মহাগ্রন্থ আল কুরআন, যার প্রতি হরফে হরফে রয়েছে হিকমত তথা প্রজ্ঞাপূর্ণ নিদর্শন। কুরআনকে যেভাবেই তিলাওয়াত করা হোক না কেন, বিস্ময়ে ভরা এই অপার গ্রন্থ পাঠককে কখনও ত্যক্ত-বিরক্ত করে না বরং তিলাওয়াতে আরো আকষর্ণ বাড়িয়ে দেয়। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কোরআনের সূরা ‘সূরা আল-ফাতিহা নিয়ে আলোচনা করবো।
সূরা ফাতিহা কি নামে পরিচিত? What is the other name of Surah Fatiha?
আল-ফাতিহা আরও বেশ কয়েকটি নামেও পরিচিত, যেমন আল-হামদ (প্রশংসা), আস-সালাহ (প্রার্থনা), উম্ম আল-কিতাব (বইয়ের মা), উম্ম আল-কুরান (কোরানের মা) , সাব’আ মিন আল-মাথানি (সাত বার বার করা হয়েছে, কুরআন 15:87 থেকে), এবং আশ-শিফা’ (নিরাময়)।
সুরাতুল ফাতিহা কবে অবতীর্ণ হয়? When did Surah Fatiha come into existence?
অধিকাংশ ইসলামিক পণ্ডিতরা মনে করেন যে এটি মুহাম্মদের কর্মজীবনের প্রথম দিকে মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল।
সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত কোনটি? Which is the first Ayat of Surah Fatiha?
সূরা 1. আল্লাহর নামে, অসীম করুণাময় ও করুণাময়। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমস্ত জগতের পালনকর্তা। করুণাময়, করুণাময়।
সূরা ফাতিহাকে কুরআনের জননী বলা হয় কেন? Why Surah Fatiha is considered as the mother of Quran?
তাফসির কিতাবের শুরুতে, তার সহীহ, আল-বুখারী বলেছেন; “এটিকে উম্মে আল-কিতাব বলা হয়, কারণ এটি দিয়ে কুরআন শুরু হয় এবং এটি তেলাওয়াতের মাধ্যমে প্রার্থনা শুরু হয় ।” এটিকে উম্মুল কিতাব বলা হয়, কারণ এতে সমগ্র কুরআনের অর্থ রয়েছে।
সূরা ফাতিহা নামকরণ, Naming of the Surah
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, সূরাটির নাম ‘উম্মুল কিতাব’। সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কুরআন এজন্য বলা হয়েছে কারণ এটা দিয়েই কুরআন শুরু হয়েছে এবং এর মধ্যে কুরআনের সমস্ত ইলম বা জ্ঞান শামিল রয়েছে’। (কুরতুবী) সূরা ফাতিহার স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্যের আর একটি দিক এই যে, আলোচ্য সূরাটির গুরুত্ব মানব জীবনের সব দিকে এতই বেশী পরিব্যপ্ত যে, সম্মানিত তাফসীরকারগণ আলোচ্য সূরাটির প্রায় ৪২টি নাম দিয়েছেন, যে নামগুলো তাফসীর ইবনু কাসীর, ইবনু জারীর, রুহুল মায়ানী, তাফসীর কবীর, তাফসীর খাযিন, তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর, তাফসীরে কুরতুবীসহ নির্ভরযোগ্য তাফসিরের কিতাবসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখানে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
(১) سورة مفتاح القرآن কুরআনের কুঞ্জিকা, (২) سورة أم القرآن কুরআনের মা বা আসল, (৩) سورة الدعاء দোয়ার সূরা, (৪) سورة الشفاء রোগ মুক্তির সূরা, (৫) سورة الحمد প্রশংসার সূরা, (৬) أساس القرآن কুরআনের ভিত্তি, (৭) سورة الرحمة রাহমাতের সূরা, (৮) سورة البركة বারকাতের সূরা, (৯) سورة النعمة নিয়ামাতের সূরা, (১০) سورة العبادة ‘ইবাদাতের সূরা, (১১) سورة الهداية হিদায়াত প্রাপ্তির সূরা, (১২) سورة الإسةقامة দৃঢ়তার সূরা, (১৩) سورة الإسةعانة সাহায্য প্রার্থনার সূরা, (১৪) سورة الكافية অত্যধিক ও বিপুলতা দানকারী সূরা, (১৫) سورة الوافية পূর্ণত্ব প্রাপ্ত সূরা, (১৬) سورة الكنـز খণির সূরা (জ্ঞানের খনি, রাহমাত, বারাকাত, নি‘আমাত ও যাবতীয় সাফল্যের খণি বলে এ সূরাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে), (১৭) سورة الشكر শুকর করার সূরা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সূরা (১৮) سورة الصبر সবরের উৎসাহ দানকারী সূরা, (১৯) سورة التكرار বার বার পঠিতব্য সূরা, (২০) سورة التعلق مع الله আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপনের সূরা, (২১) سورة الصراط المستقيم সরল সঠিক পথ লাভের সূরা, (২২) سورة الربوبية প্রভুত্ব সনাক্ত করণের সূরা, (২৩) سورة الوحدانية আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের প্রতি স্বীকৃতি প্রকাশের সূরা, (২৪) سورة الاجةناب الغضب والضلالة আল্লাহর গযব ও গোমরাহি হতে আত্মরক্ষা করার সূরা, (২৫) سورة الصلاة সলাতে একান্তই পঠিতব্য সূরা।
সূরা ফাতিহার মর্যাদা, Status of Surah Fatiha
সূরা ফাতিহার প্রায় সকল নাম থেকেই এ সূরার মর্যাদার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যথা-
- ১. فاتحة الكتاب: এ নামকরণের কারণ হচ্ছে- এ সূরা দিয়ে কুরআন কারীম শিক্ষা ও নামাযের কিরাত শুরু করা হয় এবং প্রত্যেক কিতাবের শুরুতেই সূরা ফাতিহা দিয়ে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা হয়, যেমনিভাবে কুরআনের শুরুতেই সূরা ফাতিহা রয়েছে।
- ২. اُمُّ الْكِتَاب وَاُمُّ الْقُرْاٰن: যেহেতু এটি কুরআনের আসল এবং প্রত্যেক আসমানী কিতাবের আসল, কারণ এ সূরায় আল্লাহ তাআলার একত্ব, শেষ বিচারের দিনের কথা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে অথবা এ জন্যে যে, এ সূরা সকল আসমানী কিতাবের সার।
- ৩. سبع المثاني: সূরা ফাতিহাকে سبع المثاني বলা হয়, কারণ এ সূরাটি সাত আয়াত বিশিষ্ট। অধিকন্তু এ সূরা প্রত্যেক নামাযের মধ্যে অবশ্যই দুবার পড়তে হয় (অর্থাৎ নামাযের প্রথম দুই রাকাতে অবশ্যই পড়তে হয়) বা এ সূরার প্রথম অংশ বান্দাহ কর্তৃক আল্লাহর প্রশংসা আর শেষ অংশ বান্দাহর তরে আল্লাহর দান। ৪. وافية: এ শব্দের অর্থ পূর্ণ, যেহেতু নামাযের মধ্যে পূর্ণ সূরাটি পাঠ করা ওয়াজিব, এ সূরা ছাড়া অন্য সূরা পড়লে নামায পূর্ণ হবে না।
- ৫. الكافيه: এ শব্দের অর্থ হচ্ছে সম্পূরক, কারণ এ সূরা অন্য সূরার সম্পূরক হতে পারে কিন্তু অন্য সূরা এ সূরার সম্পূরক হতে পারে না।
- ৬. الشفاء والشافية: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সূরা ফাতিহা প্রত্যেক রোগের শিফা বা প্রতিষেধক। (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হা/২৩৭০)
- ৭. اساس: এ শব্দের বাংলা অর্থ হলো মূল ভিত্তি। যেহেতু এটি কুরআন পাকের প্রথম সূরা বা মূল বিষয়ের মতো বা এ সূরা সমস্ত ইবাদতের মূল। ইমাম শা’বী (র.) বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে শুনেছি, তিনি বলতেন, পবিত্র কুরআন হচ্ছে অন্যান্য সকল কিতাবের اساس বা ভিত্তি, আর কুরআনের মূল হচ্ছে ফাতিহাতুল কিতাব অর্থাৎ সূরা ফাতিহা।
- ৮. الصلوة: নবী করীম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, الصلوة অর্থাৎ সূরা ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দাহর মধ্যে দু’অংশে বিভক্ত করেছি।’ (সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত, বাব: উজুবু কিরাআতিল ফাতিহা ফি কুল্লি রাকাআহ..) কোনো বস্তুর অধিকাংশের ভিত্তিতে তার নাম রাখার রীতি থেকে এ নাম রাখা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব।
- ৯. سورة تعليم المسئلة: যেহেতু এ সূরার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাহকে কীভাবে চাইতে হয় সে পদ্ধতি শিক্ষা প্রদান করেছেন, এ সূরা প্রথমে আল্লাহ তাআলার প্রশংসার মাধ্যমে শুরু করা হয়েছে। তারপর দুআর মধ্যে ইখলাস অর্থাৎ লোক দেখানো বা রিয়া থেকে মুক্ত রাখার শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।
- ১০. سورة الكنز: হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, সূরা ফাতিহা আরশে আযীমের ভা-র থেকে মক্কা শরীফে নাযিল করা হয়।
হাদীস থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠে, সূরা ফাতিহা মক্কী সূরা। যারা এ সূরাকে মাদানী সূরা বলেন, তাদের কথার সামঞ্জস্য বিধান করা যায় এভাবে, এ সূরা দু’বার অবতীর্ণ হয়।
আল ফাতিহা দিনে কতবার পড়তে হয়? When to recite Surah Fatiha?
মুসলমানরা দিনে ১৭ বার ফাতিহা পড়ে।
সূরা ফাতিহা কি মাক্কি না মাদনি? Whether Surah Fatiha is from Mecca or Madina?
একইভাবে, এটিও দুবার প্রকাশিত হয়েছিল; একটি মক্কায় এবং অন্যটি মদীনায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে, সূরা আল-ফাতিহাকে কুরআনের ‘মাক্কি’ এবং ‘মাদানী’ উভয় অধ্যায় হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
সূরা ফাতিহার অনুবাদ, Translation of Surah
- (১) اَلْحَمْدُ ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ – اَلْ অর্থ যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুশীর সময় বলতেন, الْحَمْدُ ِللهِ الَّذِى بِنِعْمَتِهِ تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যার অনুগ্রহে সকল শুভ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে’। আবার কষ্টের সময় বলতেন الْحَمْدُ ِللهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ ‘সর্বাবস্থায় আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা’। (ইবনু মাজাহ)
- (২) الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ অর্থাৎ যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। ইমাম কুরতুবী বলেন, পূর্বের আয়াতে ‘রববুল আলামীন’ সমগ্র জাহানের প্রতিপালক বলে আল্লাহ যে ভীতিকর বিশেষণ প্রয়োগ করেছেন, পরবর্তী আয়াতে ‘রহমান ও রহীম’ বলে স্বীয় ‘দয়া’ গুণের প্রকাশ ঘটিয়ে উভয় গুণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছেন ও মুমিনকে আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ না হওয়ার জন্য উৎসাহ দান করেছেন।
- (৩) مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ অর্থাৎ যিনি বিচার দিবসের মালিক। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদেরকে একথা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, সৃষ্টি জগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল কিছুর চিরন্তন মালিকানা তাঁর হাতে।
- (৪)إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ অর্থাৎ আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। আল্লাহর আদেশ পালন ও নিষেধ বর্জনের মাধ্যমে তাঁর প্রতি একনিষ্ঠ ভালবাসা, ভীতি ও আনুগত্য পোষণ করাকে ইবাদত বলা হয়। ইবাদত ত্রুটিপূর্ণ হলে এবং তাওয়াক্কুলের মধ্যে খুলূছিয়াতের অভাব থাকলে বান্দার কামনা ও বাসনা পূরণ নাও হতে পারে।
- (৫) اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ অর্থাৎ আমাদেরকে সরল পথ দেখাও। মানুষ যেখানে যে অবস্থায় থাকুক না কেন, সর্বদা পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিসে প্রদত্ত আল্লাহর হেদায়াত সমূহ অনুসরণে সিরাতে মুস্তাক্বিমের সরলপথ ধরে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পানে, জান্নাত লাভের বাসনা নিয়ে, এটাই হলো অত্র আয়াতের প্রকৃত তাৎপর্য।
- (৬) صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ অর্থাৎ সে সব লোকের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। আল্লাহ যাদেরকে পুরস্কৃত করবেন, তা কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তারা হলেন নবীগণ, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল বান্দাগণ’ (সূরা আন-নিসা : আয়াত ৬৯)
- (৭) غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّيْنَ অর্থাৎ তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব তথা অভিশাপ নাজিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। এই আয়াতে বর্ণিত ‘মাগদুব’ হলো ইহুদিরা এবং যুগে যুগে ঐসব লোকেরা, যারা ইহুদিদের মত হক বা সত্য জেনেও আল্লাহর বিধানের উপর আমল করে না। ‘দা-ল্লিন’ হলো নাছারাগণ এবং যুগে যুগে ঐসব লোক, যারা নাছারাদের মত মূর্খতাবশত হক বা সত্যবিরোধী আমল করে। মানুষ হক প্রত্যাখ্যান করে মূলতঃ হঠকারিতা ও অজ্ঞতার কারণে। দু’টির মধ্যে কঠিনতর হ’ল হঠকারিতার দোষ, যে কারণে ইহুদিরা স্থায়ীভাবে অভিশপ্ত হয়েছে।
সূরা ফাতিহার বিষয়বস্তু, Subject matter of Surah Fatiha
কোরআনের সূরা ফাতিহার মূল বিষয়বস্তু হলো দোয়া বা প্রার্থনা। তাই এই সূরার অন্যতম নাম হলো ‘সূরাতুদ দোয়া’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করন ‘শ্রেষ্ঠ জিকির হলো- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো- ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বা সূরা ফাতিহা’। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত) অর্থাৎ মহাগ্রন্থ আল-কুরআন থেকে ফায়েদা পেতে হলে তাকে অবশ্যই উক্ত নিয়তে আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করতে হবে।
সূরাতুল ফাতিহা জ্ঞান লাভের, হিদায়াত গ্রহণের জন্য প্রতিটি মানুষের পরিবার, দেশ, জাতি তথা সারা বিশ্ববাসীর জন্য অতীব কল্যাণের এক মহাসাগর স্বরূপ। উক্ত কল্যাণের এই অথৈ সাগর হতে স্বীয় আগ্রহে তাড়িত হয়ে এক সার্বিক পথ নির্দেশনা গ্রহণ করতে সমগ্র মানব জাতি উন্মুখ, তাই উক্ত সূরাখানি মহাপবিত্র কুরআনের ভূমিকা হিসেবে কুরআনের শুরুতেই সন্নিবেশ করা হয়েছে।
সুতরাং এর গভীর ও তাত্ত্বিক আলোচনা করতে গিয়ে তাফসীরকারগণ বলেছেন- মানবজাতির হিদায়াতের জন্য কেবল এই একটি মাত্র সূরাই যথেষ্ট, যদি সে নিরপেক্ষ অনাবিল মন মানসিকতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে।
সূরা ফাতিহার ফজিলত: Fazilat of Surah Fatiha
হজরত আলী রা: বলেছেন, কোন বিপদে পতিত ব্যক্তি এক হাজার বার সূরা ফাতিহা পাঠ করলে ওই ব্যক্তির আর বিপদ থাকতে পারে না। হজরত ইমাম জাফর সাদেক রা: বলেছেন, ‘৪১ বার সূরা ফাতিহা পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিয়ে কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে খাওয়ালে অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যাবে’। (তাওয়ারিখে মদিনা)।
সুরা ফাতিহা কি সকল রোগের ঔষধ?
মুহাম্মদ (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, “জাবির, আমি কি এই সূরা সম্পর্কে কিছু বলতে পারি?” জাবির জবাব দিলেন, “হ্যাঁ, এবং হে আল্লাহর নবী আমার পিতা-মাতা আপনার উপর বন্দিত্বমোচন করতে পারেন।” মুহাম্মদ বলেছিলেন, “এটি (সূরা আল-ফাতিহা) মৃত্যু ব্যতীত প্রতিটি অসুস্থতার নিরাময়।”
সুরা ফাতিহার আমল
সুরা ফাতিহাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র রোগের মহৌষধ। বহু হাদিসে সুরা ফাতিহার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজরত জাফর সাদেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, সুরা ফাতেহা ৪০ বার পাঠ করে পানির ওপর দম করে কোনো জ্বরে আক্রন্ত লোকের মুখমণ্ডলে ছিঁটিয়ে দিলে, এর বরকতে জ্বর দূরীভূত হয়ে যাবে।
সূরা ফাতিহা কতটুকু শক্তিশালী?
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যে সূরা আল ফাতিহা কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা এবং এটিকে “সাতটি বার বার বার করা আয়াত” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা যায় যে সূরা আল-ফাতিহা তেলাওয়াতকারীর জন্য প্রচুর আধ্যাত্মিক উপকারিতা এবং সওয়াব বহন করে।
শেষ কথা, Conclusion
আলোচ্য সূরাটি আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠ দান ও অপূর্ব নিয়ামাত। আল্লাহ যেন এ সূরার পরিপূর্ণ ফায়েদা মানবজাতিকে অর্জনের তাওফিক দান করেন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন।