পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশার নামাজ হলো পঞ্চম ও শেষ ওয়াক্তের নামাজ। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফজরের নামাজ দিয়ে শুরু হয় ও এশার নামাজ দিয়ে শেষ হয়। এশার নামাজ রাতে আদায় করতে হয়। এশা ও ফজরের নামাজের জামাতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এ দুই সময়ে মানুষ সাধারণত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় ও বিশ্রাম করে। ফলে এই দুই ওয়াক্তে জামাতে শরিক হতে যথেষ্ট অবহেলা ও গাফিলতি হয়ে থাকে।
এশার নামাজ পড়ার নিয়ম, Rules for reading Isha Namaz
ফরজ নামাজ ঠিকমতো পড়ে নেওয়ার পরে, বাকি নামাজ আগে পিছে করে পড়ে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, বিতরের নামাজ সর্বশেষে আদায় করতে হয়, কারণ, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন : রাতের নামাজের সর্বশেষ নামাজ যেন হয় বিতরের নামাজ। তাই সর্বশেষ নামাজ হিসাবে বিতরের নামাজ পড়া উত্তম। বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া মধ্যরাতের পর এশা পড়া মকরুহ বলে মনে করা হয়। ওয়াজ মাহফিলেও যথাসময়ে এশার নামাজ আদায় করা জরুরি। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/৪৩১)
এশার নামাজের সময় নির্ধারণ কিভাবে করা হয়, How to determine the time of Isha Namaz
গোধূলি পেরিয়ে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসার পর থেকে এশার নামাজের ওয়াক্ত বা সময় শুরু হয় এবং রাতের এক তৃতীয়াংশ সময় থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যে কোন সময়ে নামাজ আদায় করে নেওয়া যেতে পারে, অর্থাৎ এশার সময় হওয়ার সোয়া এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে এশার নামাজ পড়া। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/৪৩০)
এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা কত? What is the number of rakat of Isha Namaz?
সর্বমোট পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ রাকাত সংখ্যা রয়েছে এশার নামাজের। এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা হল ১৭। এই ১৭ রাকাত নামাজের মধ্য থেকে ফরজ নামাজ হলো ৪ রাকাত, সুন্নত নামাজ হলো ৬ রাকাত, বিতরের নামাজ ৩ রাকাত এবং বাকি ৪ রাকাত হলো নফল নামাজ।
মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত বা সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এশার ওয়াক্ত শুরু হয়। এশার ওয়াক্ত ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকে, অর্থাৎ সাহরির ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/৪৩০)
এশার নামাজের ফজিলত, Fazilat of Isha Namaz
এশার নামাজের কিছু ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন :
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত (নফল) নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৭)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৭)
এশার নামাজ যদি জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয়, এর ফজিলত আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে। জামাতে নামাজ আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে নবী (সা.) বলেছেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪৭৭)
এশার পরের দুই রাকাত সুন্নতের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা নিয়মিত আদায় করবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলো জোহরের আগে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, এশার পরে দুই রাকাত এবং ফজরের আগে দুই রাকাত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪১৪)
উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার মহানবী (সা.) আমাদের ফজরের নামাজ পড়িয়েছেন। সালাম ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তারপর আরেকজনের নাম নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তিনি বলেন, এ দুই নামাজ (এশা ও ফজর) মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। তোমরা যদি জানতে যে এই দুই নামাজে কী পরিমাণ সওয়াব আছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে শরিক হতে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫৫৪)
আওয়াল অক্তে নামায আফযল হলেও এক তৃতীয়াংশ বা মধ্যরাতে (শেষ অক্তে) এশার নামায পড়া আফযল। মহানবী (ﷺ) বলেন, “আমার উম্মতের জন্য কষ্টসাধ্য না জানলে আমি এশার নামাযকে এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধরাত পর্যন্ত দেরী করে পড়তে তাদেরকে আদেশ দিতাম।” (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ৬১১নং)
প্রিয় রসূল (ﷺ) এশার নামাযকে এক তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত দেরী করে পড়তে পছন্দ করতেন এবং এশার পূর্বে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলাকে অপছন্দ করতেন। (বুখারী ৫৯৯, মুসলিম, প্রমুখ) যাতে এশা, তাহাজ্জুদ, বিতর ও ফজরের নামায যথা সময়ে পড়া সহজ হয়। তবে দ্বীন অথবা জরুরী বিষয়ে কথাবার্তা বলা ও ইলম চর্চা করা দূষনীয় নয়। যেমন আল্লাহর রসূল (ﷺ) আবূ বকর ও উমারের সাথে এশার পর জনসাধারণের ভালো-মন্দ নিয়ে কথাবার্তা বলতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান ১৬৯নং)
এশার নামাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এবং অনাদায়ে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের থেকে বেশি কঠিন কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো।’ (বুখারি, হাদিস, ৬৫৭)
অন্যান্য নামাজের মতই এশার নামাজ গুরুত্ব সহকারে আদায় করার চেষ্টা করবেন।
এশার নামাজের নিয়ত, Niyat of Isha Namaz
নামাজ শুরুর আগে নিয়ত পড়ে নিতে হয়। প্রত্যেক নামাজের নিয়ত আলাদা আলাদা। এশার নামাজের নিয়তগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো:
চার রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত, The Niyat of four rakat Sunnat Namaz
- “নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকয়াতাই সালাতিল এশাই সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
- বাংলা অর্থ:”এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”
চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত, The Niyat of four rakat Faraj Namaz
- “নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকয়াতাই সালাতিল এশাই ফারদুল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
- বাংলা অর্থ: “এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”
দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত, The Niyat of two rakat Sunnat Namaz
- “নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকয়াতি সালাতিল এশাই সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
- বাংলা অর্থ: “এশার দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”
দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত, The Niyat of two rakat Nafal Namaz
- “নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকয়াতি সালাতিল নফলে মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
- বাংলা অর্থ: “এশার দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”
উপরোক্ত নিয়তগুলো এশার প্রত্যেক নামাজের আগে পড়ে নিতে হয়।
শেষ কথা, To conclude
এশা ও ফজরের নামাজের জামাতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এশার নামাজ আদায় করলে— অর্ধেক রাত ইবাদত করার সওয়াব লাভ হয়। এজন্য বিভিন্ন হাদিসে ফজিলত বর্ণনার পাশাপাশি বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ যেন সবাইকে সময় মত নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেন। দুনিয়া আখেরাতে সফলকাম হওয়ার মত যোগ্যতা অর্জনে তৌফিক দান করেন।