জানাজার নামাজের নিয়ম, Rules and supplications for funeral prayers ( Janazah Namaz) in Bengali

জানাজার নামাজের নিয়ম

আরবি ‘জানাজা’ শব্দের অর্থ মৃতদেহ। আর সালাতুল জানাজা মানে মৃতদেহের নামাজ। ইসলাম ধর্মে কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে তার জানাজার নামাজ পড়া আবশ্যক। তবে এই নামাজের নিয়ত এবং দোয়া নির্দিষ্ট বিধি মিলে পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে যে দোয়া পড়তে হয় আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা সেই সম্পর্কে উল্লেখ করবো।

জানাযার নামাজ বলতে কি বোঝানো হয়? What is meant by Janaza Namaz?

জানাযা  একধরনের বিশেষ প্রার্থনা।এটি কোনো মৃত মুসলমানকে কবর দেয়ার পূর্বে সংগঠিত হয়। সচরাচর এটি জানাযার নামাজ নামে অভিহিত হয়। এর শাব্দিক অর্থ হল  মৃতদেহের নামাজ বা পারিভাষিকভাবে মৃতদেহের জন্য নামাজ

জানাযার নামাজ বলতে কি বোঝানো হয়?

জানাজার নামাজ কিভাবে পড়তে হয়? How to recite Janazah Namaz?

প্রথম তাকবিরের পর সানা, দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ শরিফ পড়তে হবে। তারপর তৃতীয় তাকবিরের পর দোয়া পড়বেন। এরপর চতুর্থ তাকবির দিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে। সংক্ষেপে জানাজার নামাজের নিয়ম হলো মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য সবাই একত্র হয়ে দাঁড়াবেন।

জানাজার নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?

জানাজার নামাজের গুরুত্ব, Importance of Janazah Namaz

কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে তার জানাজার নামাজ পড়া এবং তার কবর জিয়ারত করা সওয়াবের কাজ। এমনকি পাপাচারী মুসলমান মৃত্যুবরণ করলেও তার জানাজা পড়তে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, 

‘প্রত্যেক মুসলমানের ওপর (জানাজার) নামাজ পড়া ওয়াজিব, চাই সে নেককার হোক বা বদকার, যদিও সে কবিরা গুনাহ করে।’ (আবু দাউদ: ১/৩৫০)

ইসলামি শরিয়তে জানাজা, কাফন-দাফন ইত্যাদি জীবিত মুসলমানদের ওপর মৃতদের অধিকার। জানাজার নামাজ পড়া ফরজে কেফায়া তথা সামগ্রিক ফরজ। যদি সমাজের একদল মানুষ মৃত ব্যক্তির জানাজা আদায় করে, তবে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। আর কেউ তা আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন,

জানাজার নামাজের গুরুত্ব

 ‘একজন মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি অধিকার রয়েছে। এক. যখন কোনো মুসলমানের সঙ্গে দেখা হয় তখন সালাম দেবে। দুই. কোনো মুসলমান ডাকলে সাড়া দেবে। তিন. সে তোমার কাছে সৎ পরামর্শ চাইলে তুমি তাকে সৎ পরামর্শ দেবে। চার. কোনো মুসলমানের হাঁচি এলে হাঁচিদাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। পাঁচ. কোনো মুসলমান অসুস্থ হলে তার সেবা-শুশ্রূষা করবে। ছয়. কোনো মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজায় শরিক হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২১৬২)

জানাজার নামাজের নিয়ম, Rules of Janazah Namaz

জানাজার নামাজের নিয়ম সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে যা করতে হয় :

  • কাতারবদ্ধ হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়ানোর পর নিয়ত করে প্রথম তাকবিরের পর ছানা পাঠ।
  • দ্বিতীয় তাকবীরের পর দরুদে ইবরাহীম পাঠ।
  • তৃতীয় তাকবিরের মৃত ব্যাক্তির জন্য দোয়া পড়বে: ‘‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলী হাইয়েনা ওয়া মাইয়্যাতিনা” শেষ পর্যন্ত এবং “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে” শেষ পর্যন্ত পাঠ।
  • চতুর্থ তাকবির দিয়ে সালাম ফিরিয়ে, হাত নামিয়ে জানাজার নামাজ শেষ করতে হয়।

জানাজার নামাজ চার তাকবীরের সঙ্গে আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজে তাকবীর দেয়ার সময় হাত তুলতে হয়, তবে জানাজার নামাজে তাকবীর দেয়ার সময় হাত তোলার প্রয়োজন পড়ে না।

জানাজার নামাজের নিয়ম

জানাজার নামাজের নিয়ত এবং দোয়া পড়ার নিয়ম, The intention of the Janazah Namaz and the rules of reciting prayers

জানাযার নামাজের দোয়া পড়ার আগে যেভাবে নিয়ত করতে হয় :

نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

নিয়তের দোয়ার উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহে তায়ালা আরবা আ তাকবীরাতে ছালাতিল জানাজাতে ফারজুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আললাহু আকবার।”

এখানে নিয়তে ‘লেহাযাল মাইয়্যেতে’ পুরুষ/ছেলে লাশ হলে পড়তে হবে, আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলতে হবে।

নিয়ত আরবিতে করতে না পারলে বাংলায় করলেও চলবে, এক্ষেত্রে যা বলতে হয়,

” আমি চার তাকবিরের সহিত ফরজে কিফায়া জানাজার নামাজ কিবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মরহুম ব্যক্তির (পুরুষ/মহিলার) জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।”

জানাজার নামাজে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও রাসূলের ওপর দরুদ পাঠ করা হয়। বাংলায় নিয়ত করলে তা বাংলায় বলে অথবা মনে মনে নিয়তে আনলেও চলবে।

নিয়তে তাকবীরে তাহরিমা অর্থাৎ, আল্লাহু আকবার বলার পর হাত তুলে তারপর অন্যান্য নামাজের মতো হাত বেঁধে নিতে হবে। হাত বেধে সানা পড়তে হবে।

জানাজার নামাজের নিয়ত এবং দোয়া পড়ার নিয়ম

হানাফি মাজহাবে জানাজার নিয়ম

প্রথম তকবিরের পরে: নামাজের সানা পড়া, “সোবাহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়াতাবারা কাছমুকা…”।

দ্বিতীয় তকবিরের পরে: দুরুদে ইব্রাহিম পড়া, “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিম…”।

তৃতীয় তকবিরের পর: নিচের দোয়াটা পড়া।

اَلَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا হে আল্লাহ আপনি মাফ করেন, আমাদের জীবিত আর মৃতদের
وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا যারা এখানে আছে, আর এখানে নেই তাদের
وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا ছোট আর বড়দের
وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا পুরুষ আর মহিলাদের
اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَه‘ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِْسْلاَمِ হে আল্লাহ আমাদের মাঝে যাদের আপনি জীবিত রাখেন, তাদের ইসলামের উপর জীবিত রাখেন
وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَ الاِْيْمَانِ আর যাদের আপনি মৃত্যু দেন, তাদের ঈমানের সাথে মৃত্যু দেন
بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ-
বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

এর পর চতুর্থ তকবিরের পর আর কোনো কিছু না পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।

জানাজার নামাজের নিয়ত এবং দোয়া পড়ার নিয়ম

আরবিতে সানা, Arbitey Sana

سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ

আরবিতে সানা

 উচ্চারণ:

“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।”

       সানা পড়ার পরে তাকবীর বলে দরুদ শরীফ পড়তে হবে যেটা সাধারণ নামাজে তাশাহুদের পর পড়া হয়।

দরুদ শরীফ:

للَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ

উচ্চারণ:

দরুদ শরীফ

“আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদি ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।”

দরুদ শরীফ পড়ার পর তৃতীয় তাকবীর আদায় করে জানাজার দোয়া পড়তে হয়।

জানাজার দোয়া, Janazah r Dua

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلحَيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الاْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَا ارْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণ:

“আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িইবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।”

তবে নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে,

اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وْاَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا

উচ্চারণ:

“আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।”

নাবালিকা মেয়ের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে,

اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًاوَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَمُشَفَّعَة

উচ্চারণ:

আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাও ওয়াজ আলহা লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ ফায়ান।”

এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে একটু নীরব থেকে ডানে এবং বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে। যদি কারো জানাজার নামাজে আসতে দেরি হয়ে যায়, তবে ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করতে হবে। সম্ভব হলে চার তাকবীর আদায় করে নিতে হবে, তা যদি সম্ভব না হয়, তবে ইমাম সাহবকে অনুসরণ করে সালাম ফিরিয়ে নিয়ে জানাজা নামাজ সম্পন্ন করবেন। জানাজা নামাজ জামাতে আদায় করতে হয়,তাই এটি কাজা পড়ার সুযোগ নেই।

জানাজার দোয়া

জানাজার নামাজের ফজিলত, Virtues of funeral prayers ( Janazah Namaz)

হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ (স.) জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন,

 ‘যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাজায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কিরাত, আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দুই কিরাত। জিজ্ঞাসা করা হলো দুই কিরাত কী? তিনি বললেন, দুটি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সওয়াব)।’ (সহিহ বুখারি: ১৩২৫)

জানাজায় উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে জীবিত ব্যক্তিদের ভেতর মৃত্যুর স্মরণ জাগ্রত হয়। আর মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে। বারা (রা.) বলেন, 

আমরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে এক জানাজায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি কবরের কিনারে বসে কাঁদলেন, এমনকি তাঁর চোখের পানিতে মাটি ভিজে গেল। অতঃপর তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা, তোমাদের অবস্থাও তার মতোই হবে, সুতরাং তোমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করো।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৯৫)

জানাজার নামাজের ফজিলত

জানাযার নামাজের নিয়ম সংক্ষেপে, The rules of janajah namaz in brief :

জানাযার নামাজের নিয়ম হলো:

  • মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে দাঁড়াতে হবে
  • নিয়ত করে চার তাকবিরের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে
  • প্রথম তাকবিরের পর সানা পড়তে হবে
  • দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ শরিফ পড়তে হবে
  • তৃতীয় তাকবিরের পর দোয়া পড়তে হবে
  • চতুর্থ তাকবির দিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে
  • জানাজার নামাজে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও রাসূলের ওপর দরুদ পাঠ করতে হবে
  • কাঁধ বা কানের লতি পর্যন্ত দু’হাত উত্তোলন করে আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাঁধতে হবে
  • অন্যান্য নামাজের মতো ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে হবে
  • জানাজার নামাজ ফরজে কিফায়া, অর্থাৎ সমাজের জন্য আবশ্যকীয় দায়িত্ব। কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে মুসলমান সমাজের পক্ষ থেকে জানাজার নামাজ আদায় করতে হবে।

জানাজার নামাজের ইমামতির নিয়ম, The rules of imamate of janajah namaz

জানাজার নামাজের ইমামতির নিয়মগুলি হলো:

  • জানাজার নামাজের ইমামতি করতে হলে, সুন্নত সম্পর্কে ভালো অবগত হতে হবে।
  • মসজিদে জানাজার নামাজ হলে, সেই মসজিদের ইমাম অথবা তার অনুমতিক্রমে যে কেউ ইমামতি করতে পারেন।
  • অসিয়ত করে গেলে, সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তি ইমামতি করতে পারেন।

জানাযার নামাজে ইমাম কথায় দাঁড়াবে ? Will the imam stand up for the funeral prayer?

জানাজার নামাজের ইমামের দাঁড়ানোর নিয়মগুলি হলো:

  • মৃত ব্যক্তি পুরুষ হলে, ইমাম শরীরের মাঝখানের বিপরীতে দাঁড়ানোর কথা।
  • মৃত ব্যক্তি মহিলা হলে, ইমাম কাঁধের বিপরীতে দাঁড়ানোর কথা।

জানাজায় নামাজ পড়ানোর হকদার কে ? / জানাজার নামাজ পড়ার দায়িত্ব কার ইমাম না কি অন্য জনের, Who is entitled to pray at the janazah?

মুসলমান সমাজের পক্ষ থেকে জানাজার নামাজ পড়ার দায়িত্ব সাধারণত মসজিদের ইমাম বা তার অনুমতিক্রমে অন্য কেউ পালন করেন। তবে, মৃতের আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার ইমাম উভয়েই উপস্থিত থাকলে, ইমাম যদি ইলম ও আমলে মৃতের আত্মীয়ের চেয়ে বেশি যোগ্য হন, তাহলে তিনিই জানাজার নামাজ পড়াবেন। প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবরাহিম আন-নাখায়ি (রহ.) বলেন, ‘জানাজার নামাজ পড়াবে মসজিদের ইমামরা।’

মহিলাদের জানাজার নামাজের নিয়ম, Rules for women’s janazah namaz

মহিলাদের জানাজার নামাজের নিয়ম হলো:

  • কফিনের মাঝ বরাবর দাঁড়াতে হবে
  • মৃত ব্যক্তির মাঝ বরাবর দাঁড়ানোতে কোনো দোষ নেই
  • জানাজার নামাজের নিয়ত করে চার তাকবিরের সহিত নামাজ আদায় করতে হবে
  • কাঁধ বা কানের লতি পর্যন্ত দু’হাত উত্তোলন করে আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাঁধতে হবে

সূরা ফাতিহা ছাড়া কি জানাজার নামাজ হবে? Can Janazah namaz be done without Surah Fatiha?

সূরা ফাতেহা ব্যতীত জানাযার ছালাত সুন্নাত মোতাবেক হবে না। কারণ সূরা ফাতিহা অন্যান্য ছালাতের ন্যায় জানাযার ছালাতেরও অন্যতম রুকন। কারণ সূরা ফাতিহা ব্যতীত ছালাত সিদ্ধ নয় (বুখারী হা/৭৫৬; মুসলিম হা/৩৯৪; মিশকাত হা/৮২২)।

গায়েবী জানাযা পড়া কি জায়েজ? Is it permissible to read Gayebi janazah?

মুসলিম আলেমদের অভিমত :

কিছু আলেমের মত হলো অমুসলিম ভূমিতে মৃত্যুবরণকারী মুসলিম, যার জানাজার নামাজ পড়া হয়নি, তার জন্য গায়েবানা জানাজা পড়া যাবে। ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম হাম্বল এই মত সমর্থন করেছেন। তবে ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালিক বলেছেন কোন অবস্থাতে গায়েবানা জানাজা পড়া যাবে না।

একাধিক জানাজা কি জায়েজ? Is multiple janaza permissible?

একাধিক মৃত ব্যক্তির জানাজা একসঙ্গে পড়া জায়েজ। তবে, প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা জানাজার নামাজ পড়াও উত্তম। বিশেষ কারণে, যেমন, জানাজা শেষে কিছু লোক উপস্থিত হলো, তাহলে এরা মৃতের উপর দাফনের পূর্বে বা পরে জানাযা পড়তে পারবে।

এক ফরজ একাধিকবার আদায় করা যায় না। তবে, কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে মুসলমান সমাজের পক্ষ থেকে অবশ্যই জানাজার নামাজ আদায় করতে হবে। কোনো এলাকা বা গোত্রের পক্ষ থেকে একজন আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।

জানাজার নামাজের পর লাশ দেখা যাবে কি? Can you see the body after the Janazah namaz?

জানাজার নামাজের পর লাশ দেখা যায়। ইসলামী শরিয়ায়, মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফন, জানাজা শেষে যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে কবরস্থ করা উচিত। তবে, বিশেষ কারণ থাকলে বিলম্ব করা যেতে পারে। শুধু চেহারা দেখার জন্য বিলম্ব করা উচিত নয়।

জানাজার নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি? How many and what is the faraz of Janazah namaz?

জানাজার নামাজের ফরজ কাজগুলি হলো: চারটি তাকবীর দেওয়া, সূরা ফাতিহা পাঠ করা, দরূদ পড়া, মাইয়্যেতর জন্য খালেস দিলে দুআ করা, সালাম ফেরানো।

ইসলামে নারীদের দাফন কে করতে পারে? Who can bury women in Islam?

ইসলামে, নারীদের দাফন আত্মীয় বা মাহরাম কিছু পুরুষ করতে পারেন। নারীদের দাফনের সময় কবর ঘিরে পর্দা ঝোলানো ফরজ।

নারীদের কাফন ও দাফনের বিষয়ে আরও কিছু তথ্য:

  • নারীদের কাফনের সুন্নত হলো লেফাফা, ইজার, কামিস, ওড়না, এবং সিনাবন্ধ (বক্ষবন্ধনী)।
  • কাফনের কাপড় সাদা হওয়া উত্তম।
  • জীবদ্দশায় নিজেই নিজের কাফনের কাপড় প্রস্তুত করে রাখতে পারে।
  • রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর লুঙ্গি দিয়ে তার কন্যা জয়নাব (রা.)-কে কাফন পরানো হয়েছিল।

শেষ কথা, Conclusion 

পবিত্রতা ছাড়া জানাজার নামাজ পড়া যায় না। এ নামাজ শুধু পুরুষদের জন্য আবশ্যক। নারীদের জন্য এতে অংশগ্রহণের বিধান নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুন্নাহসমর্থিত পদ্ধতিতে যথাযথ নিয়মে জানাজার নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Contents show

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts