চিন্তা-পেরেশানি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ইত্যাদি থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া ইউনুস পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর আমল। কিন্তু অনেকেই জানেন না এ দোয়া ইউনুস কখন, কীভাবে এবং কতবার পড়তে হয়? মহান আল্লাহর কাছে একান্ত বিনয় ও নম্রতা, একাগ্রতা, পূর্ণ আন্তরিকতা ও ভয়ভীতির মাধ্যমে যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ বা সংখ্যা নেই। তবে এ দোয়া কবুল ও উপকারিতা লাভে রয়েছে কিছু নিয়ম-নীতি আর তাহলো-
আমির সানআনি বলেন, ‘যদি বলা হয়, এটা তো একটা জিকির, দোয়া নয়, তবে আমরা বলব, এটি এমন একটি জিকির যা দ্বারা দোয়া শুরু করা হয়। এটা পড়ার পর যা ইচ্ছা দুআ করা যাবে।’ (আত-তানবির)
– উক্ত পদ্ধতিতে দোয়া ইউনুস পাঠ করার পর আল্লাহর কাছে কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য নিয়ে দোজা করলে, আশা করা যায়, মহান দয়ালু দাতা আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন। এ ক্ষেত্রে দোয়া কবুলের শর্তাবলি ও আদব ঠিক থাকতে হবে।
- – এ দোয়ার আমলকারীকে অবশ্যই হালাল উপার্জন থেকে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা এবং হালাল অর্থের উপর জীবন যাপন করা থেকে দূরে থাকতে হবে।
- – আল্লাহর প্রশংসা ও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ দোয়ার শুরুতে করা হয়। দোয়া শেষে আবারও দরুদ পাঠ করা ভালো।
- – অন্তরে দৃঢ় আস্থা ও মনোভাব অক্ষুণ্ন রাখা উচিত দোয়া কবুল হওয়ার জন্য।
- – একান্ত বিনয়-নম্রতার সাথে কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বারবার দোয়া করতে থাকা।
- – দোয়া করতে করতে বিরক্ত না হওয়া।
- – দোয়া কবুলের জন্য তাড়াহুড়া না করা।
- – দোয়ার মধ্যে গোনাহের কোনো কিছু না থাকা ইত্যাদি।
দোয়া কুবুল, Doa Qubul
মহান আল্লাহ তাআলা তিনভাবে বান্দার দোয়া কবুল করে থাকেন, যা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত।
- – কখনও কখনও মহান আল্লাহ বান্দাকে তার প্রত্যাশিত চাওয়াটি দুনিয়াতেই পূরণ করে দেন।
- – আল্লাহের প্রতিদান কখনও কখনও আখেরাতের জন্য জমা রাখেন। তিনি বান্দার দুনিয়াবি প্রত্যাশা পূরণ না করে এই দোয়ার বিনিময়ে আখেরাতে তাকে মহা পুরস্কারে ভূষিত করবেন।
- – আল্লাহ এ দোয়ার কারণে কখনও তাকে বড় ধরনের বিপদ থেকে হেফাজত করেন।
শেষ কথা, Conclusion
মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ তাআলা যথাযথভাবে দোয়া ইউনুস-এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামকে যেভাবে বিপদ থেকে হেফাজত করেছিলেন। দোয়া ইউনুস এর মাধ্যমে দুনিয়াবাসির সকলে যেন যাবতীয় বিপর্যয় থেকে দূরে থাকতে পারেন। আমিন।