ইসমে আজম দোয়া করার নিয়ম, Rules for praying Isme Azam in Bangla

ইসমে আজম দোয়া করার নিয়ম

আল্লাহর ৯৯ টি গুণবাচক নাম রয়েছে, যাকে আল আসমাউল হুসনা বা সুন্দরতম নাম বলা হয়। এই নামগুলো আল্লাহর সত্তা, গুণাবলী, কার্যকলাপকে প্রকাশ করে; আর এই নামগুলো কেবল আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য, অন্য কারো জন্য ব্যবহার করা যায় না। মহান আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে মর্যাদা সম্পন্ন নাম হলো- ‘ইসমে আজম’। ‘ইসমে আজম’ আরবি শব্দ।

ইসম অর্থ নাম আর আজম অর্থ শ্রেষ্ঠ, মহান। এ মর্যাদাপূর্ণ নামের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে ডাকলে তিনি নিজের বান্দাদের ডাকে সাড়া দেন। ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে এ ‘ইসমে আজম’র আমলের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে কোনো কিছু চাওয়া হলে তিনি তা কবুল করেন। কিন্তু ইসমে আজম সম্পর্কে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছেন? এমন প্রশ্ন হয়তো অনেকের মনেই আছে। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা উক্ত আমল নিয়ে আলোচনা করবো এবং এ সম্পর্কে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

ইসমে অর্থ কি? What is the meaning of Isme?

ইসমে আজম’ আরবি শব্দ। ইসম অর্থ নাম আর আজম অর্থ শ্রেষ্ঠ, মহান।

ইসমে আজম কিভাবে পড়তে হবে? How to recite Isme-Azam?

সিজদা ও শেষ বৈঠক উভয় জায়গাতেই ইসমে আজম পড়া যাবে। কেননা শেষ বৈঠকে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত যেকোনো দুআ পাঠ করা যায়

ইসমে আজম কিভাবে পড়তে হবে?

ইসমে আজম  কখন পড়তে হয়? When to recite Isme-Azam?

ফজরের নামাজের পরে ইসমে আজম এই আমলটি করার উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এই আমলটি করতে পারবেন। তবে আপনি যদি চান আল্লাহ তা’আলা আপনার দোয়া গুলো কবুল করুন এবং আপনার মনের ইচ্ছা গুলো পূরণ হোক তাহলে ফজরের নামাজ শেষ করার পরে ইসমে আজম এই আমল গুলো পড়তে থাকুন।

ইসমে আজম  কখন পড়তে হয়?

আয়াতে ইসমে আজম, Ayat-e- Isme Azam

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে একাধিক আয়াত ও মাছনুন দোয়ায় ‘ইসমে আজম’ আছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন, যেগুলোর আমল করা এবং পড়ার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর কাছে নিজের চাওয়া-পাওয়ার কথা জানালে তিনি তার বান্দাকে তা দান করেন। হযরত আবদুল কাদের জিলানি রহ. বলেন, ‘ইসমুল আজম হলো ‘আল্লাহ’ শব্দ। তবে শর্ত হলো তা পূর্ণ একাগ্রতা ও এখলাসের সঙ্গে বলতে হবে। (মিরকাতুল মাফাতিহ, ১/৬)। 

আয়াতে ইসমে আজম

১. হজরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার মহান নাম (ইসমে আজম) দুই আয়াতের মাঝে নিহিত আছে।’ 

আয়াতগুলো হল :

وَ اِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحۡمٰنُ الرَّحِیۡمُ

‘আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৬৩)

সুরা আল-ইমরানের প্রারম্ভিক আয়াতে রয়েছে –

الٓمَّٓ ۙ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ

‘আলিফ লাম মীম; তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১-২)

হাদিসের বর্ণনায় ইসমে আজম সমৃদ্ধ যে আয়াতটি রয়েছে, সেটি হল –

وَ اِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحۡمٰنُ الرَّحِیۡمُ

 মক্কার মুশরিকরা একে মূল্যয়ন করলো না বরং তারা বলেন-

أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ

‘সে (মুহাম্মাদ) কি এতগুলো উপাস্যের পরিবর্তে একটি মাত্র উপাস্য সাব্যস্ত করেছে! নিশ্চয়ই এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার।’ (সুরা সাদ : আয়াত ৫)

২. সুরা আল-ইমরানের প্রারম্ভিক আয়াতেও ইসমে আজম এর উল্লেখ আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

الٓمَّٓ ۙ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ

‘আলিফ লাম মীম; তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১-২)

উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহর বিশেষ দুইটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি হল- তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু ও ধ্বংস নেই। আয়াতুল কুরসিতে এ অংশটিই ফুটে ওঠেছে। এ অংশকে সেখানেও ইসমে আজম বলা হয়েছে। হাদিসে আল্লাহর ইসমে আজম (মহান নাম) তিনটি আয়াতে এসেছে। তাহলো-

  •  সুরা আল-ইমরানের প্রারম্ভে– الٓمَّٓ ۙ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ
  •  আয়াতুল কুরসিতে- اللهُ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ
  •  সুরা ত্বহা’র ১১১ নং আয়াতে– وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ।’ (ইবনে কাছির)

৩. ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেদের গ্রন্থে ইয়ামে আজমের বর্ণনা করেছেন। ইসমে আজম সম্পর্কে হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে যে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ আল-আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে দোয়া বলতে শুনেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আংতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আংতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমিই একমাত্র আল্লাহ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, তুমি একক সত্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি, আর তার সমকক্ষ কেউ নেই।’

সুরা আল-ইমরানের প্রারম্ভিক আয়াতেও ইসমে আজম এর উল্লেখ আছে

ওই ব্যক্তির মুখে এ বাক্যগুলো শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘সেই মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার জীবন! নিঃসন্দেহে এ ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার মহান নামের (‘ইসমে আজম’-এর) ওসিলায় তার কাছে প্রার্থনা করেছে; যে নামের ওসিলায় দোয়া করা হলে তিনি কবুল করেন এবং যে নামের অসিলায় (কোনো কিছু সাহায্য) প্রার্থনা করা হলে তিনি তা দান করেন।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

সবচেয়ে শক্তিশালী দোয়া কি? Which is one of the most powerful Dua?

ইসমে আজম হলো খুব শক্তিশালী একটি দোয়া, বিভিন্ন আলেমগণ বিভিন্নভাবে এটিকে দোয়া অথবা নাম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, কিন্তু কেউই সুনিদিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। অনেকের মতে, আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করেই এই নাম ও দোয়াকে লুকায়িত করে রেখেছেন, কেননা স্থানভেদে কিছু মানুষ এই দোয়াকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।

আল্লাহর ৯৯ টি গুণবাচক নাম রয়েছে, যাকে আল আসমাউল হুসনা বা সুন্দরতম নাম বলা হয়।

ইসমে আজমের ফজিলত, Fazilat of Isme Azam

বেশ কয়েকটি হাদিসে ইসমে আজমের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

 হযরত আনাস রা. সূত্রে বর্ণিত, একবার রসুল সা. মসজিদে প্রবেশ করেছেন। এমতাবস্থায় এক লোক নামাজ শেষে এ দোয়া করছিলেন,

 اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ 

এর উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আনতা আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।

ইসমে আজমের ফজিলত

 এর বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমিই একমাত্র আল্লাহ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, তুমি একক সত্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি, আর তার সমকক্ষ কেউ নেই।’

এইসময় রসুল সা. তাকে বললেন, ‘তুমি জানো, তুমি কি দিয়ে দোয়া করেছ? তুমি দোয়া করেছ ‘ইসমে আজম’ দিয়ে, যার মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন। এর মাধ্যমে কিছু চাইলে আল্লাহ তা প্রদান করেন। (সুনানে তিরমিজি ৩৫৪৪)

অন্যদিকে ইসমে আজম সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রাহ রা. বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার নিরানব্বই নাম আছে, এক কম একশত নাম। যে ব্যক্তি এ নামগুলোর হিফাজত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ বিজোড়। তিনি বিজোড় পছন্দ করেন। (বুখারি ৬৪১০)

ইসমে আজমের বর্ণনা, Isme Azam Description

আল্লামা জাজারি রহ. বলেছেন, আমার মতে ইসমে আজম-  لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ

এর উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম।  

এর বাংলা অর্থ: আল্লাহ তিনিই, যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, (সমগ্র জগতের) নিয়ন্ত্রক।

ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন, আমি ইমাম আবু হানিফা রহ. থেকে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলার ইসমে আজম হলো, اللَّه (আল্লাহ)। কেননা, এটি আল্লাহর সত্তাগত নাম। তাছাড়া কোরআন মজিদে এই নামটিই ২,৬৯৭ বার এসেছে। এত বেশি অন্য নাম আসেনি। (আত-তাকরির ওয়াত-তাহবির ১/৫)।

ইসমে আজমের বর্ণনা

ইসমে আজম পড়ার গুরুত্ব, Importance of Isme Azam

ইসমে আজম পড়ার গুরুত্ব জানা থাকলে আমরা সবাই এই দোয়াটি পড়তে চাইতাম। কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই এই আমলের গুরুত্ব সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা রাখেনা। সাধারণত ওপরে ইসমে আজম সম্পর্কে বিস্তারিত হাদিসগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

সাধারণত এখানে বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে এই ইসমে আজম পড়ে যদি আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি তাহলে তিনি সেই দোয়া গুলো কবুল করেন।
আমরা যদি আমাদের জীবনের গুনাহ গুলো মাফ করে নিতে চাই এবং আমাদের মনের আশা গুলো পূরণ করতে চাই তাহলে ইসমে আজম পড়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে মন থেকে দোয়া করতে হবে। তবে মনের ভেতরে কোন ধরনের হিংসা বিদ্বেষ রাখা যাবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা হিংসা এবং বিদ্বেষ একেবারেই পছন্দ করেন না।

ইসমে আজম পড়ার গুরুত্ব

শেষ কথা, Conclusion 

আল্লাহর বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে যে নামগুলোতে সেগুলোকে ইসমে আজম বলা হয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসমে আজমের বরকত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। নিজেদের চাওয়া-পাওয়ায় ইসমে আজমের বরকত পেতে যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Contents show

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts