পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশার নামাজ হলো পঞ্চম ও শেষ ওয়াক্তের নামাজ। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফজরের নামাজ দিয়ে শুরু হয় ও এশার নামাজ দিয়ে শেষ হয়। এশার নামাজ রাতে আদায় করতে হয়। এশা ও ফজরের নামাজের জামাতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এ দুই সময়ে মানুষ সাধারণত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় ও বিশ্রাম করে। ফলে এই দুই ওয়াক্তে জামাতে শরিক হতে যথেষ্ট অবহেলা ও গাফিলতি হয়ে থাকে।আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ঈশা বা এশার নামাজ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
ঈশা বা এশার নামাজ কয় রাকাত, How many rakats is the Isha Namaz?
সর্বমোট পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ রাকাত সংখ্যা রয়েছে এশার নামাজের। এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা হল ১৭। এই ১৭ রাকাত নামাজের মধ্য থেকে ফরজ নামাজ হলো ৪ রাকাত, সুন্নত নামাজ হলো ৬ রাকাত, বিতরের নামাজ ৩ রাকাত এবং বাকি ৪ রাকাত হলো নফল নামাজ।
মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত বা সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এশার ওয়াক্ত শুরু হয়। এশার ওয়াক্ত ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকে, অর্থাৎ সাহরির ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/৪৩০)
ইসলামের মাগরিবের নামাজের সময় অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে ইশার নামাজের সময় শুরু হয় এবং রাতের তিন ভাগের এক ভাগ সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ে এই নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম, তবে রাতের দুই তৃতীয়াংশ সময়েও এটি জায়েজ এবং সুবহে সাদিকের আগ(এটাকে মাকরুহ অনুত্তম সময় বলা হয়) পর্যন্ত পড়া যায়।
এশার নামাজ পড়ার নিয়ম, Rules for reading Isha Namaz
ফরজ নামাজ ঠিকমতো পড়ে নেওয়ার পরে, বাকি নামাজ আগে পিছে করে পড়ে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, বিতরের নামাজ সর্বশেষে আদায় করতে হয়, কারণ, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন : রাতের নামাজের সর্বশেষ নামাজ যেন হয় বিতরের নামাজ। তাই সর্বশেষ নামাজ হিসাবে বিতরের নামাজ পড়া উত্তম। বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া মধ্যরাতের পর এশা পড়া মকরুহ বলে মনে করা হয়। ওয়াজ মাহফিলেও যথাসময়ে এশার নামাজ আদায় করা জরুরি। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/৪৩১)
এশার নামাজের সময়, Isha Namaz time
এশার সময় হওয়ার সোয়া এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে এশার নামাজ পড়া শুরু হয়। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/৪৩০) বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া মধ্যরাতের পর এশা পড়া মকরুহ। রোগীর সেবা শরিয়ত অনুমোদিত প্রয়োজনের মধ্যে গণ্য হতে পারে। কিন্তু ওয়াজ মাহফিল প্রয়োজনের মধ্যে গণ্য হবে না। তাই ওয়াজ মাহফিলেও যথাসময়ে এশার নামাজ আদায় করা জরুরি। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/৪৩১)
ইশার নামাযের নিয়মাবলি জেনে নিন, Rules of Isha Namaz
এশার ফরজ একটি আবশ্যিক বিষয়, এই নামায ৪ রাকাত, যা প্রত্যেক মুসলিম’কেই পড়তে হয়। ফরজ অংশটি ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে আদায় করতে হয়, তবে কখনো কোনো অসুবিধা থাকলে তা নিজে নিজে পড়ে নেয়া যায়। তবে মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী জামাতের সাথে পড়লে সাতাশ গুন বেশি সওয়াব। এর পূর্বে ৪ রাকাত সুন্নাহ নামাজ রয়েছে। এটি একটি ঐচ্ছিক নামাজ (সুন্নাতে যায়েদা বা গায়েরে সুন্নাত এ মুয়াক্কাদাহ ও বলা হয়)। তবে ইসলামে তথা হাদীসে এটিও পড়তে উৎসাহিত করা হয় এবং সময় থাকলে পড়া উচিত, তবে না পড়লে কোনো গুনাহ হবে না।
ফরয ৪ রাকাতের পর ২ রাকাত সুন্নাহ নামায পড়তে হয় যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত (সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ) এবং হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী নবীজী নিজের জীবদ্দশায় এটি কখনো ছাড়েননি। তারপর, কেউ কেউ ২ রাকাত নফল নামায পড়ে থাকেন যার কোন দলিল পাওয়া যায়নি। নফল নামাযসমূহ নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত দিনরাতের যেকোন সময় পড়া যায়।
শুধু’যে ২ রাকাতই পড়তে হবে, ব্যপারটা এমন নয়। এর বেশি পড়লেও ক্ষতি নেই। এরপরের নামাজটি হল বিতরের নামাজ। তবে এটার সাথে এশার নামাযের কোন সম্পৃক্ততা নেই। ইসলামে এই নামাজ ঘুম থেকে শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাযের পর পড়া উত্তম বলে মনে করা হয়।
তবে যাদের ঘুম থেকে জেগে ওঠা নিয়ে সমস্যা থাকে তাদের জন্য উচিত হবে এশার নামাযের পরপরই এই নামাজ পড়ে নেওয়া। হাদিস মতে, বিতরের নামাজ ১ রাকাত, ৩ রাকাত, ৫ রাকাত, ৭ রাকাত পড়া যায়। আবার কেউ মুসাফির অবস্থায় থাকলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী ইশা’র চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত আদায় করতে হয়। তারপর শুধুমাত্র বিতর নামাযটি আদায় করতে হয়।
এশার নামাজের প্রথম চার রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা পড়ার নিয়ম, The first four rakats of Esha Namaz are the rule of reading the Muaqqadah without the Sunnah
- ১) প্রথমে ওজু করে পাক-পবিত্র হয়ে, পবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে (মুখে উচ্চারণ করে বলবেন বা মনে মনে এই নিয়ত করবেন যে, আমি কেবলামুখী হয়ে এশার চার রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করতেছি, এতটুকুতেই চলবে, আরবিতে বলা জরুরী নয়)।
- ২) তারপর দুই হাত কানের লতি বরাবর (মেয়েরা কাঁধ বরাবর হাত উঠাবে) উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে নাভির নিচে (মেয়েরা বুকের উপর) হাত বাধবে এবং বাম হাতের উপর ডান হাত রাখবে।
- ৩) এবার ছানা পড়তে হবে (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুক। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি পাক-পবিত্র, তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়, তোমার গৌরব অতি উচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কেহ উপাস্য নাই।
- ৪) তারপর আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
- ৫) সূরা ফাতিহা শেষ করার পর যেকোন একটি সূরা পাঠ করতে হবে বা কোরআন শরিফের যেকোন স্থান হতে কমপক্ষে ৩ আয়াত পড়তে হবে।
- ৬) তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে যাওয়ার পর রুকুর তাসবি পড়বে, “সুবহানা রব্বিয়াল আযিম” তিন বার, পাঁচবা, সাতবার যতবার ইচ্ছে। তবে বেজোড় সংখ্যা পড়লে উত্তম।
- ৭) রুকু হতে উঠার সময় পড়বে “সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ্” এবং সুজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়বে “রব্বানা লাকাল হামদ”।
- ৮) দাঁড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে এবং সিজদার তাসবি পড়বে “সুবহানা রাব্বিয়াল আ-লা” তিন, পাঁচ অথবা সাতবার।
- ৯) এক সিজদা দেয়ার পর সোজা হয়ে বসে আবার দ্বিতীয় সিজদায় যেতে হবে। আবার তিন, পাঁচ অথবা সাতবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আ-লা” পড়তে হবে।
- ১০) এবার আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। এভাবে প্রথম রাকাত শেষ হবে।
- ১১) এবার দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর তার সাথে আরেকটি সূরা পড়তে হবে (প্রথম রাকাতের নেয় ছানা পড়ার প্রয়োজন নেই। প্রথম রাকাতেই শুধু ছানা পড়তে হয়, অন্য রাকাতগুলোতে ছানা পড়তে হয় না)। এখন আগের নিয়মে রুকু ও সিজদার নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে। দুই সিজদা করার পর বসতে হবে এবং তাশাহুদ পড়তে হবে।
তাশাহুদ: আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। আসসালামুয়ালাইকা আয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্। আসসালামুয়ালাইনা আ’লা ইবাদিল্লাহিস সয়ালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহ্”।
- ১২) তাশাহুদ শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতে হবে এবং সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। তারপর রুকু সেজদার নিয়মগুলো আগের মত করতে হবে এবং দুই সেজদার পর আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
- ১৩) চতুর্থ রাকাত শুরু হলো। এখন আবার সূরা ফাতিহা পড়ার পরে অন্য একটি সূরা পড়তে হবে এবং আগের নিয়মে রুকু করতে হবে এবং দুটি সিজদা করতে হবে।
- ১৪) দুই সিজদার পরে বসতে হবে এবং তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে।
- দুরুদ: “আল্লাহুম্মা সল্লিয়ালা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীম, ইন্নিকা হামিদুম্মাজিদ।”
- দোয়া মাসুরা: “আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্ জুনুবা, ইল্লা আংতা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম, মিন ইংদিকা ওয়ার হামনী, ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর রাহীম।”
- ১৫) তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা শেষ করে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে প্রথমে ডান কাঁধের দিকে সালাম ফিরাতে হবে এবং “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে বাম কাঁধের দিকে সালাম ফিরাতে হবে। এভাবে চার রাকাত সুন্নাত নামাজ শেষ হবে।
ইশার বা এশার নামাজের বর্ণনা, Description of Isha namaz
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর নামাজ হলো এশা ও ফজরের নামাজ। তারা যদি এই নামাজের ফজিলত সম্পর্কে জানত, তা হলে অবশ্যই হামাগুড়ি দিয়ে হলেও নামাজে শরিক হতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৫)।
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারারাত জেগে নামাজ আদায় করল।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৭)
আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমাদের সবাইকে তোমাদের কর্মের পুরোপুরি প্রতিদান কেবল কেয়ামতের দিনই দেওয়া হবে। অতঃপর যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে, সেই প্রকৃত অর্থে সফলকাম হবে। আর এই পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)। পরকালকে ভুলে যাওয়াই বর্তমানে বহু অশান্তির কারণ। যথাযথভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে আবার আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে আসতে পারে অফুরান কল্যাণ। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)।
এশার নামাজের নিয়ত, Niyat of Isha Namaz
নামাজ শুরুর আগে নিয়ত পড়ে নিতে হয়। প্রত্যেক নামাজের নিয়ত আলাদা আলাদা। এশার নামাজের নিয়তগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো:
চার রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত, The Niyat of four rakat Sunnat Namaz
- “নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকয়াতাই সালাতিল এশাই সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
- বাংলা অর্থ:”এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”
চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত, The Niyat of four rakat Faraj Namaz
- “নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকয়াতাই সালাতিল এশাই ফারদুল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
- বাংলা অর্থ: “এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।
দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত, The Niyat of two rakat Sunnat Namaz
- “নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকয়াতি সালাতিল এশাই সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
- বাংলা অর্থ: “এশার দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”
দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত, The Niyat of two rakat Nafal Namaz
- “নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকয়াতি সালাতিল নফলে মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
- বাংলা অর্থ: “এশার দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”
উপরোক্ত নিয়তগুলো এশার প্রত্যেক নামাজের আগে পড়ে নিতে হয়।
এশার নামাজের ফজিলত, Fazilat of Isha Namaz
এশার নামাজের কিছু ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন :
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত (নফল) নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৭)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৭)
এশার নামাজ যদি জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয়, এর ফজিলত আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে। জামাতে নামাজ আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে নবী (সা.) বলেছেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪৭৭)
এশার পরের দুই রাকাত সুন্নতের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা নিয়মিত আদায় করবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলো জোহরের আগে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, এশার পরে দুই রাকাত এবং ফজরের আগে দুই রাকাত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪১৪)
উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার মহানবী (সা.) আমাদের ফজরের নামাজ পড়িয়েছেন। সালাম ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তারপর আরেকজনের নাম নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তিনি বলেন, এ দুই নামাজ (এশা ও ফজর) মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। তোমরা যদি জানতে যে এই দুই নামাজে কী পরিমাণ সওয়াব আছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে শরিক হতে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫৫৪)
আওয়াল অক্তে নামায আফযল হলেও এক তৃতীয়াংশ বা মধ্যরাতে (শেষ অক্তে) এশার নামায পড়া আফযল। মহানবী (ﷺ) বলেন, “আমার উম্মতের জন্য কষ্টসাধ্য না জানলে আমি এশার নামাযকে এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধরাত পর্যন্ত দেরী করে পড়তে তাদেরকে আদেশ দিতাম।” (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ৬১১নং)
প্রিয় রসূল (ﷺ) এশার নামাযকে এক তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত দেরী করে পড়তে পছন্দ করতেন এবং এশার পূর্বে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলাকে অপছন্দ করতেন। (বুখারী ৫৯৯, মুসলিম, প্রমুখ) যাতে এশা, তাহাজ্জুদ, বিতর ও ফজরের নামায যথা সময়ে পড়া সহজ হয়। তবে দ্বীন অথবা জরুরী বিষয়ে কথাবার্তা বলা ও ইলম চর্চা করা দূষনীয় নয়। যেমন আল্লাহর রসূল (ﷺ) আবূ বকর ও উমারের সাথে এশার পর জনসাধারণের ভালো-মন্দ নিয়ে কথাবার্তা বলতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান ১৬৯নং)
এশার নামাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এবং অনাদায়ে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের থেকে বেশি কঠিন কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো।’ (বুখারি, হাদিস, ৬৫৭)
অন্যান্য নামাজের মতই এশার নামাজ গুরুত্ব সহকারে আদায় করার চেষ্টা করবেন।
শেষ কথা, Conclusion
ফজিলতের দিক থেকে এশার নামাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই নামাজ যদি জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয়, এর ফজিলত আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে। উপরে উল্লেখিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা এশার নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই প্রতিবেদনটি আপনাদের মনোগ্রাহী হয়েছে।