বৃষ্টি নিয়ে লেখা কিছু কবিতা, Poems about Rain in Bengali

বৃষ্টি নিয়ে লেখা কিছু কবিতা

বৃষ্টির সময় ঘরবন্দি হয়ে বৃষ্টির কবিতা পড়ার বিলাসিতা অনেকের মধ্যেই রয়েছে। বৃষ্টির দিন শীতল বাতাস ও মাটির সুগন্ধর সাথে মনোরম আবহাওয়া নিয়ে আসে। বৃষ্টির দিন যেমন প্রেমিক প্রেমিকার কাছে একটি রোমান্টিক ও ভালোবাসার দিন ঠিক তেমনি এটি নিঃসঙ্গ এবং দুখী ব্যাক্তিদের হৃদয়ে কষ্ট ও বেদনার বৃষ্টি নিয়ে আসে। বৃষ্টি ছোট থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক ও সব ধরনের মানুষের কাছেই এক চিত্তবিনোদক আবহাওয়া বলে বিবেচিত। অনেকেই অনলাইন বৃষ্টির কবিতা খোঁজ করে থাকেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা বৃষ্টির কবিতা নিয়ে আলোচনা করব।

সুপরিচিত কবিদের রচিত বৃষ্টির কবিতা, Poems about Rain by Well-known Poets :

ইনবক্সে বৃষ্টির পূর্বাভাস- কামরুজ্জামান কামু

ইনবক্সে বৃষ্টির পূর্বাভাস- কামরুজ্জামান কামু

বর্ষাকালে কবিতা লেখার জন্য বসে
বৃষ্টি লিখেছি মাত্র, তখনই ঝমঝম করে
ধারাপাত শুরু হয়ে গেল, আর সঙ্গে সঙ্গে
মনে পড়ল তোমার কথাও, চেনা নাই
জানা নাই, শোনা নাই ইনবক্সে হঠাৎ
এইভাবে বলে নাকি কেউ আপনাকে
চুমু খেতে চাই? বলার যে সঙ্গে সঙ্গে
বৃষ্টি শুরু হলো আমি এখন কেমনে বলি
এ-বৃষ্টির তুমিই জননী? এই ‘চুমু’ শব্দটিই
বরষার পূর্বাভাস। এই শব্দ উচ্চারণে
চরাচরে বৃষ্টি নামে। ব্যাঙ ডাকে। দড়ি ছিঁড়ে ত্রস্ত
মাঠের ছাগলটিও গৃহ অভিমুখী হয়ে
দৌড়ে চলে সিক্ত ঘাস মাড়িয়ে মাড়িয়ে
এ কথা এখন আমি কাকে বলি? আমের পাতাটি হেন
কাঁপিতেছে কীসের আহ্লাদে, আমি কারে বলব?
অথৈ পানির তলে ডুব দেওয়ার অভিপ্রায়ে
বৃষ্টি শব্দটা লিখতে না লিখতেই দেখ
এ-রাধিকা-তনু মম ভরা বাদরের সম
উছলি উঠিছে প্রিয়, হে গোপন অথৈ জলধি।

মেঘেতেই মশগুল-মাহী ফ্লোরা

বৃষ্টিকে তুমি কতবার যাবে খুঁজতে
পথে নেমে গেলে হারিয়ে যাবে সে সহজে,
শতরঞ্জির রঙে মিলেমিশে যদি-বা
বৃষ্টি বুকের আনাচে কানাচে বহো যে।
নিয়মের মানে অনিয়ম ভালোবাসা
ফুরিয়ে যাবে সে স্রোতহীন জল নদীতে,
যেমন করে নদীরাও মরে যায়
বৃষ্টিবিহীন অকারণ সন্ধিতে।
বৃষ্টিকে তুমি কতবার দেখো ভিজতে
বৃষ্টি শুকায় কতবার খুলে চুল,
বৃষ্টি পরে না ভেজা শাড়ি আর ভুলেও
বৃষ্টি এখনো মেঘেতেই মশগুল।

আষাঢ় – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে
তিল ঠাঁই আর নাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝর-ঝর,
আউশের খেত জলে ভর-ভর,
কালী-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার
ঘনিয়েছে দেখ্‌ চাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
ওই ডাকে শোনো ধেনু ঘনঘন,
ধবলীরে আনো গোহালে।
এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।
দুয়ারে দাঁড়ায়ে ওগো দেখ্‌ দেখি
মাঠে গেছে যারা তারা ফিরিছে কি?
রাখাল-বালক কী জানি কোথায়
সারাদিন আজি খোয়ালে।
এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।
শোনো শোনো ওই পারে যাবে ব’লে
কে ডাকিছে বুঝি মাঝিরে।
খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে।
পূবে হাওয়া বয়, কূলে নেই কেউ,
দু কূল বাহিয়া উঠে পড়ে ঢেউ,
দরদর বেগে জলে পড়ি জল
ছলছল উঠে বাজি রে।
খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে গো তোরা
যাস নে ঘরের বাহিরে–
আকাশ আঁধার, বেলা বেশি আর  নাহি রে।
ঝরঝর ধারে ভিজিবে নিচোল,
ঘাটে যেতে পথ হয়েছে পিছল,
ঐ বেণুবন দুলে ঘনঘন
পথপাশে দেখ্‌ চাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
যদি মন কাঁদে – হুমায়ূন আহমেদ

যদি মন কাঁদে – হুমায়ূন আহমেদ

যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো
চলে এসো এক বরষায়
এসো ঝরো ঝরো বৃষ্টিতে জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কমলো শ্যামলো ছায়
চলে এসো এক বরষায়
যদিও তখনো আকাশ থাকবে বৈরি
কদমও গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরী
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ঝলকে ঝলকে নাচিবে বজলি আলো
তুমি চলে এসো
চলে এসো এক বরষায়
নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার পরে
মেঘমল্লার বৃষ্টিরো মনে মনে
কদমও গুচ্ছ খোপায় জড়ায়ে নিয়ে
জল ভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে
চলে এসো
তুমি চলে এসো এক বরষায় ।

বৃষ্টির মুখশ্রী-শৌনক দত্ত

বৃষ্টিমগ্ন অস্থির দিন;
শহর ভিজে যায়… ভিজে যায় নির্জন বাতিঘর।
মেঘে মেঘে পায়চারি করে সন্ন্যাসী খোঁজ।
জলের ছাঁট অবান্তর জানালায় পাশাপাশি।
দুটি মানুষের ছায়া যোজন দূরত্বের বানান লিখে রাখে।
আদিম তর্জমায় কয়েকপাতা লালন থতমত মফস্বলের দিকে চলে যায়…
অথচ আমাদের বলা হয়েছিল নির্জনতা হচ্ছে ভুটান পাহাড় থেকে দেখা বর্ষার নাম।
 

আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ – শ্রীকান্ত আচার্য

আমার সারাটি দিন, মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম ।।
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম
আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি
হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি
তাতেই কাছে ডেকে
মনের আঙিনা থেকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরিয়ে দিলাম
আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন সুখের ভাবনা
চেয়েছি পেতে যাকে চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম
আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম
আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম।।
এই মেঘলা দিনে একলা – হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

এই মেঘলা দিনে একলা – হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনা তো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।।
যুঁথী বনে ঐ হাওয়া
করে শুধু আসা যাওয়া।
হায় হায়রে দিন যায়রে
ভরে আঁধারে ভুবন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।।
শুধু ঝরে ঝর ঝর
আজ বারি সারাদিন
আজ যেন মেঘে মেঘে
হলো মন যে উদাসীন।
আজ আমি ক্ষণে ক্ষণে
কি যে ভাবি আনমনে।
তুমি আসবে ওগো হাসবে
কবে হবে সে মিলন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।।
 

বৃষ্টি বিকেল – শ্রীজাত

বিকেল বেলার ভাঙা ঘুমে পর
এক কাপ চা, ধোঁয়ায় ঢাকা ঘর,
দুপুরে খুব বৃষ্টি হয়ে ঝিম
দূরে যত বাড়ি টিম টিম
কেমন একটা ভিজে মত মন
মুখ থুবড়ে বন্ধ আছে ফোন।
পাড়ার মোড়ে মাথার গিজগিজ
গাড়ি টানায় পিছল ওভার ব্রিজ
ভাঁজফতুয়া ঘুমপাজামার বেশ
বৃষ্টি থেকে উঠেই এ কোন দেশ?
ঠান্ডা হাওয়ায় মনে পড়ার ছল।
কোথাও কোথাও দাড়িয়ে গেছে জল…
রিক্সার ভেঁপু মন কেমনের সুর।
কলেজ ফেরত মেয়েরা চুরমুর
জানলা খুলে এমনি বসে। চুপ।
থমকে থাকা মেঘেরা বিদ্রুপ
যা গেছে তা গেছে জানি, যাও।
এমন বিকেল অনন্ত হয়। তাও
চোখের কোণে যেটুকু চিকচিক…
তুমি এলেই সরিয়ে দিতে, ঠিক।।

বৃষ্টি নিয়ে লেখা আধুনিক কিছু কবিতা, Some modern poems about rain :

বৃষ্টি”

কত বৃষ্টির রীম্ঝিম শব্দ বুকে নেয়া স্তব্ধ মেঘ!
কতো ঘুমন্ত বৃষ্টির ফোটা বুকে নেয়া ক্লান্ত মেঘ!
কত তৃষ্ণার্তের তীব্র চাওয়া বুকে নেয়া মৌন মেঘ!
একটু একটু করে জমানো কথার মত তারা তবু,
হাতে হাত ধরা বৃষ্টির ফোটা সব
মেঘ ভেঙ্গে যখন পৃথিবীতে নামে,
আমরা হাতে হাত ধরে পথে নামি,
আমরা দল বেঁধে গান গাই,
আমরা পবিত্র হই সেই বৃষ্টির স্নানে,
প্রাণ ফিরে আসে সব মৃত প্রায় ফসলের প্রানে,
চাতক পাখির ঠোঁটে হীরকের মত বৃষ্টির জল,
প্রানবন্ত পৃথিবী! দেখি ঘুম ভাঙ্গা রিমঝিম সব বৃষ্টির ফল।
বৃষ্টির ফোটা

“এই বর্ষায়”

জানালায় বৃষ্টির ছটা
হৃদয়ের কপাট খোলা,
তুমি আমি বসি মখোমুখি
কিছু কথা যায়না বলা।
পাশে এসে হাত খানি ধরো
এই বর্ষার ঋতু আগমনে,
নি:সঙ্গতার রিম ঝিম ভেঙ্গে দাও
চোখে চোখ প্রেম নিবেদনে।
এভাবেই বসি কিছু কাল
যতো দিন বৃষ্টি না ফুরায়,
ততো দিন নেশা লেগে থাক
যতো দিন চোখ না জুড়ায়।

শেষ কথা, Conclusion :

বৃষ্টি যেমন প্রকৃতিকে সতেজ করে তোলে, ঠিক তেমনি বৃষ্টির শীতলতার পরশ ও মাটির সুগন্ধ আমাদের মনকে ভেতর থেকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। বৃষ্টির কিছু কবিতা আজকের এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল। আশা করি কবিতাগুলো আপনাদের মনোগ্রাহী হয়েছে। প্রতিবেদনটি ভালো লাগল অবশ্যই আপনার বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করে নেবেন।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts