পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে, Who is the best person in the world ? Details In Bengali

পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে

 পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ ছিলেন ইসলামের সকলের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যার শরীরের ঘাম থেকে আতর তৈরি করা হতো। যিনি ছিলেন নিষ্পাপ ও ফুলের মত পবিত্র।

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে , Who is Hazrat Muhammad ?

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন ইসলামের সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তিনি আরবের একজন ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে, নবী হলেন আল্লাহ তাআলার মনোনীত এমন বান্দা, যিনি তাঁর পূর্ববর্তী নবীর কিতাব ও শরীআতের অনুসরণ করবেন।

মুসলমানদের কাছে পৃথিবীর মহামানব হলেন নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি একাধারে একজন মহান ধর্মপ্রচারক, রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ, সমাজ সংস্কারক, এবং মানবতাবাদী ছিলেন।

ইসলামি সূত্র মতে, তিনি হলেন ঐশ্বরিকভাবে প্রেরিত নবী ও রাসূল তথা “আল্লাহর বার্তাবাহক”, যার উপর ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কুরআন অবতীর্ণ হয়। বিশ্বাস অনুযায়ী, মহাম্মদ একেশ্বরবাদী শিক্ষা প্রচার করার জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন।

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তথ্য, Information about Hazrat Muhammad :

১) নবীর জন্ম :

মুহাম্মাদ বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান মক্কার মসজিদ আল-হারাম নিকটস্থ একটি গৃহে, যা আজ বাইতুল মাওলিদ (অর্থ. ‘জন্মস্থান’) নামে পরিচিত। প্রচলিত ধারণা মতে, তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট বা আরবি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন।

২) নবীর মৃত্যু :

৬২ বছর বয়সে ৮ জুন ৬৩২, ১২ রবিউল আউয়াল, ১১ হিজরি; ইয়াসরিব (মদিনা), হেজাজ, আরব উপদ্বীপে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর কারণ ছিল শারীরিক অসুস্থতা (প্রবল জ্বর)।

৩) সমাধি :

সৌদি আরবের মদিনায়, মসজিদে নববির, সবুজ গম্বুজের নিচের সমাধিক্ষেত্র হল ইসলামের সর্বশেষ নবীর।

৪) নবী হযরত মুহাম্মাদের অন্যান্য নাম :

আহমদ, আবুল কাসিম, রাসুল, নবি।

৫) নবী হযরত মুহাম্মাদের দাম্পত্য সঙ্গী :

মুহাম্মাদের দাম্পত্য সঙ্গী
  • খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (৫৯৫–৬১৯)
  • সাওদা বিনতে জামআ (৬১৯–৬৩২)
  • আয়িশা (৬১৯–৬৩২)
  • হাফসা বিনতে উমর (৬২৪–৬৩২)
  • জয়নব বিনতে খুযায়মা (৬২৫–৬২৭)
  • উম্মে সালামা হিন্দ বিনতু আবি উমাইয়া (৬২৯–৬৩২)
  • জয়নব বিনতে জাহশ (৬২৭–৬৩২)
  • জুওয়াইরিয়া বিনতে আল-হারিস (৬২৮–৬৩২)
  • রামালাহ বিনতে আবি সুফিয়ান (৬২৮–৬৩২)
  • রায়হানা বিনতে জায়েদ (৬২৯–৬৩১)
  • সাফিয়া বিনতে হুওয়াই (৬২৯–৬৩২)
  • মায়মুনা বিনতে আল-হারিস (৬৩০–৬৩২)
  • মারিয়া আল-কিবতিয়া (৬৩০–৬৩২)

৬) নবী হযরত মুহাম্মাদের সন্তানদের নাম :

  • কাসিম
  • আবদুল্লাহ
  • ইবরাহিম
  • জয়নব
  • রুকাইয়াহ
  • উম্মে কুলসুম
  • ফাতিমা

৭) নবী হযরত মুহাম্মাদের পিতা-মাতার নাম :

  • আব্দুল্লাহ (পিতা)
  • আমিনা (মাতা)

মুহাম্মাদের নবুয়ত প্রাপ্তি, Prophethood of Muhammad :

ইসলামিক তথ্যসূত্রানুসারে নবি মুহাম্মাদ চল্লিশ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন, অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা তাঁর কাছে বাণী প্রেরণ করেন। এক হাদিস অনুসারে, নবী মুহাম্মাদ সত্য দর্শনের মাধ্যমে ওহী লাভ করেছিলেন।

ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর মক্কার অদূরে হেরা গুহায় মুহাম্মাদ প্রায়ই ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন। তাঁকে নিয়মিত খাবার দিয়ে আসতেন তাঁর স্ত্রী খাদিজা।

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, একদিন ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিবরাঈল তাঁর কাছে আল্লাহ প্রেরিত বাণী নিয়ে আসেন এবং নিম্নে বর্ণিত পঙ্‌ক্তি কয়টি পড়তে বলেন:

“পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিণ্ড থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।”
মুহাম্মাদ

উত্তরে মুহাম্মাদ জানান যে তিনি পড়তে জানেন না, এতে জিবরাঈল তাঁকে তিন বার জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগ করেন, এর পর মুহাম্মাদ পঙ্‌ক্তিটি পড়তে সমর্থ হন। মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী এটিই কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; অর্থাৎ সূরা আলাক্বের প্রথম পাঁচ আয়াত।

প্রথম বাণী লাভের পর মুহাম্মাদ ভীত হয়ে পড়েন এবং কাঁপতে কাঁপতে নিজ গৃহে প্রবেশ করে কম্বল গায়ে জড়িয়ে নেন। স্ত্রী খাদিজাকে এই ঘটনা প্রকাশ করলে, সে মুহাম্মাদের সকল কথা বিশ্বাস করেন এবং তাকে নবি হিসেবে মেনে নেন। মুহাম্মাদকে নিয়ে খাদিজা নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফলের কাছে যান। নওফল তাকে শেষ নবি হিসেবে আখ্যায়িত করে।

তারপর তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য। একটি লম্বা বিরতির পর দ্বিতীয় বারের মতো স্রষ্টার বাণী আসে। এর পর থেকে গোপনে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন মুহাম্মাদ।

সংস্কারক হিসেবে নবী মুহাম্মাদ, Prophet Muhammad as Reformer :

  • উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াট মনে করেন যে, মুহাম্মাদের জন্য ধর্ম ব্যক্তিগত বা একক বিষয় ছিল না, তিনি বলেন, “এটি তাঁর ব্যক্তিত্ব পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ, যার মাঝে তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি ধর্মীয় ও বুদ্ধিগত বিষয়ের পাশাপাশি সমসাময়িক মক্কার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপের দিকেও খেয়াল রেখেছিলেন।”
  • বার্নার্ড লুইস এর মতে, ইসলামে – মদিনায় রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মুহাম্মাদ এবং মক্কায় বিদ্রোহী হিসেবে মুহাম্মাদ, এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রথা রয়েছে। লুইস নতুন সমাজব্যবস্থায় প্রবর্তিত হওয়ার সময়কে ইসলামের বড় ধরনের পরিবর্তন বলে মনে করতেন, যা অনেকটা বিপ্লবের মত।

ঐতিহাসিকগণ সাধারণভাবে একটা বিষয় নিয়ে সম্মত যে, আরব সমাজে সামাজিক নিরাপত্তা, পারিবারিক কাঠামো, দাসত্ব এবং নারী ও শিশুদের অধিকারের মতো ক্ষেত্রে হওয়া ইসলামি সামাজিক পরিবর্তনগুলো ইতিবাচকভাবে আরব সমাজের সংস্কার ঘটিয়েছিল।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, লুইসের মতে,

‘ইসলাম কেবল সম্ভ্রান্তশ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নাগরিক সুযোগ-সুবিধার সমালোচনা করা থেকে শুরু করে যাজকতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটায় এবং একটি ধীশক্তিভিত্তিক পেশাগত ব্যবস্থার বিধি পরিগ্রহ করে।’
পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে

পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে, Who is the best person in the world ?

বিখ্যাত লেখক মাইকেল হার্টসের লেখা ‘বিশ্ব সেরা ১০০ মনীষী’ গ্রন্থে প্রথম স্থানেই রয়েছে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নাম। বইটি ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় এবং বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়।

অন্যদিকে গুগলে যদি কেউ best man, best human, best human in the world,  ‘who is the best man in the world’- ইত্যাদি  লিখে সার্চ করে তবে প্রথমেই চলে আসে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নাম।

গুগলের এ তথ্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘Best Man In The World ’Prophet Muhammad’. অর্থাৎ ‘নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিশ্বের সেরা মহামানব’  ইত্যাদি হ্যাশট্যাগে ভাইরাল হয়েছে।

মুহাম্মাদের বাণীর প্রভাব, The effect of Muhammad’s words :

 মুহাম্মাদের বাণী আরব উপদ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রার নৈতিকতা ও সমাজকে রুপান্তরিত করেছিল; সমাজ আত্নপরিচয়, বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মূল্যবোধের শ্রেণিবিন্যাস্যের দিকে মনোনিবেশ করেছিল।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, একটা সময় আরবজাহান ছিল ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত। আল্লাহকে তারা ভুলে গিয়েছিল এবং নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সর্বত্র দেখা দিয়েছিল। মারামারি আর হানাহানিতে লিপ্ত ছিল মানুষ। অনেকে আবার মূর্তিপূজাও করত।  এ যুগকে বলা হয় ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’। 

এই যুগ এবং অপকর্ম থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে, তাদের আলোর পথ দেখাতে আল্লাহতায়ালা মুহাম্মদ (সা.)-কে এ পৃথিবীতে পাঠান। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবী সৃষ্টি করতেন না।’ 

শেষ কথা, Conclusion :

ইসলাম ধর্মে সর্বশেষ তথা শ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে পরিচিত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মুসলমানরা নবীর বাণী সর্বদা অনুসরণ করে থাকেন। তাদের বিশ্বাস যে নবীর বাণী অনুসরণের মধ্য দিয়ে তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবে।

Frequently Asked Questions :

হযরত মুহাম্মাদ কে?

ইসলামের সর্বশেষ নবী ও রাসূল।

নবী হযরত মুহাম্মাদের অন্যান্য নাম কি?

আহমদ, আবুল কাসিম, রাসুল, নবি।

হযরত মুহাম্মাদ কবে জন্মগ্রহণ করেন ?

৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট বা আরবি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts