মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১১৪ তম এবং সর্বশেষ সূরা হল সূরা আন-নাস; সূরা আন-নাস মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে; যদিও কোন কোন বর্ণনায় একে মক্কায় অবতীর্ণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর আয়াত, অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৬ এবং রূকু, তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১।এর প্রতিটি আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের অনষ্টিতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। সূরা আন-নাস ও সূরা আল-ফালাককে একত্রে মু’আওবিযাতাইন (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু’টি সূরা) নামে উল্লেখ করা হয়।
হাদিসের একাধিক বর্ণনায় সুরাটির রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা।
সূরা আন-নাস এর আয়াত সংখ্যা, Number of Ayat of Surah An-Nas
সূরা আন-নাস আয়াত, অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৬ এবং রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১, এটি ৩০ পারা। এর ছয় আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য সংক্ষেপে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা হয়। মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী অসুস্থ অবস্থায় বা ঘুমের আগে এই সূরাটি পড়া সুন্নত।
সূরা আন-নাস এর নামকরণ, Naming of Surah An-Nas
ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস ভিন্ন সূরা হলেও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এতটাই গভীর ও উভয়ের বিষয়বস্তু পরস্পরের সাথে এত বেশি নিকট সম্পর্কিত যে এদেরকে একত্রে “মু’আওবিযাতাইন” (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু’টি সূরা) নামে ডাকা হয়; পাশাপাশি এই সূরা দ্বয় নাযিলও হয়েছে একই সাথে একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।
শানে নুযূল, Shan- E- Nuzool
‘আন-নাস’ শব্দের অর্থ মানব জাতি। সুরার প্রথম তিন আয়াতে আল্লাহ তায়ালার মাহাত্ম্য বর্ণিত আছে, আর পরের তিন আয়াতে জ্বিন ও মানুষরূপী শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে মহান আল্লাহর কাছ থেকে আশ্রয় গ্রহণের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুরা নাস পড়লে শয়তানের অনিষ্ট ও যাদু থেকে হেফাজতে থাকা যায়। ফজর আর মাগরিবে এই দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস প্রতিটি তিনবার করে পড়া সুন্নত।
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, জনৈক ইহু্দী রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর উপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহু্দী জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রসূলুল্লাহ্ লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গিরু ছিল। তিনি এই সূরা দুটি পড়ে ফুক দেওয়ায় গিরুগুলো সাথে সাথে খুলে যায় এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ্ – এর উপর জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি হযরত আয়েশা -কে বললেনঃ আমার রোগটা কি, আল্লাহ্ তা’আলা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দুব্যক্তি আমার কাছে আসল এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেল।
শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তাঁর অসুখটা কি? অন্যজন বললঃ ইনি জাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ কে জাদু করেছে? উত্তর হল, ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক লবীদ ইবনে আ’সাম জাদু করেছে।
আবার প্রশ্ন হলঃ কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, চিরুনীটি কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে ‘বির যরোয়ান’ কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ তিনি কূপে গেলেন এবং বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে এই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে আনলেন।
সূরা নাস এর আয়াতসমূহ ও অর্থ, Ayat of Surah Nas and their meaning
بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
- উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
- অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে।
قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ
- উচ্চারণ : ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস।
- অর্থ : বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার।
مَلِكِ ٱلنَّاسِ
- উচ্চারণ : মালিকিন্নাস।
- অর্থ : মানুষের অধিপতির।
إِلَـٰهِ ٱلنَّاسِ
- উচ্চারণ : ইলাহিন্নাস।
- অর্থ : মানুষের মা’বুদের।
مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ
- উচ্চারণ : মিন শাররীল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস।
- অর্থ : তার অনিষ্ট হবে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে।
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ
- উচ্চারণ : আল্লাযি ইউওয়াস ইসু ফী সুদুরিন্নাস।
- অর্থ : যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে।
مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ
- উচ্চারণ : মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।
- অর্থ : জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।
আরবি ভাষায় আয়াতগুলো একসাথে উচ্চারণ করলে :
- قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ
- مَلِكِ ٱلنَّاسِ
- إِلَـٰهِ ٱلنَّاسِ
- مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ
- الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ
- مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ
- ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস
- মালিকিন্নাস
- ইলাহিন্নাস
- মিন শাররীল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস
- আল্লাযি ইউওয়াস ইসু ফী সুদুরিন্নাস
- মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস
যার বাংলা অনুবাদ হবে : বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার, মানুষের অধিপতির, মানুষের মা’ বুদের, তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে,
জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে অর্থাৎ যারা অন্যায় ও খারাপ কাজকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে চোখের সামনে হাজির করে পথভ্রষ্ট এবং বিভ্রান্ত করার কাজে যারা অতুলনীয়। আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই শুধু তাদের অনিষ্ট হতে রক্ষা পেতে পারে।
সূরা আন নাস এ মহা মহিমান্বিত আল্লাহর তিনটি গুণ বিবৃত হয়েছে। অর্থাৎ তিনি হলেন পালনকর্তা, শাহানশাহ এবং মা’বুদ বা পূজনীয়। সব কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন, সবই তার মালিকানাধীন এবং সবাই তার আনুগত্য করছে।
সূরা আন-নাস নিয়ে হাদিস, Hadith about Surah An-Nas
আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মুসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। – (ইবনে-কাসীর)
সহীহ মুসলিমে ওকবা ইবনে আমের -এর বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ বলেন, তোমরা লক্ষ্য করেছ কি, অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না। অর্থাৎ ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস আয়াতসমূহ। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, তওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর এবং কোরআনেও অনুরূপ অন্য কোন সূরা নেই।
এক সফরে রসূলুল্লাহ ওকবা ইবনে আমেন-কে সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করিয়ে, অত:পর মাগরিবের নামাযে এ সূরাদ্বয়ই তেলাওয়াত করে বলেন, এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা শেষে বিছানা থেকে উঠার সময়ও পাঠ করো। অন্য এক হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন। – (আবু দাউদ, নাসায়ী)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব বর্ণনা করেন, এক রাত্রিতে বৃষ্টি ও ভীষণ অন্ধকার ছিল। আমরা রসূলুল্লাহ -কে খুঁজতে বের হলাম। যাখন তাকে পেলাম, তখন প্রথমেই তিনি বললেনঃ বল। আমি আরয করলাম, কি বলব? তিনি বললেনঃ সূরা এখলাস ও কূল আউযু সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো তিন বার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে।- (মাযহারী)
সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকের সাথে একজন করে শয়তান রয়েছে।” সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার সাথেও কি শয়তান রয়েছে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ্যা আমার সঙ্গেও শয়তান রয়েছে? কিন্তু আল্লাহ তাআলা ঐ শয়তানের মুকাবিলায় আমাকে সাহায্য করেছেন, কাজেই আমি নিরাপদ থাকি। সে আমাকে পুণ্য ও কল্যাণের শিক্ষা দেয়।”
সূরা নাসের ব্যাখা, Explanation of Surah An-Nas
‘নাস’ শব্দের অর্থ মানব জাতি। এ সূরার প্রথম তিন আয়াত-
কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিন্না-স,
মালিকিন্না-স,
ইলা-হিন্না-স
এ তিন আয়াতে আল্লাহর মাহাত্ন্য বর্ণিত হয়েছে এবং উনার কাছে আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে। এখানে আল্লাহকে বলা হয়েছে ‘মানুষের পালনকর্তা, মানুষের অধিপতি, মানুষের উপাস্য’।
আর পরের তিন আয়াত-
মিন শাররিল ওয়াছ ওয়া-ছিল খান্না-স,
আল্লাযী ইউওয়াছয়িছু ফী সুদূরিন্না-স,
মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।
এ তিন আয়াতে ঐ সকল খারাপ জ্বিন এবং খারাপ মানুষের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে যারা মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়।
এখানে জোরের সাথে বলা হয়েছে-
‘যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে।
যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে’।
এখানে মূলতঃ গোপন জাদু-টোনা বা বান মারার কথা বলা হয়েছে।
মহানবী একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। আল্লাহর নির্দেশে জিবরাঈল (আঃ) এসে মহানবী (সাঃ)-কে জানিয়ে দিলেন যে, এক ইহুদী তাকে জাদু করেছে এবং যে জিনিস দিয়ে জাদু করা হয়েছে তা একটি কুপের মধ্যে পাথরের নিচে আছে। নবী (সাঃ) লোক পাঠিয়ে সে জিনিসটি উদ্ধার করে আনলেন, যাতে একটি সুতায় কয়েকটি গিট দেয়া ছিল। তখন তিনি সূরা নাস ও ফালাক দুইটি একসঙ্গে পড়ে ফুক দেন এবং গিটগুলো সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বিছানা থেকে ওঠেন।
সুতরাং গোপন জাদু-টোনা থেকে আত্মরক্ষার জন্য এই সূরা পাঠ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু এই সূরার ভাবার্থের ভিতর আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লুকিয়ে আছে।
কিছু মানুষ কুমন্ত্রণা বা খারাপ পরামর্শের মাধ্যমে এক মানুষকে অন্য মানুষের সাথে অথবা এক দলকে অন্য দলের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত করিয়ে নিজেরা ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে মজা নেয় বা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। তাদের কুপরামর্শগুলো সহজ সরল মানুষের অন্তরে জাদু-টোনার মতই প্রভাব ফেলে তাদেরকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। এ সূরায় ঐ সকল খারাপ মানুষদের ব্যাপারেও খুব সাবধান থাকা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করার কথা রয়েছে।
আরো খোলাসা করে যদি বলা হয় বা এই সূরার মর্মার্থ একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়- যারা গোপনে একের কথা অন্যের কাছে লাগায় বা গোপনে অন্যের ক্ষতি করার বা অন্যের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে পরিবারে, সমাজে, গোত্রে বা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীতে সালিশদারের ভূমিকা পালন করে, নের্তৃত্ব- কর্তৃত্ব হাসিল করে এবং দুই পক্ষের মাঝখানে থেকে আর্থিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করে তাদের ব্যাপারেও সাবধান থাকার ইংগিত পাওয়া যায়। আর আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া মানে হচ্ছে যে কোন সমস্যায় কোন ষড়যন্ত্রকারীর পরামর্শ না শুনে আল্লাহর প্রেরিত বাণী আল কোরআনে এবং আল্লাহর প্রেরিত রাসুলের হাদিসে সমাধান খোঁজার নির্দেশ রয়েছে।
এখানে আল্লাহর তিনটি সিফাত ‘মানুষের পালনকর্তা, মানুষের অধিপতি, মানুষের উপাস্য’ এই কথাগুলোর মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে যে তোমরা যে খারাপ পরামর্শদাতাকে তোমাদের সমস্যা সমাধানের উপায় মনে করছ বা তার পরামর্শকে তোমাদের জন্য কল্যাণকর মনে করছ এবং তাকে ক্ষমতাবান মনে করছ আসলে সে নয় বরং তোমাদের পালনকর্তা, তোমাদের অধিপতি এবং তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন আল্লাহ। তিনিই সকল ক্ষমতার অধিকারী, তিনিই সকল সমস্যার সমাধান করতে পারেন। সুতরাং কুপরামর্শদাতার কাছে নয়, সাহায্য চাইতে হবে আল্লাহর কাছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে উত্তম বুঝ দান করুন। আমীন
সূরা নাস ফজিলত, Surah An-Nas Fazilat
➤ আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মিসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। – (ইবনে-কাসীর)
➤ সহীহ মুসলিমে ওকবা ইবনে আমের (রাঃ)- এর বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
তোমরা লক্ষ্য করেছ কি, অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ তা’আলা আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না। অর্থা ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং ক্বুল আউযু বিরাব্বিল নাস আয়াতসমূহ। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, তওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর এবং কোরআনেও অনুরূপ অন্য কোন সূরা নেই।
➤ এক সফরে রসূলুল্লাহ (সাঃ) ওকবা ইবনে আমেন (রাঃ)-কে সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করালেন, অত:পর মাগরিবের নামাযে এ সূরাদ্বয়ই তেলাওয়াত করে বললেনঃ এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা শেষে বিছানা থেকে উঠার সময়ও পাঠ করো।
➤ অন্য হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন। – (আবু দাউদ, নাসায়ী)
➤ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব (রাঃ) বর্ণনা করেন, এক রাত্রিতে বৃষ্টি ও ভীষণ অন্ধকার ছিল। আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে খুঁজতে বের হলাম। যখন তাকে পেলাম, তখন প্রথমেই তিনি বললেনঃ বল। আমি আরয করলাম, কি বলব? তিনি বললেনঃ সূরা এখলাস ও কূল আউযু সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো তিন বার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। – (মাযহারী)
সুবহানাল্লাহ, আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন সূরা আল-নাস এ অসংখ্য নেয়ামত এবং ফজিলত দিয়েছেন। আসুন সবাই ছোট এই সূরাকে গুরুত্বের সাথে আমল করি এবং শেয়ার করে অন্য ভাই বোনদেরকে তা আমল করার সুযোগ করে দেই।
পরিশেষে, To conclude
আশা করি উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনারা সকলে সূরা নাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকতে সুরা নাস-এর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমলগুরো বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন।