ভালোবাসা বলতে একটি তীব্র আকর্ষণ এবং মানসিক সংযুক্তির অনুভূতিকে বোঝায়। ভালোবাসাকে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয়ই মনে করা হয়। এর গুণগুলো মানুষের উদারতা, সহানুভূতি এবং স্নেহের প্রতিনিধিত্ব করে। ভালোবাসার কবিতা বলতে সেই কবিতাগুলোকে বুঝায় যেসব কবিতায় অন্তর্নিহিত থাকে মানুষের প্রেম ভালোবাসার আবেগ, অনুভুতি, বিরহ। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ভালোবাসার কিছু কবিতা তুলে ধরবো।
আধুনিক কবিদের রচিত ভালোবাসার কিছু কবিতা, Some love poems written by modern poets :
প্রেমহীন ভালবাসা
প্রেমহীন ভালবাসা সুখের আশ্বাসে
দীর্ঘ সংগমে রাত্রি জাগরণ শেষে
ক্লান্ত আঁখি খুঁজে ফেরে আবারও সুখের প্রদীপ
হৃদয়ে প্রেম নেই শুধুই ভালবাসা,
ক্ষণিকের জ্বালা-দ্বীপ।
প্রেম হীন দীর্ঘ রজনি চাই না,
চাই না চোখ ধাঁধানো আলোর ঝিলিক
স্বচ্ছ স্রোতস্বিনী জলের ন্যায় অবগাহনের জল চাই,
হোক নিভু নিভু ছোট্ট প্রেমের প্রদীপ
হোক না কয়েক পলক হোক কিছু সময়
তবুও প্রেম থাকুক বেঁচে
লোম ক‚পে ছুঁয়ে যাওয়া ছোট্ট প্রহর
এতটুকুই চাই, শুধু সুখকে যেচে।।
চিঠিটি আর দেয়া হয়নি
এক ফালি সোনা রোদ্দুর বিকেলে,
কখনো বা রাত্রি নিশীথে, কিংবা সোনালি ভোরে
অনেক কষ্টে লেখা আমার ‘শ পাতার চিঠি।
আর পাঠানো হয়নি……….।
পোস্ট অফিস নেই, নেই হলুদ রংয়ের সেই খাম,
ধুলা, মরিচা পড়া ডাক বাক্স গুলি
উঠে গেছে বহু আগেই,
ডাক পিয়নের ঘণ্টা ধ্বনি আর শুনি না।
চিঠিটি পাঠানোর তবুও চেষ্টা করেছি।
গলির রাস্তার শেষ মাথায় একখানা ভাঙ্গা ঘরে,
ঝিমোচ্ছে নবারুন মাস্টার…….. চিঠির অভাবে।
আমাকে দেখে সে তো মহা খুশি
কিন্তু আমার খুশি আর থাকেনি । কারণ
কোথায় পাঠাব চিঠি? আধুনিকতার ভিড়ে
তার ঠিকানাই যে নেয়া হয়নি আমার।
ভালবাসার সরল সংজ্ঞা
ভালবাসা। এ তো আমার বেঁচে থাকার প্রাণ।
আমার কাছে ভালবাসা একটা সাদা ক্যানভাস।
যখন যার সাথে প্রেম হয় তার ছবি আকি।
শিশু কালে মায়ের মুখ, বাবার কনিষ্ঠ আঙুল,
শৈশব কৈশোরে লাল ঘুড়ি, পেয়ারা গাছের ডাংগুলি,
পঁচিশ পয়সার আইসক্রিম, যৌবনে মেঘ বালিকা,
পরিণত বয়সে নব জাতকের মুখ, এরকম অনেক ছবি এঁকেছি।
এখন ও একে চলছি যাদের প্রেমে ডুবে আছি তাদের অবয়ব।
প্রিয় বন্ধু,সাদা মেঘ, নীল জোছনা কিংবা গহিন বনে গাছের ছায়া ।
বেঁচে আছি ভালবাসায়। বেঁচে আছি ভালবেসে,
বেঁচে আছি ভালবাসার আশায়, আর এ ভাবেই বেঁচে থাকি প্রতিদিন।
তোমাকে খুঁজছি
তোমাকে খুঁজছি জলে স্থলে,
তোমাকে খুঁজছি বনে।
তোমাকে খুঁজছি হৃদয় তলে,
খুঁজছি গহিন মনে।।
তোমাকে খুঁজছি সকাল সাজে,
তোমাকে খুঁজছি রাতে।
তোমাকে খুঁজছি তারার ভিড়ে,
কিংবা চাদের সাথে।।
তোমাকে খুঁজছি পুর্নিমাতে,
কিংবা অমাবস্যায়।
তোমাকে খুঁজছি শুক তারাতে,
কিংবা সন্ধ্যা তারায়।
তোমাকে খুঁজছি শীতের রাতে,
লেপ তোষকের ভিড়ে।
তোমাকে খুঁজছি গরম দিনে ,
তাল পাখার বাতাসে।।
তোমাকে খুঁজছি জলে স্থলে,
তোমাকে খুঁজছি বনে।
তোমাকে খুঁজছি হৃদয় তলে,
খুঁজছি গহিন মনে।।
তীব্র ভালোবাসা
চেয়ে আছি আমি দূর আকাশে, রাতের তারা দেখি
তুমি ছাড়া এ জীবনটা আমার শুধুই দিশেহারা।
আমাকে তুমি যতই দূরে রাখো তবুও কাছে আসবো,
কষ্ট তুমি যতই দেবে, আমায় তোমাতেই ভালোবাসবো।
চেয়ে দেখো দূর আকাশে চলছে অনেক তারা
প্রথম দেখায় তোমাকে আমার লেগেছে অনেক ভালো
তোমায় নিয়ে আমি চলে যাব ওই বহুদূরে
শুধু আমায় জায়গা দিয়েও তোমার মনের মনিকোঠায়।
স্বপ্ন আমি তোমায় নিয়ে বুকের মাঝে রাখি,
দিবানিশি তোমার ছবি আমার মনেই আঁকি।
চাঁদ হয়ে তুমি জ্বলে থাকবে, আমার মনের ঘরে
ভালোবাসা দিয়ে তোমায় রাখবো যতন করে।
হাতে হাত রেখে বলো,কোনদিন ছেড়ে যাবে নাকো
তোমায় ছাড়া এই জীবনে আমার কিছু আর নাইকো।
কাজে আমার মন বসে না, তোমার কথাই ভাবি
তুমি আমার জীবন মরণ তুমি আমার সাথী।
এই মনেতে তুমিই থাকো,আর থাকে না কেউ
আর শুধু তোমার জন্য বুকের মাঝে অকুল ঢেউ।
আজ আমায় তুমি কথা দাও ,যাবে না তো দূরে….
তুমি দূরে গেলে আমি হারাবো চিরদিনের তরে।
প্রেম আগুনে জ্বলে পুড়ে আমি যাচ্ছি মরে
কখন তুমি যতন করে, রাখবে আমায় মনের ঘরে।
আর কতকাল থাকবো একা? গুনবো কতদিন
ভালো থাকতে পারিনা আমি, কাটছে না আমার দিন
কখন দিবে তুমি সাড়া, আসবে আমার কাছে।
ভালোবাসার কিছু কবিতা, Some Love Poems :
১. ‘ভালোবাসার স্মৃতি’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে ভালোবাসার এক গভীর অনুভূতি ফুটে উঠেছে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কিছু সুন্দর স্মৃতি থাকে, স্বপ্ন থাকে। কবিতায় এসব বিষয়ই ফুটিয়ে তুলেছেন কবি।
ভালোবাসার স্মৃতি
তোমার চোখে চোখ মিলিয়ে
নির্ভেজাল স্বপ্ন আঁকি
দুঃস্বপ্নে না উঁকি দিলে আজ
খেয়াল তাদের দিকে রেখো|
আপনেরা হয় স্বার্থপর
ঘুমও কেড়ে নেয়
আপন পর দুচোখে হাজারো স্মৃতি
স্বপ্নেরা তাই আজ বিস্তৃতি।
২. “আমি খুব অল্প কিছু চাই” কবিতাটির রচয়িতা হলেন হুমায়ূন আহমেদ। ঔপন্যাসিক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা বিষ্ময়কর। তাঁর উপন্যাসগুলো কমবেশি সবাই পড়েছি। তবে তাঁর লেখা কবিতাগুলোও যথেষ্ট জনপ্রিয়।
আমি খুব অল্প কিছু চাই
আমাকে ভালবাসতে হবে না,
ভালবাসি বলতে হবে না.
মাঝে মাঝে গভীর আবেগ
নিয়ে আমার ঠোঁট
দুটো ছুয়ে দিতে হবে না.
কিংবা আমার জন্য রাত
জাগা পাখিও
হতে হবে না.
অন্য সবার মত আমার
সাথে রুটিন মেনে দেখা
করতে হবে না. কিংবা বিকেল বেলায় ফুচকাও
খেতে হবে না. এত
অসীম সংখ্যক “না”এর ভিড়ে
শুধু মাত্র একটা কাজ
করতে হবে আমি যখন
প্রতিদিন এক বার “ভালবাসি” বলব
তুমি প্রতিবার
একটা দীর্ঘশ্বাস
ফেলে একটু
খানি আদর মাখা
গলায় বলবে “পাগলি”
৩. কাজি নজরুল ইসলামের লেখা “অনেক ছিল বলার” কবিতায় বিদ্রোহী কবির প্রেমময় মনের ভাবনা ফুটে উঠেছে।
অনেক ছিল বলার
অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে।
পথ ছিল গো চলার, যদি দু’দিন আগে আসতে।
আজকে মহাসাগর-স্রোতে
চলেছি দূর পারের পথে
ঝরা পাতা হারায় যথা সেই আঁধারে ভাসতে।
গহন রাতি ডাকে আমায় এলে তুমি আজকে।
কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায় বেলার সাঁঝকে।
আসতে যদি হে অতিথি
ছিল যখন শুকা তিথি
ফুটত চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী চাঁদ হাসতে।
৪. কবি আবুল হাসানের রচিত একটি প্রেমের কবিতা হল “ প্রেমিকের প্রতিদন্দ্বী ”। উক্ত কবিতাটি কবির রচিত অন্যতম সৃষ্টি।
প্রেমিকের প্রতিদন্দ্বী
অতবড় চোখ নিয়ে, অতবড় খোঁপা নিয়ে
অতবড় দীর্ঘশ্বাস বুকের নিশ্বাস নিয়ে
যত তুমি খুলে দাও কোমরের কোমল সারস
যত তুমি খুলে দাও ঘরের পাহারা
যত আনো ও- আঙুলে অবৈধ ইশারা
যত না জাগাও তুমি ফুলের সুরভি
আঁচলে আলগা করো কোমলতা, অন্ধকার
মাটি থেকে মৌনতার ময়ুর নাচাও কোনো
আমি ফিরবো না আর, আমি কোনো দিন
কারো প্রেমিক হবে না; প্রেমিকের প্রতিদ্ধন্দ্বি চাই আজ
আমি সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হবো।
৫. ‘অনন্ত প্রেম’ কবিতাটি “মানসী” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। মানসী হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত একটি বাংলা কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন ভারতীয় কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং ছোটগল্পকার। তিনি ভারতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি লেখকদের একজন। উক্ত কবিতাটির মধ্য দিয়ে কবিগুরু চিরন্তন প্রেমের অনুভূতি তুলে ধরেছেন।
অনন্ত প্রেম
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার,
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার-
কত রূপ ধ’রে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতিপুরাতন বিরহমিলন-কথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমির রজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রবতারকার বেশে।
আমরা দু’জনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয় উৎস হতে।
আমরা দু’জনে করিয়া খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধূর নয়নসলিলে
মিলনমধুর লাজে।
পুরাতন প্রেম নিত্যনতুন সাজে।
আজি সেই চিরদিবসের প্রেম
অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
নিখিলপ্রানের প্রীতি
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে-
সকল প্রেমের স্মৃতি,
সকল কালের সকল কবির গীতি।
পরিশেষে, Conclusdion :
ভালোবাসার সাথে নিঃস্বার্থতা, স্বার্থপরতা, বন্ধুত্ব, মিলন ও পারিবারিক বন্ধন নিবিড়ভাবে জড়িত। তাই হয়তো ভালোবাসার কবিতা পড়লে মানুষের মধ্যে ভালোবাসাকেন্দ্রিক মন জাগ্রত হয়ে ওঠে। যারা অনলাইনে ভালোবাসার কবিতা খোঁজ করে থাকেন তাদের উদ্দেশ্যে আজকের এই প্রতিবেদন। আশা করি প্রতিবেদনটি আপনাদের মনোগ্রাহী হয়েছে।