মুসলমান ধর্মে দিনের প্রথম নামাজ হলো ফজরের নামাজ। মুসলিমদের অবশ্য পালনীয় দৈনন্দিন পাঁচ সময় নামাযের অন্যতম হল ফজরের নামাজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সমূহ ভিন্ন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ফজরের নামাজ আদায় করা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ফজরের নামাজের সময় এবং নিয়ম সম্পর্কে উল্লেখ করবো, যাতে যারা এ বিষয়ে অজ্ঞাত তারাও জেনে নিতে পারেন।
ফজরের নামাজের সময়সীমা কত? What is the duration of Fajr prayer?
ফজরের নামাজের সময় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত। ফজর নামাজের সময় শুরু হয় যখন রাতের শেষে আকাশের পূর্ব দিগন্তে লম্বা আকৃতির যে আলোর রেখা দেখা যায়, তাকেই বলে সুবহে সাদিক। ঠিক সূর্যোদয়ের সময় নামাজ নিষিদ্ধ।
ফজরের নামাজ কয় রাকাত, How many rakats is the Fajr prayer?
ফজরের নামাজের মোট রাকাত সংখ্যা হল ৪। রাকাত নামাজের মধ্যে ফরজ নামাজ হিসাবে নামাজের ২ রাকাত আদায় করতে হয় এবং সুন্নত নামাজের ২ রাকাত আদায় করতে হয়। ফজরের নামাজের মধ্যে ফরজ নামাজের সংখ্যা হল দুই রাকাত এবং সুন্নত নামাজের সংখ্যা হল দুই রাকাত। বাধ্যতামূলকভাবে, নামাজ আদাকারীকে ফরজ নামাজের ২ রাকাত আদায় করতে হবে। অর্থাৎ আর কোন কিছু করেন কিংবা না করেন ফজরের নামাজ আদায় করার সময়, ফরজ নামাজ হিসাবে দুই রাকাত সালাত অবশ্যই আদা করতে হবে।
এছাড়াও কখনো কোনোভাবেই সুন্নত নামাজ হিসেবে বরাদ্দ রাখা দুই রাকাত অবহেলা করে ছেড়ে দিতে পারবেন না। এর কারণ হল, আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পারবেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, ‘ফজরের নামাজের সুন্নাতয়ের দুই রাকাত নামাজ রয়েছে, সেই দুই রাকাত নামাজ হচ্ছে দুনিয়া এবং আখেরাতের মধ্যে সমস্ত কিছুর চেয়ে উত্তম।’ তাই আপনি এই পরিপূর্ণ দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কাজের অধিকারী যদি হতে চান, তবে ফজরের নামাজের ২ রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে, সেই দুটো আদায় করে নিতে হবে।
ফজরের নামাজ সম্পর্কে হাদীস, Fajr er Namaz somporke hadish
ফজরের নামাজ সম্পর্কে হাদীস হল :
- হাদিস নং: ১২৫৮ তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দেবে না। যদিও শত্রুবাহিনী তোমাদেরকে তাড়া দেয়।’
- হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’
- আরেক হাদিসে আছে যে, নবী (সা.) ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামাজে এত গুরুত্ব দিতেন যে, অন্য কোনো নফল (বা সুন্নত) নামাজে ততটুকু দিতেন না।
ফজরের নামাজের সময় যখন নামাজ আদায় করা হবে তখন নামাজ আদায় করার পূর্বে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে নিতে হবে। তবে কোনো কারণে যদি ফরজ নামাজ না করতে পারেন, তাহলে ফরজ নামাজের পরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ অবশ্যই আদায় করে নিতে হবে।
ফজরের নামাজের সময় নামাজ পড়ার নিয়ম, Rules for praying during Fajr Namaz
ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিতে চাইলে নিম্নে উল্লেখ করা নামাজ পড়ার নিয়ম দেখে নিন :
নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে প্রথমত সুন্নত দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তারপরে ফরজ দুই রাকাত নামাজ আদায় করে নিতে হবে।
ফরজ নামাজ ও সুন্নত নামাজ আদায় করার নিয়মে ভিন্নতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সুন্নত নামাজ পড়ার যে নিয়ম রয়েছে সেই অনুযায়ী নামাজ পড়ে নিবেন এবং ফরজ নামাজের নিয়ম অনুযায়ী ফরজ নামাজ পড়বেন। দুটি নিয়মের ভিন্নতা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ভুল যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
নামাজের ফরজ, Namaz er Faraj
নামাজের ফরজ মোট ১৩টি। আহকাম ৭ টি এবং আরকান ৬ টি। নামাজের বাহিরের কাজগুলিকে বলে আহকাম, অন্যদিকে নামাজের ভিতরের কাজগুলোকে আরকান বলে।
আহকামগুলো হল :
- শরীর পবিত্র হওয়া।
- কাপড় বা বস্ত্র পবিত্র হওয়া।
- নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া।
- সতর ঢেকে রাখা।
- কিবলামুখী হওয়া।
- ওয়াক্তমত নামাজ আদায় করা
- নামাজের নিয়ত করা।
আরকানগুলো হল :
- তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা।
- দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া।
- সুরা ফাতিহার সাথে কুরআন পড়া।
- রুকু করা।
- দু্ই সিজদা করা।
- শেষ বৈঠক করা।
নামাজ পড়ার নির্দেশ, Order to pray
আল্লাহর রাসূল বলেছেনঃ “ তোমাদের শিশুদেরকে সাত বছর বয়সে (ফরজ) নামাজের নির্দেশ দাও, আর দশ বছর বয়স থেকে তাদের প্রহার কর যদি তারা তা না করে, আর তাদেরকে নিজ নিজ বিছানায় আলাদা করে দাও।”
আল্লাহর রসূল বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রথম তাকবীর ধরে চল্লিশ দিন পর্যন্ত আল্লাহর জন্য জামাতে (৫ ওয়াক্ত ফরজ) নামায আদায় করে, তার জন্য দু’টি নাজাত লেখা হয়ঃ জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং মুনাফেকী থেকে মুক্তি।”
যথাযথভাবে নামাজ না পড়ার শাস্তি, Punishment for not praying properly
যারা মোটেও নামাজ পড়েন না বা পড়ে থাকলেও পড়ার সময় অবহেলা ও অলসতা করেন, নামাজ পড়তে দেরি করেন, লোক দেখানো নামাজ পড়ে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
- ‘ দুর্ভোগ (ওয়াইল নামক জাহান্নামের কঠিন শাস্তি) সেসব নামাজ আদায়কারীদের জন্য যারা তাদের নামায সম্পর্কে উদাসীন। যারা তা লোকদের দেখানোর জন্য আদায় করে। ’
- জীবিত থাকতে দুনিয়ায় যারা যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে, পরকালে তারা আল্লাহর নির্দেশে সেজদায় লুটিয়ে পড়বে, আর যারা যথাযথভাবে নামাজ পড়বে না, লোক দেখানো কিংবা সুনাম লাভের আশায় নামাজ পড়বে, তারা পরকালে সেজদা করতে পারবে না; বরং তারা হবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত। আল্লাহ তাআলা বলেন-
- ‘ স্মরণ কর সেই চরম সংকটময় কিয়ামত দিবসের কথা যেই দিন তাদেরকে আহবান করা হবে সেজদা করার জন্য কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবেনা। তাদের দৃষ্টি অবনত হবে, হীনতা তাদের আচ্ছন্ন করবে অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল, তখন তো তাদের সেজদা করার আহ্বান করা হতো (কিন্তু তারা সেজদা করেনি)।’
নামাজ পরিত্যাগকারীদের হুকুম, Command of those who abandon Namaz
আল্লাহ নামাজ আদায় করতে আদেশ করেছেন জেনেও, যে ব্যক্তি নামাজকে অবহেলা করে নামাজ পরিত্যাগ করে, এর ফরজ অস্বীকার করে, তাকে উম্মতের ঐক্যমতের দ্বারা সে মুরতাদ এবং কাফের। যদি কেউ নামাজ আদায় তথা এর অস্তিত্ব সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে এটি ত্যাগ করে, যে ইসলামে নতুন, তাকে কাফের বলে বিবেচনা করা হয় না, তবে তাকে নামাজ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয় এবং আদেশ করা হয় নামাজ আদা করার জন্য।
- হানাফি : তাকে বন্দী করা হয় যতক্ষণ না সে প্রার্থনা করে, এবং তাকে মারধর করা হয় যতক্ষণ না তার থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়।
- মালেকি : বারংবার নামার ত্যাগ করার জন্য কুফরির শাস্তি হিসেবে তাকে হত্যা করা হবে।
- শাফিয়ি : বারংবার নামার ত্যাগ করার জন্য কুফরির শাস্তি হিসেবে তাকে হত্যা করা হবে।
- হাম্বলি : নামাজ পরিত্যাগকারীদের সাধারণতঃ তাকফির করা হয়না। তাকফির করার জন্য অন্যান্য আরও শর্ত প্রয়োগ করা হয়।
শেষ কথা, Conclusion
মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের দৈনিক কার্যকলাপের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল নামাজ আদায় করা। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে মুসলিমরা যেখানেই থাকুক না কেনো, নামাজের সময় সব কাজ ফেলে প্রথমে নামাজ আদা করে। উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে ফজরের নামাজের সঠিক সময় সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করি, সে সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন।