আল্লাহর পরিচয়, Identity of Allah

আল্লাহ

ইসলামি ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, আল্লাহ হলেন একমাত্র প্রশংসাযোগ্য ও সর্বশক্তিমান সত্তা। তিনি মহাবিশ্বের স্রষ্টা। আল্লাহকে পাওয়ার জন্য মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। ইবাদতের মধ্যে রয়েছে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত। এছাড়াও, মানুষের প্রতি দয়া করলে আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়া যায়। আজকের এই প্রতিবেদনে আমার আল্লাহ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আল্লাহ শব্দের অর্থ কি? What is the meaning of the word Allah?

আল্লাহ একটি আরবি শব্দ। ‘আল্লাহ’ শব্দটি ‘আল’ ও ‘ইলাহ’ (الإله) এর সংক্ষিপ্ত রূপের সমন্বয়ে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। এটি ইব্রাহিমীয় ধর্মসমূহে সৃষ্টিকর্তা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। বাংলা ভাষায়, শব্দটি সাধারণত ইসলাম ধর্মে স্রষ্টাকে বুঝায়।

আল্লাহ কেমন ? How is Allah?

আল্লাহর পরিচয়

আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ্, যিনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান জগতের সব ব্যাপারে যিনি সম্যক অবগত। তিনি সবচাইতে দয়ালু, সবচাইতে ক্ষমাশীল। তিনিই আল্লাহ্, যিনি সবকিছুর অধিপতি, পুতঃপবিত্র, সবকিছুর ঊর্ধ্বে, নিরাপত্তা প্রদানকারী, অভিভাবক, সর্বশক্তিমান, সমু”চ, গৌরবান্বিত, সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, তারা তাঁর সাথে যা কিছু শরিক করে সেগুলা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি আল্লাহ্, যিনি শূন্য থেকে সৃষ্টি শুরু করেছেন, সবকিছু তৈরি করেছেন, আকৃতি দিয়েছেন। সবচাইতে ভালো নামগুলো তাঁর জন্যই প্রযোজ্য। মহাকাশ এবং পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁর মহত্ত্ব বর্ণনা করে, এবং তিনিই সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ।’

আল্লাহ কোথায় থাকেন? Where does God live?

আল্লাহ কোথায় থাকেন, সে সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়:

  • ইব্রাহিমীয় ধর্মমতানুসারে, আল্লাহর সিংহাসন সপ্তম স্বর্গের উপরে অবস্থিত।
  • কুরআনুল কারীম অনুযায়ী, আল্লাহর আরশ ছিল জলের উপর।
  • আল্লাহ তা’আলা নফস, গুণাবলী, এবং কর্মের মধ্যে সৃষ্টির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই, আল্লাহ স্থান ছাড়াই বিদ্যমান।
  • সূরা ত্বহার পঞ্চম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘দয়াময় আরশে সমাসীন’।
  • আল্লাহর সিংহাসন আরশে আজিম সৃষ্টি জগতের সর্বোচ্চ মর্যাদাকর স্থানে অবস্থিত।
  • আরশের নিচে জান্নাত এবং তার নিচে ফেরেশতাদের ইবাদতের জন্য নির্মিত ‘বায়তুল মামুর’ নামক স্থান আছে।

আল্লাহর পরিচয়, Identity of Allah :

আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে কিছু তথ্য হলো:

  • ইসলামের বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহ একমাত্র উপাস্য, সমগ্র মহাবিশ্বের স্রষ্টা, এবং মানবজাতির বিচারক।
  • আল্লাহ এক (ٱلْوَٰحِدُ), অদ্বিতীয় (ٱلْأَحَد), পরম করুণাময় ও সর্বশক্তিমান।
  • আল্লাহ সব সৃষ্টি দেখেন, তাঁর দৃষ্টির অধীন সব সৃষ্টি।
  • যেখানেই মানুষ যায়, আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। তারা যাই করেন, তা আল্লাহ পুরোপুরি দেখেন।
  • আল্লাহকে পাওয়ার জন্য মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। ইবাদতের মধ্যে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
  • মানুষের প্রতি দয়া করার মাধ্যমেও আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়া সম্ভব।
  • আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে তথ্য আল-কুরআন ও আল-হাদিসে পাওয়া যায়।

আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে আয়াত, Verses about the identity of Allah:

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। সেই আয়াতগুলো উল্লেখ করা হলো-

১. কোন কিছুই তার সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা: শুরা, আয়াত: ১১)

২. নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা: নিসা, আয়াত: ৫৮)

৩. আল্লাহ রাত্রিকে প্রবিষ্ট করেন দিবসের মধ্যে এবং দিবসকে প্রবিষ্ট করেন রাত্রির মধ্যে এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা। (সুরা: হজ্জ, আয়াত: ৬১)

৪. হে নবী! তুমি বল, তারা কত কাল ছিল, আল্লাহই তা ভালো জানেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তারই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা (সুরা:কাহফ, আয়াত: ২৬)।

ইবনু জারির (রহ.) বলেন, সমস্ত সৃষ্ট জীবকে আল্লাহ দেখেন ও তাদের সকল কথা শুনেন। তার নিকট কোনো কিছুই গোপন থাকে না।’ (তাফসিরে ত্ববারি)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা বাগাবি (রহ.) বলেন, সমস্ত সৃষ্টি জীব যেখানেই থাকুক না কেন আল্লাহ তাদের দেখেন এবং তাদের সর্বপ্রকার কথা শ্রবণ করেন। তার দেখার ও শোনার বাইরে কোনো কিছুই নেই। (তাফসিরে ত্ববারি)

৬. আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শ্রবণকারী। (সুরা: শু‘আরা, আয়াত: ১৫)

৭. পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন : ‘মানুষ কি মনে করে, তাকে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে? (সূরা কিয়ামা : ৩৬)।

আল্লাহর আকৃতি কেমন? What is the shape of God?

ইমাম আবু সুলায়মান আল খাত্তাবিয়ি বলেন: ‘আমাদের জন্য এবং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য যা জানা ওয়াজিব তা হল আমাদের প্রভুর কোন আকৃতি বা আকৃতি নেই, কারণ আকৃতির একটি “কীভাবে” আছে এবং “কীভাবে” আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য নয়।’

আল্লাহ সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন? What did God create first?

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, আল্লাহ পাক প্রথমে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন:

  • আল্লাহ পাক মাটি দিয়ে আদমকে সৃষ্টি করেছেন।
  • আল্লাহ পাক আদমের কাদামাটির কাঠামোতে রুহ বা আত্মা দান করেছেন।
  • আল্লাহ পাক আদমের জন্য পৃথিবীর উপরি ভাগ থেকে বিভিন্ন রঙের মাটি সংগ্রহ করেছেন।
  • আল্লাহ পাক নিজ হাতে আদম আকৃতি দিয়েছেন এবং তাতে রুহ ফুকায়ে দিয়েছেন।
  • কোরআনে আল্লাহ–তায়ালা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, আদম (আ.)- কেই মানব জাতির মধ্যে প্রথম সৃষ্টি করা হয়েছে।

ইসলাম ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, আল্লাহ হলেন একমাত্র প্রশংসাযোগ্য ও সর্বশক্তিমান সত্তা। আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশসমূহের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রদর্শন ইসলামি ধর্মবিশ্বাসের মূলভিত্তি।

ওলামায়ে কেরামের মতে, আল্লাহ সর্বপ্রথমে জল, আরশ, কলম সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।

কুরআনুল কারীম অনুযায়ী, আল্লাহর আরশ ছিল জলের উপর। এতে সব কিছুর মূলে জলের অস্তিত্বের কথা পাওয়া যায়।

আল্লাহর নাম / আল্লাহ আরবী নাম, Allah’s name :

আল্লাহ

আল্লাহর ৯৯টি নাম অর্থসহ তুলে ধরা হলো :

১. الله (আল্লাহ)। অর্থ : আল্লাহ, প্রভু।
২. الرَّحْمَنُ (আর-রহমান)। অর্থ : সবচাইতে দয়ালু, কল্যাণময়, করুণাময়।
৩. الرَّحِيمُ (আর-রহিম)। অর্থ : সবচাইতে ক্ষমাশীল।
৪. الْمَلِكُ (আল-মালিক)। অর্থ : অধিপতি।
৫. الْقُدُّوسُ (আল-ক্বুদ্দুস)। অর্থ : পূতপবিত্র, নিখুঁত।
৬. السَّلَامُ (আস-সালাম)। অর্থ : শান্তি এবং নিরাপত্তার উৎস, ত্রাণকর্তা।
৭. الْمُؤْمِنُ (আল-মুমিন)। অর্থ : জামিনদার, সত্য ঘোষণাকারী।
৮. الْمُهَيْمِنُ (আল-মুহাইমিন)। অর্থ : অভিভাবক, প্রতিপালক।
৯. الْعَزِيزُ (আল-আযিয)। অর্থ : সর্বশক্তিমান, সবচেয়ে সম্মানিত।
১০. الْجَبَّارُ (আল-জাব্বার)। অর্থ : দুর্নিবার, সমু”চ, মহিমান্বিত।
১১. الْخَالِقُ (আল-খলিক)। অর্থ : সৃষ্টিকর্তা।
১২. الْبَارِئُ (আল-বারি)। অর্থ : বিবর্ধনকারী, নির্মাণকর্তা, পরিকল্পনাকারী।
১৩. الْمُصَوِّرُ (আল-মুসাউয়ির)। অর্থ : আকৃতিদানকারী।
১৪. الْغَفَّارُ (আল-গাফফার)। অর্থ: পুনঃমার্জনাকারী।
১৫. الْقَهَّارُ (আল-কাহ্হার)। অর্থ : দমনকারী।
১৬. الْوَهَّابُ (আল-ওয়াহ্হাব)। অর্থ : ¯’াপনকারী।
১৭. الرَّزَّاقُ (আর-রজ্জাক।। অর্থ : রিজিকদাতা।
১৮. الْفَتَّاحُ (আল-ফাত্তাহ)। অর্থ : প্রারম্ভকারী, বিজয়দানকারী।
১৯. الْعَلِيمُ (আল-আলীম)। অর্থ : সর্বজ্ঞানী, সর্বদর্শী।
২০. الْقَابِضُ (আল-কাবিদ)। অর্থ : নিয়ন্ত্রণকারী, সরলপথ প্রদর্শনকারী।
২১. الْبَاسِطُ (আল-বাসিত)। অর্থ : প্রসারণকারী।
২২. الْخَافِضُ (আল-খাফিদ)। অর্থ : (অবিশ্বাসীদের) অপমানকারী।
২৩. الرَّافِعُ (আর-রাফি)। অর্থ : উন্নীতকারী।
২৪. الْمُعِزُّ (আল-মুয়িজ্জিব)। অর্থ : সম্মানপ্রদানকারী।
২৫. الْمُذِلُّ (আল-মুঝিল্ল)। অর্থ : সম্মানহরণকারী।
২৬. السَّمِيعُ (আস-সামীয়ু)। অর্থ : সর্বশ্রোতা।
২৭. الْبَصِيرُ (আল-বাসির)। অর্থ : সর্বদ্রষ্টা।
২৮. الْحَكَمُ (আল-হাকাম)। অর্থ : বিচারপতি।
২৯. الْعَدْلُ (আল-আদল)। অর্থ : নিখুঁত।
৩০. اللَّطِيفُ (আল-লাতিফ)। অর্থ : অমায়িক।
৩১. الْخَبِيرُ (আল-খবির)। অর্থ : সম্যক অবগত।
৩২. الْحَلِيمُ (আল-হালিম)। অর্থ : ধৈর্যবান, প্রশ্রয়দাতা।
৩৩. الْعَظِيمُ (আল-আযিম)। অর্থ : সুমহান।
৩৪. الْغَفُورُ (আল-গফুর)। অর্থ : মার্জনাকারী।
৩৫. الشَّكُورُ (আশ-শাকুর)। অর্থ : সুবিবেচক।
৩৬. الْعَلِيُّ (আল-আলিই)। অর্থ : মহীয়ান।
৩৭. الْكَبِيرُ (আল-কাবীর)। অর্থ : সুমহান।
৩৮. الْحَفِيظُ (আল-হাফিজ)। অর্থ : সংরক্ষণকারী।
৩৯. الْمُقِيتُ (আল-মুকিত)। অর্থ : লালনপালনকারী।
৪০. الْحَسِيبُ (আল-হাসিব)। অর্থ : মীমাংসাকারী।
৪১. الْجَلِيلُ (আল-জালিল)। অর্থ : গৌরবান্বিত।
৪২. الْكَرِيمُ (আল-কারিম)। অর্থ : উদার, অকৃপণ।
৪৩. الرَّقِيبُ (আর-রকিব)। অর্থ : সদা জাগ্রত, অতন্দ্র পর্যবেক্ষণকারী।
৪৪. الْمُجِيبُ (আল-মুজীব)। অর্থ : সাড়া দানকারী, উত্তরদাতা।
৪৫. الْوَاسِعُ (আল-ওয়াসি)। অর্থ : অসীম, সর্বত্র বিরাজমান।
৪৬. الْحَكِيمُ (আল-হাকিম)। অর্থ : সুবিজ্ঞ, সুদক্ষ।
৪৭. الْوَدُودُ (আল-ওয়াদুদ)। অর্থ : স্নেহশীল।
৪৮. الْمَجِيدُ (আল-মাজিদ)। অর্থ : মহিমান্বিত।
৪৯. الْبَاعِثُ (আল-বাঈস)। অর্থ : পুনরুত্থানকারী।
৫০. الشَّهِيدُ (আশ-শাহীদ)। অর্থ : সাক্ষ্যদানকারী।
৫১. الْحَقُّ (আল-হক)। অর্থ : প্রকৃত সত্য।
৫২. الْوَكِيلُ (আল-ওয়াকিল)। অর্থ : সহায় প্রদানকারী, আ¯’াভাজন, উকিল।
৫৩. الْقَوِيُّ (আল-কুওয়াত)। অর্থ : ক্ষমতাশালী।
৫৪. الْمَتِينُ (আল মাতীন সুদৃঢ়, সু¯ি’র।
৫৫. الْوَلِيُّ (আল-ওয়ালিই)। অর্থ : বন্ধু, সাহায্যকারী, শুভাকাক্সক্ষী।
৫৬. الْحَمِيدُ (আল-হামিদ)। অর্থ : সকল প্রশংসার দাবীদার, প্রশংসনীয়।
৫৭. الْمُحْصِي (আল-মুহসি)। অর্থ : বর্ণনাকারী, গণনাকারী।
৫৮. الْمُبْدِئُ (আল-মুব্দি)। অর্থ : অগ্রণী, প্রথম প্রবর্তক, সৃজনকর্তা।
৫৯. الْمُعِيدُ (আল-মুঈদ)। অর্থ : পুন:প্রতিষ্ঠাকারী, পুনরূদ্ধারকারি।
৬০. الْمُحْيِي (আল-মুহিই)। অর্থ : জীবনদানকারী।
৬১. الْمُمِيتُ (আল-মুমীত)। অর্থ : ধ্বংসকারী, মৃত্যু আনয়নকারী।
৬২. الْحَيُّ (আল-হাইই)। অর্থ : চিরঞ্জীব, যার কোনো শেষ নাই।
৬৩. الْقَيُّومُ (আল-কাইয়ুম)। অর্থ : অভিভাবক, জীবিকানির্বাহ প্রদানকারী।
৬৪. الْوَاجِدُ (আল-ওয়াজিদ)। অর্থ : পর্যবেক্ষক, চির¯’ায়ী।
৬৫. الْمَاجِدُ (আল-মাজিদ)। অর্থ : সুপ্রসিদ্ধ।
৬৬. الْوَاحِدُ (আল-ওয়াহিদ) ।অর্থ : এক, অনন্য, অদ্বিতীয়।
৬৭. الصَّمَدُ (আস-সমাদ)। অর্থ : চিরন্তন, অবিনশ্বর, নির্বিকল্প, সুনিপুণ, স্বয়ং সম্পূর্ণ।
৬৮. الْقَادِرُ (আল-কাদির)। অর্থ : সর্বশক্তিমান।
৬৯. الْمُقْتَدِرُ (আল-মুকতাদির)। অর্থ : প্রভাবশালী, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী।
৭০. الْمُقَدِّمُ (আল-মুকাদ্দিম)। অর্থ : অগ্রগতিতে সহায়তা প্রদানকারী।
৭১. الْمُؤَخِّرُ (আল-মুআক্ষির)। অর্থ : বিলম্বকারী।
৭২. الْأَوَّلُ (আল-আউয়াল)। অর্থ : সর্বপ্রথম, যার কোনো শুরু নাই।
৭৩ الْآخِرُ (আল-আখির)। অর্থ : সর্বশেষ, যার কোনো শেষ নাই।
৭৪. الظَّاهِرُ (আজ-জাহির)। অর্থ : সুস্পষ্ট, সুপ্রতীয়মান।
৭৫. الْبَاطِنُ (আল-বাতিন)। অর্থ : লুকায়িত, অস্পষ্ট, অন্তর¯’ (যা কিছু দেখা যায় না)।
৭৬. الْوَالِيَ (আল-ওয়ালি)। অর্থ : সুরক্ষাকারী বন্ধু, অনুগ্রহকারী, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রভু।
৭৭. الْمُتَعَالِي (আল-মুতাআলী)। অর্থ : সর্বো”চ মহিমান্বিত, সুউ”চ।
৭৮. الْبَرُّ (আল-র্বার)। অর্থ : কল্যাণকারী।
৭৯. التَّوَّابُ (আত-তাওয়াব)। অর্থ : বিনম্র, সর্বদা আবর্তিতমান।
৮০. الْمُنْتَقِمُ (আল-মুন্তাকিম)। অর্থ : প্রতিফল প্রদানকারী।
৮১. الْعَفُوُّ (আল-আফুউ)। অর্থ : শাস্তি মউকুফকারী, গুনাহ ক্ষমাকারী।
৮২. الرَّءُوفُ (আর-রওফ)। অর্থ : সদয়, সমবেদনা প্রকাশকারী।
৮৩. مَالِكُ الْمُلْكِ (মালিকুল মুলক)। অর্থ : সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
৮৪. ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ (জুল-জালালি ওয়াল ইকরাম)। অর্থ : মর্যাদা ও ঔদার্যের প্রভু।
৮৫. الْمُقْسِطُ (আল-মুকসিত)। ন্যায়পরায়ণ, প্রতিদানকারী।
৮৬. الْجَامِعُ (আল-জামি)। অর্থ : একত্র আনয়নকারী, ঐক্য সাধনকারী।
৮৭. الْغَنِيُّ (আল-গানিই)। অর্থ : ঐশ্বর্যবান, স্বতন্ত্র।
৮৮. الْمُغْنِي (আল-মুগনি)। অর্থ : সমৃদ্ধকারী, উদ্ধারকারী।
৮৯. الْمَانِعُ (আল-মানি)। অর্থ : প্রতিরোধকারী, রক্ষাকর্তা।
৯০. الضَّارُّ (আদ-র্দারু)। অর্থ : যন্ত্রণাদানকারী, উৎপীড়নকারী।
৯১. النَّافِعُ (আন-নাফি)। অর্থ : অনুগ্রাহক, উপকর্তা, হিতকারী।
৯২. النُّورُ (আন-নূর)। অর্থ : আলোক।
৯৩. الْهَادِي (আল-হাদী)। অর্থ : পথপ্রদর্শক।
৯৪. الْبَدِيعُ (আল-বাদী)। অর্থ : অতুলনীয়, অনিধগম্য।
৯৫. الْبَاقِي (আল-বাকী)। অর্থ : অপরিবর্তনীয়, অনন্ত, অসীম, অক্ষয়।
৯৬. الْوَارِثُ (আল-ওয়ারিস)। অর্থ : সবকিছুর উত্তরাধিকারী।
৯৭. الرَّشِيدُ (আর-রশিদ)। অর্থ : সঠিক পথের নির্দেশক।
৯৮. الصَّبُورُ (আস-সবুর)। অর্থ : ধৈর্যশীল।
৯৯. الْمُتَكَبِّرُ (আল-মুতাকাব্বির)। অর্থ : সর্বশ্রেষ্ঠ, গৌরবান্বিত।

আল্লাহর ভূমিকা কি? What is the role of Allah?

ইসলাম ধর্মে আল্লাহর ভূমিকা হলো:

  • আল্লাহ ওই সত্তাকে বলা হয়, যিনি স্বয়ম্ভু, সদা বিরাজমান। পূর্ণতা ও মহত্ত্বের যত গুণ হতে পারে, তিনি সেসব গুণের অধিকারী। আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই।
  • আল্লাহকে সর্বশক্তিমান বলে বিশ্বাস করা হয়।
  • আল্লাহ মহাবিশ্বের স্রষ্টা।
  • আল্লাহ মানুষকে সবকিছুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
  • আল্লাহর উপর ভরসা করা ইসলামে একটি ইবাদাত (উপাসনা)।
  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্যের উপর ভরসা করা শির্‌ক হিসেবে গণ্য হয়।
  • আল্লাহর উপর ভরসা করার প্রথা তাওয়াক্কুল নামে পরিচিত।
  • তাওয়াক্কুলের অর্থ হলো, মানুষ কল্যাণকর বিষয় অর্জনের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করবে আর ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করবে।
  • আল্লাহ মানুষের আবাসের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।
  • মানুষের কল্যাণ ও জীবন ধারণের জন্য পরিবেশে বিদ্যমান যাবতীয় উপাদান নিয়ামত হিসাবে দান করেছেন

আল্লাহ পৃথিবী কেন সৃষ্টি করেছেন? Why did God create the world?

ইসলাম ধর্মমতে, আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন মানুষকে তাঁর ইবাদত করার জন্য। আল্লাহ মানুষকে সবকিছুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং তাঁকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। তবে, আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা-অনিচ্ছার ক্ষমতাও দিয়েছেন।

আল্লাহর বৈশিষ্ট্য কেন গুরুত্বপূর্ণ? Why are the characteristics of Allah important?

  • মহান আল্লাহ ঈমানদার বান্দাদেরকে তার কথা স্মরণ রাখার নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআন শরিফে বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করো।’ (সুরা আহযাব, আয়াত : ৪১-৪২)
  • আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ২৮)
  • পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫২)

আল্লাহর প্রকৃতি সম্পর্কে ইসলাম কি শিক্ষা দেয়? What does Islam teach about the nature of Allah?

আল্লাহর ইবাদত

ইসলামে আল্লাহর প্রকৃতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, যেমন:

  • আল্লাহ একমাত্র সত্য ঈশ্বর এবং একমাত্র উপাসনার যোগ্য
  • আল্লাহ সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, এবং অতীন্দ্রিয়
  • আল্লাহর কোনো বংশ, জাতি, লিঙ্গ, বা দেহ নেই
  • আল্লাহ সবাইকে সমানভাবে বিচার করেন
  • আল্লাহ পরম করুণাময়
  • আল্লাহ পৃথিবীতে বিদ্যমান সবকিছুর উপরে এবং তার বাইরে
  • আল্লাহর ৯৯টি নাম আছে, যা তার মূল গুণাবলী।

কিভাবে আল্লাহকে পাওয়া যায়? How to find Allah?

আল্লাহকে পাওয়ার জন্য মানুষ অবশ্যই আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হতে হবে। ইবাদতগুলোর মধ্যে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, এগুলোর পাশাপাশি মানুষের প্রতি দয়া করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়া সম্ভব। হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই ঘোষণা দিয়েছেন।

আল্লাহর পছন্দের কাজ, Allah’s favorite work :

আল্লাহর পছন্দের কিছু কাজ হলো:

  • জাদু-টোনা না করা
  • কারও প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ না করা
  • অন্যের ত্রুটি খোঁজার জন্য গোয়েন্দাগিরি না করা
  • আন্দাজ করা থেকে বিরত থাকা
  • অন্যের ত্রুটি গোপন করা
  • অহংকার সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা
  • আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা

শেষ কথা, Conclusion :

আশা করি আজকের এই প্রতিবেদন থেকে আপনারা আল্লাহ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরেছেন। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা আল্লাহর উপর ভরসা রেখেই সকল কার্য সম্পাদন করে থাকেন। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত আরও তথ্য জানতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts