মাত্র ২৫-এ প্রাণ কাড়ল হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস! জানেন এই রোগের উপসর্গগুলো?

হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের

জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দিলীপ ঘোষের স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারের একমাত্র পুত্র সৃঞ্জয় দাশগুপ্ত ওরফে প্রীতমের আকস্মিক প্রয়াণ স্তম্ভিত করে দিয়েছে সকলকে।

প্রথমে আত্মহত্যার কথা শোনা গেলেও, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে এসেছে এক ভয়ঙ্কর রোগের নাম – হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস। মাত্র ২৬ বছর বয়সে এই প্রাণঘাতী রোগ কেড়ে নিল একটি তরতাজা জীবন।

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকেই সাধারণ মানুষের মনে দানা বেঁধেছে আতঙ্ক – এই হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস আসলে কী? কেন হয় এই রোগ? এর উপসর্গগুলোই বা কী? আদৌ কি এর কোনো চিকিৎসা আছে?

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস হল অগ্ন্যাশয়ের (Pancreas) এক মারাত্মক প্রদাহ। এই রোগে অগ্ন্যাশয়ের ভিতরে বা চারপাশে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

কী কারণে শরীরে বাসা বাঁধে এই নীরব ঘাতক?

চিকিৎসকদের মতে, হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল অতিরিক্ত মদ্যপান। তবে শুধু তাই নয়, পিত্তথলিতে পাথর জমা হওয়া, এমনকি জিনগত কারণও এই রোগের জন্ম দিতে পারে।

এছাড়াও, কিছু বিশেষ ওষুধ এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। দিলীপ ঘোষের সৎ ছেলের মৃত্যুর পর যেভাবে তিনি ‘ড্রাগসের’ কথা উল্লেখ করেছেন, তাতে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, হয়তো নেশার দ্রব্যও এই রোগের কারণ হতে পারে।

হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের ভয়ঙ্কর উপসর্গগুলো চিনে রাখুন:

এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলি চিনতে পারা অত্যন্ত জরুরি, কারণ সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রধান উপসর্গগুলি হল:

  • পেটের উপরের দিকে তীব্র ও অসহ্য যন্ত্রণা।
  • এই ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া।
  • পেটে ফোলাভাব বা গ্যাসের সমস্যা।
  • কিছু ক্ষেত্রে রক্তবমিও হতে পারে।

চিকিৎসকরা আরও জানাচ্ছেন যে, হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস শুধু অগ্ন্যাশয় নয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

প্রীতমের ক্ষেত্রেও তেমনটাই দেখা গিয়েছিল – তার হার্টের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় ছিল এবং কিডনি ও লিভারের আকারও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল।

হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের ভয়ঙ্কর উপসর্গ

হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের চিকিৎসা:

এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত, হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের রোগীকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার পদ্ধতি রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে। তীব্র ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যদি কোনো সংক্রমণ থাকে, তবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।

পাশাপাশি রোগীকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়াও জরুরি। কিছু জটিল ক্ষেত্রে, সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে, যেমন – পিত্তথলির পাথর অপসারণ বা অগ্ন্যাশয়ের কোনো ক্ষতিগ্রস্ত অংশ বাদ দেওয়া।

যদি আপনার বা আপনার পরিচিত কারো পেটে তীব্র ব্যথা এবং উপরে উল্লেখ করা অন্য কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে এক মুহূর্তও দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

মনে রাখবেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে অনেক ক্ষেত্রেই এই মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। একটি তরতাজা প্রাণের অকালমৃত্যু যেন আর না ঘটে, সেই বিষয়ে আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে।

RIma Sinha

Rima Sinha is a professional journalist and writer with a strong academic background in media and communication. She holds a Bachelor of Arts from Tripura University and a Master’s degree in Journalism and Mass Communication from Chandigarh University. With experience in reporting, feature writing, and digital content creation, Rima focuses on delivering accurate and engaging news stories to Bengali readers. Her commitment to ethical journalism and storytelling makes her a trusted voice in the field.

Recent Posts