ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় হল নামাজ। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো নামাজ। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কত রাকাত নামাজ পড়তে হয় ও সেগুলো কি কি? সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আজকের এই প্রতিবেদনটি শেষ অবধি পড়ুন।
নামাজের গুরুত্ব, Importance of Namaz :
পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ হলোঃ
- আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাস করা।
- নামাজ প্রতিষ্ঠা করা।
- যাকাত আদায় করা।
- হজ পালন করা।
- রোজা রাখা।
ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ নামাজ হল বেহেস্তের চাবি। প্রত্যেকটি মুসলিম নর-নারীর উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অর্থাৎ দিনের পাঁচটি নির্দিষ্ট সময়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের নামাজ আদায় করতে হয়।
কোন নামাজ কত রাকাত ? How many rakats are there in Namaz?
ইসলাম ধর্মের যেকোনো নামাজের প্রধান ধাপ গুলোকে বলে হয় রাকাত। নামাজগুলোর রাকাত নির্দিষ্ট করা আছে। নির্দিষ্ট সময়ে যে নামাজ যত রাকাত পথের নির্দেশনা দেওয়া সেই অনুযায়ী পাঠ করতে হয়।
নামাজ দুই রাকাত, তিন রাকাত, চার রাকাত হতে পারে। ইসলামের কোন ওয়াক্তের নামাজ কত রাকাত ও কি কি? যদি আপনারা সে সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে নিম্নের বর্ণনার মাধ্যমে জেনে রাখুন :
১) নামাজের মোট রাকাত সংখ্যা :
ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মোট রাকাত সংখ্যা হল ৪৮ রাকাত।
২) পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ ও রাকাত সংখ্যা :
- মুসলমানদের দিনের শুরু হয় ফজরের নামাজ দিয়ে। সুবহে সাদিক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত এই নামাজের ব্যপ্তিকাল। ফজরের নামাজ মোট চার রাকাত। উক্ত নামাজে সুন্নত দুই রাকাত, ফরজ দুই রাকাত।
- দ্বিতীয় নামাজ হল যোহরের নামাজ। বেলা দ্বিপ্রহর হতে “আসর ওয়াক্ত”-এর আগ পর্যন্ত এই নামাজের ব্যাপ্তি। এই নামাজ মোট ১২ রাকাত। এক্ষেত্রে প্রথমে সুন্নত চার রাকাত, ফরজ চার রাকাত, সুন্নতে মুয়াক্কাদা দুই রাকাত, নফল দুই রাকাত।
- আসরের নামাজ হল তৃতীয় নামাজ। এটি সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। উক্ত তৃতীয় ওয়াক্ত নামাজ মোট আট রাকাত। এই নামাজের প্রথমে সুন্নত চার রাকাত, পরে ফরজ চার রাকাত পাঠ করতে হয়।
- চতুর্থ হল মাগরিবের নামাজ। সূর্যাস্তের ঠিক পর পরই এই নামাজ আদায় করার সময় শুরু হয় এবং এর ব্যপ্তিকাল প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট। উক্ত চতুর্থ নামাজ মোট ৭ রাকাত। এই নামাজের প্রথমে ফরজ তিন রাকাত, সুন্নত দুই রাকাত, নফল দুই রাকাত।
- পাঁচ ওয়াক্তের পঞ্চম এবং শেষ নামাজ হল এশার নামাজ। “মাগরিব ওয়াক্ত” এর প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর আরম্ভ হয় “ইশা ওয়াক্ত” এবং এর ব্যপ্তি প্রায় “ফজর ওয়াক্ত”-এর আগ পর্যন্ত। উক্ত নামাজ মোট ১৭ রাকাত। এই নামাযে সুন্নত চার রাকাত, ফরজ চার রাকাত, সুন্নতে মুয়াক্কাদা দুই রাকাত, নফল দুই রাকাত, বিতর নামাজ তিন রাকাত, সর্বশেষ হালকি নফল দুই রাকাত।
অন্যান্য নামাজ, Some Other Namaz :
পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ ছাড়াও ইসলামে বিশেষ কিছু নামাজ রয়েছে, সেগুলি হল :
• জুমার নামাজ :
ইসলামের অন্যতম একটি নামাজ হল জুমার নামাজ বা শুক্রবারের সালাত। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামায়াতের সাথে সে দিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরযরূপে আদায় করে।
উক্ত নামাজের সময় :
- শুরু : দুপুর
- সমাপ্তি : বিকাল
- সংঘটন : সাপ্তাহিক
জুমার নামাজে দুই রাকাত ফরজ রয়েছে। এছাড়া ফরজ নামাজের পূর্বে চার রাকাত কাবলাল জুমা এবং পরে চার রাকাত বাদাল জুমা (সুন্নত নামাজ) আদায় করতে হয়।
কুরআনে জুমার নামাজের সময় হলে কাজ বন্ধ করে নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে।
• চাশতের নামাজ :
ফজর ও যোহরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ার জন্য নফল/ঐচ্ছিক নামাজ হল চাশতের নামাজ বা দোহার সালাত বা সালাতুদ দোহা।
হাদীসে বলা হয়েছে,
‘চাশতের নামাজ পড়া হবে যখন সূর্যের তাপ প্রখর হয়।’ (সহীহ্ মুসলিম, হাদীস : ৭৪৮)
সেই হিসেবে চাশতের নামাজ বা সালাতুদ্ দুহা আদায় করার উত্তম সময়টি হচ্ছে সূর্যোদয় এবং যোহর নামাযের মধ্যবর্তী সময়টা।
চাশতের নামাজ কমপক্ষে দুই রাকাত পড়তে হয়। এছাড়া চার, আট এবং বারো রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়।
হযরত আবু দারদা(রা:) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল(স:) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি চাশতের দু রাকআত নামায পড়বে সে উদাসীনদের তালিকাভুক্ত হবে না। যে ব্যক্তি চার রাকআত পড়বে সে আবেদগণের তালিকাভুক্ত হবে। যে ব্যক্তি ছয় রাকআত পড়বে তার জন্য ঐ দিনে (আল্লাহ তার অমঙ্গলের বিরুদ্ধে) যথেষ্ট হবেন। যে ব্যক্তি আট রাকআত পড়বে আল্লাহ তাকে একান্ত অনুগতদের তালিকাভুক্ত করবেন।
যে ব্যক্তি বারো রাকআত পড়বে তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি গৃহ্ নির্মাণ করবেন। এমন কোন দিন বা রাত্রি নেই যাতে আল্লাহর কোন অনুগ্রহ নেই; তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা দানস্বরুপ উক্ত অনুগ্রহ দান করে থাকেন। আর তাঁর যিক্রে প্রেরণা দান করা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে কোন বান্দার প্রতিই করেননি।” (ত্বাবারানীর কাবীর, সহিহ তারগিব ৬৭১ নং)
• ঈদের নামাজ :
মুসলমানরা মূলত তাদের দুটি ধর্মীয় উৎসবের দিন ঈদের নামাজ আদায় করে। ঈদের নামাজ একটি বিশেষ নামাজ, যা সালাতুল ঈদ (আরবি: صلاة العيد) এবং সালাতুল ঈদাইন (আরবি: صلاة العيدين ) নামেও পরিচিত।
ঈদের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজ সাধারণত খোলা মাঠে তথা ঈদগাহে পড়া হয়। চোখের দেখায় সূর্য দিগন্ত থেকে আনুমানিক দুই মিটার উচ্চতায় পৌঁছালে ঈদের নামাজ পড়া হয়।
জোহর নামাজের আগেই ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়। ঈদুল ফিতরের ২ রাকাত ওয়াজিব সালাত আদায় করতে হয়।
• তারাবিহ :
তারাবীহ বা কিয়ামুল লাইল হল রাতে আদায় করার এক বিশেষ সুন্নত নামাজ। মুসলিমগণ রমজান মাসব্যপী প্রতি রাতে এশার ফরজ নামাজের পর দীর্ঘ তিলাওয়াত সহকারে এই নামাজ পড়ে থাকেন।
উক্ত নামাজ পাঠ করতে ৩ রাকাত বিতর সহ ১১ রাকাত অথবা ২৩ রাকাত পড়তে প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট লাগে।
তবে তারাবিহের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ব্যাপক মতভেদ বিদ্যামান আছে। সালাফি ও আহলুল হাদিসদের মধ্যে ৮ রাকাত তারাবীহের প্রচলন দেখা যায়।
• ইসতিসকার নামাজ :
বৃষ্টির অনুরোধ করে আল্লাহর কাছে মুসলিমদের একটি প্রার্থনা হল ইসতিসকার নামাজ। মুসলিম কৃষি সমাজে, অনাবৃষ্টির মতো বিপর্যয়ের সময়ে বৃষ্টিপাতের জন্য আল্লাহকে রাজি-খুশি করার আশায় এই নামাজ পড়া হয়।
এই প্রার্থনা করার জন্য নির্ধারিত দিনে, মসজিদের ইমাম বিশ্বস্তদেরকে তার সাথে সম্মিলিতভাবে এই আচার পালনের জন্য একত্রিত করেন।
মসজিদের বাইরে খোলা জায়গায় এই প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নামাজ দু রাকাত। আযান ইকামতবিহীন প্রকাশ্য কিরাআতে উক্ত নামাজ আদায় করতে হয়।
শেষ কথা, Conclusion :
ইসলাম ধর্মে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্তের নাম ছাড়াও বিশেষ কিছু নামাজ রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে সে নামাজগুলির রাকাত সংখ্যাও নির্দেশ করা হয়েছে। নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে নির্দেশিত রাকাত সংখ্যা অনুযায়ী সালাত পথ করা বাঞ্ছনীয়। আশা করি উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনারা কোন নামাজ কয় রাকাত সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।