সিয়াম বা রোজার ফজিলত, Fazilat of Siyam, Details in Bengali

সিয়াম বা রোজার ফজিলত

সিয়াম হলো ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়। ইসলাম ধর্মে সিয়ামের গুরুত্ব অনেক। ইসলামের বিশ্বাস অনুযায়ী, আল্লাহ স্বয়ং নিজে সিয়ামের প্রতিদান দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন ‘‘মানুষের প্রতিটি ভাল কাজ নিজের জন্য হয়ে থাকে, কিন্তু সিয়াম শুধুমাত্র আমার জন্য, অতএব আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।” আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা সিয়াম পালন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবো।

সিয়াম মানে কি? What does Siyam mean?

সিয়াম মানে কি?

কুরআনীয় ইসলামী আরবিতে ইসলামী উপবাসের নাম সাওম, বহুবচনে সিয়াম, যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে সংযম বা আত্মনিয়ন্ত্রণ বা বিরত থাকা। সিয়াম শব্দের শব্দমূল সওম, যার অর্থ বিরত থাকা। দৃঢ়সংকল্প করে যাবতীয় কামাচার, পানাহার ও পাপাচার থেকে সুবিহে সাদিক থেকে সর্যাস্ত পর্যন্ত বিরত থাকটাই হচ্ছে সিয়াম। এই সিয়ামকে ফারসিতে বলা হয় রোজা। আত্মশুদ্ধি, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি গুণ অর্জনের প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণ লাভ হয় রমজানে সিয়াম পালনের মাধ্যমে।

রমযানের সিয়াম ফরজ ,Siyam in Ramadan is obligatory: :

মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَیْكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَی الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَﰆﺫ اَیَّامًا مَّعْدُوْدٰتٍﺚ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِیْضًا اَوْ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَیَّامٍ اُخَرَﺚ وَعَلَی الَّذِیْنَ یُطِیْقُوْنَهٗ فِدْیَةٌ طَعَامُ مِسْكِیْنٍﺚ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَیْرًا فَھُوَ خَیْرٌ لَّهٗﺚ وَاَنْ تَصُوْمُوْا خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَﰇ شَھْرُ رَمَضَانَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ فِیْهِ الْقُرْاٰنُ ھُدًی لِّلنَّاسِ وَبَیِّنٰتٍ مِّنَ الْھُدٰی وَالْفُرْقَانِﺆ فَمَنْ شَھِدَ مِنْكُمُ الشَّھْرَ فَلْیَصُمْهُﺚ وَمَنْ كَانَ مَرِیْضًا اَوْ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَیَّامٍ اُخَرَﺚ

অর্থাৎ,

হে বিশ্বাসিগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের (সিয়ামের) বিধান দেওয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সংযমশীল হতে পার। (সিয়াম) নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফর অবস্থায় থাকলে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে।
আর যারা সিয়াম রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সিয়াম রাখতে চায় না (যারা সিয়াম রাখতে অক্ষম) তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। পরন্তু যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তোমরা সিয়াম রাখ, তাহলে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণপ্রসূ; যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার।
রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে অবশ্যই সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ অথবা মুসাফির থাকে, তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। (সূরা বাক্বারাহ-০২:১৮৩- ১৮৫)

সিয়াম কত প্রকার ও কী কী? What are the types of Siam?

চার প্রকার। যথা ১. ফরজ, ২. নফল, ৩. মাকরূহ ৪. হারাম।

প্রথমত : ফরয সিয়াম

  • রমযান মাসের সিয়াম
  • কাযা সিয়াম
  • কাফফারার সিয়াম
  • মান্নত সিয়াম

দ্বিতীয়ত : নফল সিয়াম

  • শাওয়াল মাসের ছয়টি সিয়াম
  • যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকের সিয়াম
  • আরাফাতের দিনের সিয়াম
  • মুহাররম মাসের সিয়াম
  • আশুরার সিয়াম
  • প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩. ১৪, ১৫- এ তিন দিনের সিয়াম
  • সাপ্তাহিক সোম ও বৃহস্পতিবারের সিয়াম
  • শাবান মাসের সিয়াম
  • দাঊদ (আঃ)’র সিয়াম
  • বিবাহে অসামর্থ ব্যক্তিদের সিয়াম।
সিয়াম

তৃতীয়ত : মাকরূহ সিয়াম

  • হাজ্জ পালনরত অবস্থায় আরাফাতের দিনের সিয়াম
  • বিরতীহীনভাবে সিয়াম পালন
  • পানাহার বিহীন সিয়াম
  • কেবলমাত্র জুমুআর দিনের সিয়াম
  • শুধুমাত্র শনিবারে সিয়াম

চতুর্থত : হারাম সিয়াম

  • দু’ ঈদের দিন এবং কুরবানীর ঈদের পরবর্তী ৩ দিন
  • সন্দেহ পূর্ণ দিনের (৩০শে শাবান) সিয়াম
  • (গ) স্বামীর বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর নফল সিয়াম
  • মহিলাদের হায়েয নিফাসকালীন সময়ের সিয়াম
  • গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সিয়াম।

সিয়ামের ফজিলত, Fazilat of Siyam :

  • আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ আযযা অজাল্ল বলেন, আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার নিজের জন্য; তবে সিয়াম নয়, যেহেতু তা আমারই জন্য এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব।
    সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং তোমাদের কারো সিয়ামের দিন হলে সে যেন অশ্লীল না বকে ও ঝগড়া-হৈচৈ না করে; পরন্তু যদি তাকে কেউ গালাগালি করে অথবা তার সাথে লড়তে চায় তবে সে যেন বলে, আমি সিয়াম রেখেছি, আমার সিয়াম আছে। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে! নিশ্চয়ই রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট কস্তুরীর সুবাস অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধময়।
    রোযাদারের জন্য রয়েছে দু’টি খুশী, যা সে লাভ করে; যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারী নিয়ে খুশী হয়। আর যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তার সিয়াম নিয়ে খুশী হবে। (বুখারী ১৯০৪, মুসলিম ২৭৬২)
সিয়ামের ফজিলত
  •  সাহল বিন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতের এক প্রবেশদ্বার রয়েছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন ঐ দ্বার দিয়ে সিয়াম পালনকারী গণ প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউই ঐ দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে না।
    সিয়াম পালনকারী গণ প্রবিষ্ট হয়ে গেলে দ্বার রুদ্ধ করা হবে। ফলে সে দ্বার দিয়ে আর কেউই প্রবেশ করবে না। (বুখারী ১৮৯৬ , মুসলিম ২৭৬৬, নাসাঈ, তিরমিযী)
  • আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি ওকে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং ওর ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। আর কুরআন বলবে, আমি ওকে রাত্রে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং ওর ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতএব ওদের উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে। (আহমাদ ৬৬২৬, হাকেম ২০৩৬, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৯৯৪, ইবনে আবিদ্দুনয়্যার ‘কিতাবুল জু’, সহীহ তারগীব ৯৮৪, ১৪২৯)
  • হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে হেলান দিয়ে ছিলেন। সেই সময় তিনি বললেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
    আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে একদিন সিয়াম রাখার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের আশায় কিছু সাদকাহ করার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সেও জান্নাত প্রবেশ করবে। (আহমাদ, সহীহ তারগীব ৯৮৫)
  • আবু উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে কোন আমলের আদেশ করুন। তিনি বললেন, সিয়াম রাখ, কারণ এর কোন তুলনাই নেই। পুনরায় আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে কোন আমলের আদেশ করুন।
    তিনিও পুনঃ ঐ কথাই বললেন, তুমি সিয়াম রাখ, কারণ এর কোন তুলনাই নেই। (নাসাঈ ২২২৩, ইবনে খুযাইমাহ ১৮৯৩, হাকেম ১৫৩৩, সহীহ তারগীব ৯৮৬)
  • আবু সাঈদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে বান্দা আল্লাহর রাস্তায় একদিন মাত্র সিয়াম রাখবে সেই বান্দাকে আল্লাহ ঐ সিয়ামের বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে ৭০ বছরের পথ পরিমাণ দূরত্বে রাখবেন। (বুখারী ২৮৪০, মুসলিম ১১৫৩)
  • আমর বিন আবাসাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন মাত্র সিয়াম রাখবে, সেই ব্যক্তি থেকে জাহান্নাম ১০০ বছরের পথ পরিমাণ দূরে সরে যাবে। (ত্বাবারানীর কাবীর ও আওসাত্ব ৩২৪৯, সহীহ তারগীব ৯৮৮)
রমযানের সিয়াম ফরজ

শেষ কথা, Conclusion :

রমজানের প্রধান আমল হলো- সিয়াম পালন বা রোজা রাখা। ঈমান, সালাত ও জাকাতের পরই সিয়ামের স্থান। রমজানের চাঁদ উদিত হলে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ, মুকিম পুরুষ এবং হায়েজ ও নেফাসমুক্ত নারীর ওপর পূর্ণ রমজান রোজা রাখা ফরজ। আশা করি আমাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনারা সিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts