দুই সিজদার মাঝে দোয়া নামাজের অন্যান্য দোয়ার মতোই সুন্নত। কিন্তু এটি নামাজের ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত নয়। অন্যদিকে হাম্বলি মাজহাব মতে এটি ওয়াজিব; কারণ, রাসুল (সা.) নিয়মতান্ত্রিকভাবে দুই সিজদার মাঝে দোয়া পড়তেন। তবে দুই সিজদার মাঝের সময় দোয়া পড়ার হুকুম নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে এই দোয়াটি মুস্তাহাব।
দুই সিজদার মাঝের জিকির বা দোয়ার হুকুম, Dua between two Sijda or Zikir
নামাজের প্রতিটি আমল আল্লাহর জিকির থেকে খালি নয় এবং সবগুলো জিকির ওয়াজিব। একইভাবে দুই সিজদার মাঝের জিকির বা দোয়ার হুকুমও অন্যান্যগুলোর মতো। সে ক্ষেত্রে অন্তত ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি’ একবার বলা ওয়াজিব। এর চেয়ে বেশি বলা মুস্তাহাব। তবে ‘জমহুর ওলামা’ বা অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম যে মত দিয়েছেন, এই দোয়া শক্তিশালী ও অধিক যুক্তিযুক্ত।
যদিও এসব শব্দ বা দোয়া পাঠ করা নামাজের ফরজ বা ওয়াজিব। কিন্তু এগুলো আদায় করা হলে নিশ্চিতভাবে নামাজের ভেতরে ধীরস্থিরতা আনয়ন সহজ হয়ে যায়, যা নামাজ সহিহ হওয়ার জন্য অন্যতম ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় দিক। বিশেষ করে রুকূর পরে সোজা হয়ে স্থিরভাবে দাঁড়ানো এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে সোজা হয়ে বসা ওয়াজিব। এই ওয়াজিব একই নামাজে একবার তরক করলে সাহু সিজদার মাধ্যমে তা শুধরে নেয়া সম্ভব কিন্তু বারংবার তরক করলে সেই নামাজই ভঙ্গ হয়ে যাবে।
![দুই সিজদার মাঝের জিকির বা দোয়ার হুকুম](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/03/sij2-1024x576.jpg)
সে কারণে আপনি যদি দুই সিজদার মাঝে স্থির হয়ে সামান্য সময় বসে থেকে এবং রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পরে একটু সময় নিয়ে স্থিরতার সাথে নামাজ আদায়ের শর্ত পূরণের লক্ষ্যে এই ওয়াজিবটি আদায় করে নেন এবং এসব তাসবীহ না পড়েন, তাতেও নামাজ সহিহ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। আপনার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
দুই সিজদার মাঝের দোয়া পড়ার বিধান, The provision of reciting Dua between two Sijda
প্রথম সাজদাহের পর মাথা তুলে সোজা হয়ে বসুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ভঙ্গিটি এমনভাবে লম্বা করতেন যে, আল-বারা (রাঃ) বলেছেন, “(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দাঁড়ানো, তার রুকূ, যখন তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন, তার সুজূদ এবং সময়। দুই সাজদার মাঝখানে প্রায় একই রকম ছিল”
নিজেকে নতজানু হয়ে কল্পনা করুন, শাস্তি পাওয়ার জন্য ভয়ের দিনে আপনার নাম ডাকার জন্য অপেক্ষা করছেন। তারপর আপনাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে; এই আপনার সুযোগ. অনেক দেরি হওয়ার আগে, আপনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। দুনিয়া ও আখেরাতের সকল কল্যাণ এই দু’আতে একত্রিত হয়েছে।
![দুই সিজদার মাঝের দোয়া পড়ার বিধান](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/03/sij4.jpeg)
দুই সিজদার মাঝের দোয়া :
হাদিসে দুই সিজদার মাঝের দোয়ার শব্দগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্নতা রয়েছে। কোথাও শব্দ কম, আবার কোথাও বেশি আছে। তবে সব মিলিয়ে দোয়াটিতে সাতটি শব্দ রয়েছে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মাঝে নিম্নের দু’আ পাঠ করতেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ، وَارْحَمْنِي ، وَاجْبُرْنِي ، وَاهْدِنِي ، وَارْزُقْنِي ، وَعَافِنِي ، وَارْفَعْنِي
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়ার হামনি, ওয়াজবুরনি, ওয়াহদিনি, ওয়ারজুকনি, ওয়া আ’ফিনি ওয়ারফা’নি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার ওপর রহম করুন। আমার প্রয়োজন পুরো করে দিন। আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং আমাকে রিজিক দান করুন। আমাকে সুস্থতা দান করুন এবং আমার সম্মান বৃদ্ধি করুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৮৫০; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৮৮)
হজরত হুজায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে এ দোয়াটি পড়তেন-
![দুই সিজদার মাঝের দোয়া](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/03/sij5-1024x576.jpg)
আরবি : رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي
উচ্চারণ : রব্বিগফির লী, রব্বিগফির লী। (ইবনু মাজাহ, আবু দাউদ)
অর্থ : হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।
হাদিসের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সুনানে নাসায়িতে দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে ‘রাবিবগফিরলি’ দোয়াটি পড়ার কথা এসেছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে তা পড়তেন। (সুনানে নাসায়ি ১/২৯)
দুই সিজদার মাঝের দোয়ার ফজিলত
দুই সিজদার মাঝের দোয়া পড়ার ফজিলত অনেক। যদিও দুই সিজদার মাঝের দোয়া পড়া মুস্তাহাব তারপরেও এই দোয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি। এই ছোট দোয়া পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে অনেক কিছু চাওয়া হয়ে থাকে।
এই দোয়ার অর্থ জানলেই বুঝতে পারি এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে কি কি চাওয়া হয়েছে। এই দোয়ার মাধ্যমে বলা হয়- মাফ করুন ,রহম করুন ,হেদায়েত দান করুন ,রিজিক দান করুন।
প্রতিদিন আমরা জানা অজানায় অনেক গুনাহ করে থাকি। কিন্তু এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা এই ছোট দোয়াটি কবুল করলে নিশ্চয় আমাদের অনেক সওয়াব হবে। এই দোয়া পড়ার অছিলায় আমাদের রিজিক বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা হেদায়েতের পথে আসতে পারব। তাছাড়াও বলা হয়েছে কুরআন শরীফের একটি হরফ পাঠ করলে ১০টি নেকী পাওয়া যায়। এই দোয়ার মাধ্যমে আমাদের নেকীর পাল্লা ভারী হবে।
![দুই সিজদার মাঝের দোয়ার ফজিলত](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/03/sij5.jpeg)
ইসলামে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তেন, রুকু থেকে ওঠার সময় ইমাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বলবে তখন মুক্তাদির জন্য رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলা উত্তম। এরপর সম্ভব হলে حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ দোয়াটিও পড়া উত্তম। কেননা, হাদিস শরিফে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইমাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বলবে তোমরা তখন رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বল।
নামাজে দুই সিজদা কেন? Why there are two Sijda in Namaz?
নামাজের রাকাআতের সংখ্যার উপর নির্ভর করে মুসলমানরা প্রতিটি নামাজে বেশ কয়েকবার সুজুদ করে: প্রতি রাকাতে দুটি সাজাদত করা হয়, এবং নামাজ দুই থেকে চার রাকাতের মধ্যে বাধ্যতামূলক দৈর্ঘ্যে পরিবর্তিত হয়। সুন্নত বা নওয়াফিল সালাতে আপনি সুজুদে যেকোনো ভাষায় যেকোনো দুআ পাঠ করতে পারেন। আপনি আপনার কষ্টগুলো আল্লাহর কাছে তুলে ধরতে পারেন এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে পারেন।
সুজুদে দোয়া
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সেজদায় বলতেন:
আল্লাহুম্মা’গফির লি ধনবী কুল্লাহু, দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু, ওয়া আওলাহু ওয়া আখিরাহু ওয়া ‘আলানিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু।
“হে আল্লাহ, আমার ছোট-বড়, প্রথম ও শেষ, প্রকাশ্য ও গোপন সব গুনাহ মাফ করে দাও।” (মুসলিম)।
দুই সিজদার মাঝের দোয়া না পড়লে কি নামাজ হবে? If the Dua between two Sijda is not read, what will be the prayer?
দুই সিজদার মাঝখানে জলসা বা বৈঠকে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া মুসতাহাব। না পড়লে নামাজের কোনো ক্ষতি হয় না।
শেষ কথা, Conclusion
গোটা নামাজই আল্লাহর প্রশংসা। তাই নামাজের প্রত্যেক রুকনে দোয়া, তাসবিহ, তাহলিলের মধ্যে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চায়। বিভিন্ন দোয়া ও জিকির কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত। তেমনি দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকেও রয়েছে আল্লাহ তাসবিহ এবং দোয়া, যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনারা দুই সিজদার মাঝের দোয়া সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন। আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা, প্রত্যেক নামাজে সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে আল্লাহর তাসবিহ-তাহলিল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর হুকুম আহকাম পালন করার তাওফিক দান করুন।