মুনাফিক মূলত একটি ইসলামি পরিভাষা যার অর্থ একজন প্রতারক বা “ভন্ড ধার্মিক” ব্যক্তি। মুনাফিক তাদের বলা হয় যারা প্রকাশ্যে ইসলাম চর্চা করে; কিন্তু গোপনে অন্তরে তারা কুফরী বা ইসলামের প্রতি অবিশ্বাস লালন করে। এ ধরনের প্রতারণাকে ইসলামের ভাষায় বলা হয় নিফাক। মুনাফেকি চিরস্থায়ী জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার মতো মারাত্মক অপরাধ। সহজ কিছু অভ্যাসেই ফুটে ওঠে মুনাফিকের পরিচয়। কোরআনের বর্ণনায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা মুনাফেকির বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে।
কুরআনে মুনাফিকদের নিয়ে আলোচনা, Discussion about Munafiq in the Quran
মুনাফিকদের বিষয়ে কুরআনের শতাধিক আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন অনুসারে মুসলমানদের জন্য তাদের অমুসলিম শত্রুদের তুলনায় মুনাফিকরা অধিক বিপজ্জনক শত্রু। কুরআনে মুনাফিকদের নামে একটি সূরাও রয়েছে।
হাদীসে মুনাফিকদের বর্ণনা, Description of munafiq in the Hadith
- ইসলামী নবী মুহাম্মদ বলেছেন :”চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হবে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোনো একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়। সেগুলো হলো: ১. সম্পদ গচ্ছিত রাখা হলে তা হনন করে; ২. কথা বললে মিথ্যা বলে; ৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং ৪. বিবাদে লিপ্ত হলে বিস্ফোরিত হয় (فَجَرَ, ফাজারা)/অশ্লীল গালি দেয়/সত্য থেকে বিচ্যুত হয়/অত্যন্ত অবিবেচক, অযৌক্তিক, মূর্খ, মন্দ এবং অপমানজনকভাবে আচরণ করে।”
- আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ’আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’মুনাফিকের চিহ্ন হল তিনটি (১) কথা বললে মিথ্যা বলে। (২) ওয়াদা করলে তা খেলাপ করে। এবং (৩) আমানত রাখা হলে তাতে খিয়ানত করে।’’ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ’’যদিও সে রোযা রাখে এবং নামায পড়ে ও ধারণা করে যে, সে মুসলিম।’’ — সহীহুল বুখারী ৩৩, ২৬৮২, ২৭৪৯, ৩১৭৮, মুসলিম ৫৮, তিরমিযী ২৬৩২, নাসায়ী ৫০২০, আবূ দাউদ ৪৬৮৮, আহমাদ ৬৭২৯, ৬৮২৫, ৬৮৪০।
- আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ হায়া (লজ্জাশীলতা) এবং রুদ্ধবাক হওয়া (কম কথা বলা) ঈমানের দু’টি শাখা। অশ্লীলতা (লজ্জাহীনতা) ও বাক্যবাগিশ হওয়া (বেশি কথা বলা) মুনাফেকীর দু’টি শাখা। — ঈমান ইবনু আবী শাইবা ১১৮, মিশকাত, তাহকীক ছানী ৪৭৯৬, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২০২৭।
- ক্বুররাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় লজ্জাশীলতা, যৌন-পবিত্রতা, মুখচোরামি ও দ্বীনী জ্ঞান ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। এগুলি পরকালের সম্বল বৃদ্ধি করবে এবং ইহকালের সম্বল হ্রাস করবে। পক্ষান্তরে কার্পণ্য, অশ্লীলতা ও নোংরা ভাষা মুনাফিকীর অন্তর্ভুক্ত। এগুলি পরকালের সম্বল হ্রাস করে এবং ইহকালের সম্বল বৃদ্ধি করে। আর পরকালের যা হ্রাস পায়, তা ইহকালের যা বৃদ্ধি করে তা অপেক্ষা অধিক।”— হাদীস সম্ভার ৯৯০, ত্বাবারানী ১৫৪০৭, সিলসিলাহ সহীহাহ ৩৩৮১।
- আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “মু’মিনের উদাহরণ হল ক্ষেতের শস্যের মতো যাকে বাতাস সর্বদা আন্দোলিত করতে থাকে। মু’মিন সদাসর্বদাই বিপদগ্রস্ত হতে থাকবে। মুনাফিক হল বট গাছের মতো যা বাতাসে না হেললেও (ঝড়ে) সমূলে উৎপাটিত হয়।” — সহীহঃ তাখরাজুল ঈমান ইবনু আবী শাইবা (৮৬), সহীহাহ (২৮৮৩), বুখারী ও মুসলিম।
- রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুনাফিক (কপট)দের উপর ফজর ও এশার নামায অপেক্ষা অধিক ভারী নামায আর নেই। যদি তারা এর ফযীলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত।” — সহীহুল বুখারী ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১, তিরমিযী ২১৭, নাসায়ী ৮৪৮, দাউদ, ৭২৬০, ৭৮৫৬, ২৭৩৬৬, ২৭৪৭৫, মুওয়াত্তা মালিক ২৯৯, দারেমী ১২১২, ১২৭৪।
- বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মু’মিন ছাড়া আনসারদেরকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ তাঁদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে না।” — বুখারী ৩৭৮৩,(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫০৯) মুসলিম ১/৩৩, হাঃ নং ৭৫, আহমাদ ১৮৬০০।
- আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, “ ঐ মু’মিন যে কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী ‘আমল করে, তাঁর দৃষ্টান্ত ঐ লেবুর মত যা খেতে সুস্বাদু এবং গন্ধে চমৎকার। আর ঐ মু’মিন যে কুরআন পাঠ করে না; কিন্তু এর অনুসারে ‘আমল করে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ খেজুরের মত যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু সুগন্ধ নেই। আর মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে; তার উদাহরণ হচ্ছে, ঐ রায়হানের মত, যার মন মাতানো খুশবু আছে, অথচ খেতে একেবারে বিস্বাদ। আর ঐ মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতে বিস্বাদ এবং গন্ধে দুর্গন্ধময়।” — [৫০২০] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯০ তাওহীদঃ ৫০৫৯)
- আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা এবং ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, “ সে মহান সত্তার শপথ, যিনি বীজ থেকে অংকুরোদ্গম করেন এবং জীবকুল সৃষ্টি করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মুমিন ব্যক্তিই আমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিক ব্যক্তি আমার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে।” — মুসলিম, ১৪৩।
- সাহল ইবনু মু‘আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোনো মু‘মিনকে মুনাফিক থেকে রক্ষা করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার শরীর জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য একজন ফিরিশতা প্রেরণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের সেতুর উপর প্রতিরোধ ব্যবস্থা করবেন যতক্ষণ না তার কৃত কর্মের ক্ষতিপূরণ হয়। “ — আবু দাউদ, ৪৮৮৩
- আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয় তখন দুইজন কৃষ্ণবর্ণের ও নীল চক্ষু বিশিষ্ট ফিরিশতা তার কাছে আসেন, একজনকে বলা হয় ‘‘আল-মুনকার’’ আর অপরজনকে বলা হয় ‘‘আন-নাকীর’’। তাঁরা বলেন, এই ব্যক্তি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কি বলতে? সে তখন (দুনিয়াতে) তাঁকে যা বলত ত-ই বলবে যে, ইনি হলেন আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূলঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি কোন ইলাহ নেই আল্লাহ্ ছাড়া, আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল।
- তার পর তাঁরা বলবেন আমরা জানতাম যে তুমি এই কথা বলবে। এরপর তার কবর সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেওয়া হবে এবং তার জন্যে এটি আলোকিত করে দেওয়া হবে। এরপর তাকে বলা হবে। তুমি ঘুমিয়ে পড়। ঐ ব্যক্তি বলবে, আমি আমার পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে যেতে চাই যাতে এই খবরটি তাদের দিতে পারি। তখন ফিরিশতা দুইজন বলবেন, নয়া দুলহার মত তুমি ঘুমিয়ে থাক, যাকে তার পরিবারের সবচাইতে প্রিয় ব্যক্তি ছাড়া জাগায় না। অবশেষে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে তার এই শয্যা থেকে উত্থিত করবেন, আর মৃত ব্যক্তি যদি মুনাফিক হয় তবে সে (ফিরিশতাদের প্রশ্নের উত্তরে) বলবে, আমি তো জানিনা, তবে লোকদের যা বলতে শুনেছি আমিও তাই বলেছি।
- ফিরিশতারা বলবে, আমরা জানতাম তুমি এই ধরণেরই কথা বলবে। এরপর যমীনকে বলা হবে একে চাপ দাও। তখন যমীন তাকে চাপ দিবে। ফলে তার পিঞ্জরাস্থিসমূহ একটার ভিতর অন্যটা ঢুকে পড়বে। এভাবে সে আযাব ভোগ করতে থাকবে, অবশেষে তাকে আল্লাহ্ ত’আলা তার এ শয্যা থেকে উত্থিত করবেন।” — মিশকাত ১৩০, সহিহাহ ১৩৯১, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১০৭১
- ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুনাফিকের উদাহরণ যেমন দুই ছাগপালের মাঝে যাতায়াতকারী বিপথগামী ছাগ, যা এ পালে একবার আসে আবার ও পালে একবার যায়। স্থির করতে পারে না যে সে কোন পালের অনুসরণ করবে।” — (মুসলিম ৭২২০, আহমাদ ৫৭৯০, নাসাঈ ৫০৩৭)
- আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেলো যে, সে জিহাদ করেনি এবং মনে জিহাদের আকাঙ্ক্ষাও রাখেনি, তবে সে মুনাফিক্বী অবস্থায় মারা গেলো।” — আবু দাউদ ২৫০২।
- আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “বিবাহ বন্ধন হতে (বিনা কারণে) বিচ্ছিন্নকারিণীগণ (অর্থাৎ- ধন-সম্পদের বিনিময়ে খুলা’ তালাক প্রার্থনাকারিণীগণ) মুনাফিক রমণী।”— মিশকাত ৩২৯০, নাসায়ী ৩৪৬১, তিরমিযী ১১৮৬, ইরওয়া ৬৩২, সহীহ আল জামি‘ ৬৬৮১। সহীহ : নাসায়ী ৩৪৬১, তিরমিযী ১১৮৬, ইরওয়া ৬৩২, সহীহ আল জামি‘ ৬৬৮১
- আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “দু’মুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি (অর্থাৎ মুনাফিক) নিকৃষ্টতম, যে এক পক্ষের লোকের সাথে এক মুখে এবং অপর পক্ষের লোকের সাথে অন্য মুখে কথা বলে।” — আবু দাউদ ৪৭৯৬
- আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (রহঃ) ….. আম্মার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “দুনিয়াতে যে ব্যক্তি দু’মুখ বিশিষ্ট (মুনাফিক) হবে, কিয়ামতের দিন তার আগুনের দু’টি মুখ হবে।” — আবু দাউদ ৪৭৯৭
মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য, Characteristics of the Munafiq
সালিহ আল মুনাজ্জিদ নিজের লেখা ‘নিফাক’ বইয়ে কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত মুনাফিকদের স্বভাব-চরিত্রের বর্ননা দিয়েছেন। সেই স্বভাব চরিত্রগুলো হল :
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুনাফিকদের ব্যাধিগ্রস্ত মন থাকে।
- খেয়াল-খুশির প্রলোভন এবং বিভিন্ন বিষয়ে অহংকার প্রদর্শন।
- আল্লাহর আয়াত সমূহের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার স্বভাব।
- মুমিনদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার বৈশিষ্ট্য।
- আল্লাহর পথের পথিকদের জন্য মানুষকে ব্যয় করতে বাধা দান করা।
- মুমিনদের মূর্খ আখ্যা দিয়ে কাফেরদের সাথে সর্বদা সম্প্রীতি বজায় রাখা।
- আল্লাহর ইবাদতে অলসতা করা।
- বিভিন্ন বিষয়ে দোটানা ও দোদুল্যমান মনোভাব রাখা
- আল্লাহদ্রোহী মানুষের পক্ষপাতিত্ব।
- মুমিনদের মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি করা।
- মিথ্যা শপথ নেওয়া, মনে ভয়-ভীতি রাখা, স্বভাবগত দিক থেকে এদের মধ্যে কাপুরুষতা ও অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়।
- সৎকর্মকে দূষণীয় গণ্য করে
- অন্যায়ের আদেশ ও ন্যায়ের বিরোধিতা।
- জিহাদকে অপছন্দ করা ।
- ভীতিকর গুজব ছড়ানো।
- মুমিনদের সাথে চলাফেরায় গড়িমসি করা।
- মুমিনদের ক্ষয়ক্ষতি দেখলে তা নিয়ে উল্লসিত হওয়া।
- আমানতের খেয়ানত করা, মুমিনদের সাথে কথোপকথনকালে মিথ্যা বলা, কোনো বিষয় নিয়ে অঙ্গীকার করেও তা ভঙ্গ করা এবং বাকবিতণ্ডাকালে বাজে তথা অসভ্য কথা বলা।
- নামাজে সালাতকে যথাসময় থেকে বিলম্বিত করা এবং জামা’আতে শরীক না হওয়া।
- কুরুচিপূর্ণ বচন ও বাচালতা প্রদর্শন।
ইসলামে নিফাকের প্রতিকারের উপদেশ, Advice of getting rid of Nifaq in Islam
মুনাফিকদের সাথে মুসলিমদের করনীয় বিষয়গুলো কি কি তা সকল মুসলমানদেরই জেনে রাখা উচিত।
সালিহ আল মুনাজ্জিদ কুরআন ও সহিহ হাদীস অনুযায়ী মুনাফিকদের সাথে মুসলিমদেরকে যেসব আচরণ করতে বলেছেন, সেগুলি হল :
- মুসলমানরা কখনোই যেন মুনাফিকদের আনুগত্য না করে।
- মুনাফিকদেরকে সর্বদা উপেক্ষা করে চলা, তাদের ভীতি প্রদর্শন এবং সৎ হওয়ার উপদেশ দান।
- মুনাফিকদের সঙ্গে কোনোভাবেই বিতর্কে না জড়ানো। ভুল করেও তাদের পক্ষাবলম্বন না করা।
- মুসলমানদেরকে মুনাফিকদের সাথে কখনো বন্ধুত্ব গড়ে না তোলার উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
- মুনাফিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে জিহাদ চালনা এবং কঠোরতা আরোপ করা।
- মুনাফিকদের প্রতি সর্বদা অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং তাদের কখনো নেতা না বানানো।
- মুনাফিকদের জানাযার সালাতে যেন মুসলমানরা অংশগ্রহণ না করে।
শেষ কথা, Conclusion
মুনাফিকদের আকিদা-বিশ্বাসে সন্দেহ, অস্বীকৃতি ও মিথ্যা থাকার কারণে তাদের কলবকে অসুস্থ কলব বলা হয়। মানুষের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফেকি তথা দ্বিচারিতা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মুনাফিকির চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত থেকে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।