বর্ষা নিয়ে লেখা কবিতা, Poems written about monsoons in Bengali

বর্ষা নিয়ে লেখা কবিতা

আমাদের প্রাণের ঋতু মোহময়ী বর্ষা। আমাদের জীবন ও সাহিত্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে এই ঋতু। ঋতুরাজ যদি হয় বসন্ত তাহলে ঋতুর রানি অবশ্যই বর্ষা। বর্ষার রূপ বড় মোহময়ী। কখনও রিমঝিম কখনও-বা মুষলধারায়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ প্রকৃতিকে মলিন করে। বর্ষা সেখানে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায়। বর্ষা ছাড়া যেমন জীবন সম্ভব নয়, তেমনি বর্ষা ছাড়া সাহিত্যও অনেকটা ফিকে। তাই তো, আজও বর্ষাকে নিয়ে গান-কবিতা সৃষ্টি হয়ে চলেছে।

বর্ষা নিয়ে লেখা বিখ্যাত কবিদের কিছু কবিতা, Poems written by famous poets about Monsoon :

বর্ষা নিয়ে লেখা বিখ্যাত কবিদের কিছু কবিতা :

বর্ষার দিনে
–  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( মানসী )

এমন দিনে তারে বলা যায়,
এমন ঘনঘোর বরিষায়!
এমন মেঘস্বরে  বাদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি  গভীর দুখে দুখী,
আকাশে জল ঝরে অনিবার।
জগতে কেহ যেন নাহি আর!
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব!
কেবল আঁখি দিয়ে  আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব—
আঁধারে মিশে গেছে আর-সব।
বলিতে বাজিবে না নিজ কানে,
চমক লাগিবে না নিজ প্রাণে।
সে কথা আঁখিনীরে  মিশিয়া যাবে ধীরে
এ ভরা বাদলের মাঝখানে।
সে কথা মিশে যাবে দুটি প্রাণে।
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার?
শ্রাবণবরিষনে   একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার!
আছে তো তার পরে বারো মাস—
উঠিবে কত কথা কত হাস।
আসিবে কত লোক  কত-না দুখশোক,
সে কথা কোন্‌খানে পাবে নাশ।
জগৎ চলে যাবে বারো মাস।
ব্যাকুল বেগে অজি বহে বায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে  রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
বর্ষাযাপন
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (সোনার তরী)

বর্ষাযাপন
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (সোনার তরী)

রাজধানী কলিকাতা; তেতালার ছাতে
               কাঠের কুঠরি এক ধারে;
        আলো আসে পূর্ব দিকে প্রথম প্রভাতে,
               বায়ু আসে দক্ষিণের দ্বারে।
     মেঝেতে বিছানা পাতা,     দুয়ারে রাখিয়া মাথা
                   বাহিরে আঁখিরে দিই ছুটি,
     সৌধ-ছাদ শত শত     ঢাকিয়া রহস্য কত
                   আকাশেরে করিছে ভ্রূকুটি।
     নিকটে জানালা-গায়     এক কোণে আলিসায়
                   একটুকু সবুজের খেলা,
    শিশু অশথের গাছ     আপন ছায়ার নাচ
                   সারা দিন দেখিছে একেলা।
    দিগন্তের চারি পাশে     আষাঢ় নামিয়া আসে,
                   বর্ষা আসে হইয়া ঘোরালো,
     সমস্ত আকাশ-জোড়া     গরজে ইন্দ্রের ঘোড়া
              চিক্‌মিকে বিদ্যুতের আলো।
      চারি দিকে অবিরল     ঝরঝর বৃষ্টিজল
              এই ছোটো প্রান্ত-ঘরটিরে
      দেয় নির্বাসিত করি     দশ দিক অপহরি
                সমুদয় বিশ্বের বাহিরে।
      বসে বসে সঙ্গীহীন     ভালো লাগে কিছুদিন
                পড়িবারে মেঘদূতকথা–
     বাহিরে দিবস রাতি     বায়ু করে মাতামাতি
                বহিয়া বিফল ব্যাকুলতা;
     বহু পূর্ব আষাঢ়ের     মেঘাচ্ছন্ন ভারতের
                  নগ-নদী-নগরী বাহিয়া
     কত শ্রুতিমধু নাম     কত দেশ কত গ্রাম
               দেখে যাই চাহিয়া চাহিয়া।
     ভালো করে দোঁহে চিনি,     বিরহী ও বিরহিণী
               জগতের দু-পারে দুজন–
     প্রাণে প্রাণে পড়ে টান,     মাঝে মহা ব্যবধান,
                মনে মনে কল্পনা সৃজন।
     যক্ষবধূ গৃহকোণে     ফুল নিয়ে দিন গণে
              দেখে শুনে ফিরে আসি চলি।
     বর্ষা আসে ঘন রোলে,     যত্নে টেনে লই কোলে
                   গোবিন্দদাসের পদাবলী।
     সুর করে বার বার     পড়ি বর্ষা-অভিসার–
                   অন্ধকার যমুনার তীর,
     নিশীথে নবীনা রাধা     নাহি মানে কোনো বাধা,
                   খুঁজিতেছে নিকুঞ্জ-কুটির।
     অনুক্ষণ দর দর     বারি ঝরে ঝর ঝর,
                   তাহে অতি দূরতর বন;
     ঘরে ঘরে রুদ্ধ দ্বার,     সঙ্গে কেহ নাহি আর
                   শুধু এক কিশোর মদন।
     আষাঢ় হতেছে শেষ,     মিশায়ে মল্লার দেশ
                  রচি “ভরা বাদরের” সুর।
     খুলিয়া প্রথম পাতা,     গীতগোবিন্দের গাথা
                 গাহি “মেঘে অম্বর মেদুর”।
     স্তব্ধ রাত্রি দ্বিপ্রহরে     ঝুপ্‌ ঝুপ্‌ বৃষ্টি পড়ে–
                 শুয়ে শুয়ে সুখ-অনিদ্রায়
       “রজনী শাঙন ঘন     ঘন দেয়া গরজন’
                সেই গান মনে পড়ে যায়।
    “পালঙ্কে শয়ান রঙ্গে     বিগলিত চীর অঙ্গে’
                  মনসুখে নিদ্রায় মগন–
     সেই ছবি জাগে মনে     পুরাতন বৃন্দাবনে
                 রাধিকার নির্জন স্বপন।
     মৃদু মৃদু বহে শ্বাস,     অধরে লাগিছে হাস
               কেঁপে উঠে মুদিত পলক;
     বাহুতে মাথাটি থুয়ে,     একাকিনী আছে শুয়ে,
               গৃহকোণে ম্লান দীপালোক।
     গিরিশিরে মেঘ ডাকে,     বৃষ্টি ঝরে তরুশাখে
                   দাদুরী ডাকিছে সারারাতি–
     হেনকালে কী না ঘটে,     এ সময়ে আসে বটে
                   একা ঘরে স্বপনের সাথি।
     মরি মরি স্বপ্নশেষে     পুলকিত রসাবেশে
                 যখন সে জাগিল একাকী,
     দেখিল বিজন ঘরে     দীপ নিবু নিবু করে
              প্রহরী প্রহর গেল হাঁকি।
     বাড়িছে বৃষ্টির বেগ,     থেকে থেকে ডাকে মেঘ,
                   ঝিল্লিরব পৃথিবী ব্যাপিয়া,
      সেই ঘনঘোরা নিশি     স্বপ্নে জাগরণে মিশি
                না জানি কেমন করে হিয়া।
      লয়ে পুঁথি দু-চারিটি     নেড়ে চেড়ে ইটি সিটি
                   এইমতো কাটে দিনরাত।
       তার পরে টানি লই     বিদেশী কাব্যের বই,
                   উলটি পালটি দেখি পাত–
       কোথা রে বর্ষার ছায়া     অন্ধকার মেঘমায়া
                      ঝরঝর ধ্বনি অহরহ,
      কোথায় সে কর্মহীন     একান্তে আপনে-লীন
                     জীবনের নিগূঢ় বিরহ!
      বর্ষার সমান সুরে     অন্তর বাহির পূরে
           সংগীতের মুষলধারায়,
      পরানের বহুদূর     কূলে কূলে ভরপুর,
                   বিদেশী কাব্যে সে কোথা হায়!
       তখন সে পুঁথি ফেলি,     দুয়ারে আসন মেলি
                   বসি গিয়ে আপনার মনে,
       কিছু করিবার নাই     চেয়ে চেয়ে ভাবি তাই
                   দীর্ঘ দিন কাটিবে কেমনে।
         মাথাটি করিয়া নিচু     বসে বসে রচি কিছু
           বহু যত্নে সারাদিন ধরে–
         ইচ্ছা করে অবিরত     আপনার মনোমত
                   গল্প লিখি একেকটি করে।
       ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা
                     নিতান্তই সহজ সরল,
       সহস্র বিস্মৃতিরাশি     প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
                   তারি দু-চারিটি অশ্রুজল।
        নাহি বর্ণনার ছটা     ঘটনার ঘনঘটা,
                   নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।
          অন্তরে অতৃপ্তি রবে     সাঙ্গ করি’ মনে হবে
                   শেষ হয়ে হইল না শেষ।
           জগতের শত শত     অসমাপ্ত কথা যত,
                   অকালের বিচ্ছিন্ন মুকুল,
         অজ্ঞাত জীবনগুলা,     অখ্যাত কীর্তির ধুলা,
                   কত ভাব, কত ভয় ভুল–
           সংসারের দশ দিশি     ঝরিতেছে অহর্নিশি
                      ঝরঝর বরষার মতো–
           ক্ষণ-অশ্রু ক্ষণ-হাসি     পড়িতেছে রাশি রাশি
                        শব্দ তার শুনি অবিরত।
          সেই সব হেলাফেলা     নিমেষের লীলাখেলা
                      চারি দিকে করি স্তূপাকার,
          তাই দিয়ে করি সৃষ্টি     একটি বিস্মৃতিবৃষ্টি
                      জীবনের শ্রাবণনিশার।
বর্ষাকাল
-শঙ্খ ঘোষ

বর্ষাকাল
-শঙ্খ ঘোষ

এখন বর্ষাকাল।
দিন প্রলম্বিত একটা বর্ষণ
আঁধারিম স্তব্ধ আর মূক অনিঃশেষ
তা যাবতীয় দৃশ্য এবং উজ্জীবন
যথার্থ এবং অনিবার্য
একটি দৃশ্য এবং একটি উজ্জীবনের
নিশ্চয়তার দীর্ঘ দীর্ঘ অবসন্ন
অবসন্ন আর অতলান্তিক
আর চিরায়মান একটা বিস্তীর্ণতার
অর্থাৎ অনতিক্রমণীয় একটা বর্তমানের
শিকড়ের সঙ্গে যত সংশ্লিষ্ট
করতে চাইছে ততো প্রলম্বিত অনির্ভর
জলধারা ; ওই প্রান্তর, ওই
বাসভূমি, ওই সিক্ত গাভী
তার মন্থর আর একলক্ষ্য কন্ঠ
ঘনিয়ে তুলছে একটা শিখা—সাদা
আর অতিমানী আর ঘোষিত
ঠিক যেমন এপার–ওপার শ্রাবণমাস, তা
এমন একটা সংবেদন যা স্পষ্টতই
তামস অস্বীকার, উত্তপ্ত
নীল সরু শিখার মতো অভ্রান্ত —
এখন বর্ষাকাল আমরা প্রশ্নাতীত
সহানুভূতিশীল, আমরা
যত আকন্ঠ নিমজ্জিত তত অনিবার্য
সেই বর্তমান— বর্তমান ব্যতীত
আর কিছুই নয়, কেবল
নিঃসংশয় একটা বর্তমান —ভেজা শালিক পাখি
নিমগাছের কাক, ঘরের কোণের চড়ুই
অবিসংবাদিত এই বর্তমান
আর সেই শিখা উত্তপ্ত অভ্রান্ত অশ্রুসজলতা।

বর্ষাকাল
– মাইকেল মধুসূদন দত্ত

গভীর গর্জ্জন সদা করে জলধর,
উথলিল নদনদী ধরণী উপর ।
রমণী রমণ লয়ে, সুখে কেলি করে,
দানবাদি দেব, যক্ষ সুখিত অন্তরে।
সমীরণ ঘন ঘন ঝন ঝন রব,
বরুণ প্রবল দেখি প্রবল প্রভাব ।
স্বাধীন হইয়া পাছে পরাধীন হয়,
কলহ করয়ে কোন মতে শান্ত নয়।।
বর্ষা-বিদায়
-  কাজী নজরুল ইসলাম

বর্ষা-বিদায়
–  কাজী নজরুল ইসলাম

ওগো বাদলের পরী!
যাবে কোন্ দূরে ঘাটে বাঁধা তব কেতকী পাতার তরী!
ওগো ও ক্ষণিকায়, পুব-অভিসার ফুরাল কি আজ তব?
পহিল ভাদরে পড়িয়াছে মনে কোন্ দেশ অভিনব?
তোমার কপোল-পরশ না পেয়ে পাণ্ডুর কেয়া-রেণু/
তোমারে স্মরিয়া ভাদরের ভরা নদীতটে কাঁদে বেনু।
কুমারী ভীরু-বেদনা-বিধূর প্রণয়-অশ্র“ সম।
ঝরিছে শিশির-সিক্ত সেফালী নিশি-ভোরে অনুপম।
ওগো ও কাজল মেয়ে,
উদাস আকাশ ছলছল চোখ তব মুখে আছে চেয়ে।
কাশফুল সম শুভ্র ধবল রাশ রাশ শ্বেত মেঘে
তোমার তরীর উড়িতেছে পাল উদাস বাতাস লেগে।
ওগো জলের দেশের কন্যা। তব ও বিদায় পথে
কাননে কাননে কদম-কেশর ঝরিছে প্রভাত হ’তে।
তোমার আদরে মুকুলিতা হয়ে ঊঠিল যে বল্লরী
তরুর কণ্ঠ জড়াইয়া তারা কাঁদে নিশিদিন ভরি।’
‘বৌ-কথা-কও’ পাখি
উড়ে গেছে কোথা, বাতায়নে বৃথা বউ করে ডাকাডাকি।
চাঁপার গেলাস গিয়াছে ভাঙিয়া, পিয়াসী মধুপ এসে’
কাঁদিয়া কখন গিয়াছে উড়িয়া কমল-কুমদী দেশে।
তুমি চলে যাবে দূরে,
ভদরের নদী দুকূল ছাপায়ে কাঁদে ছলছল সুরে!
যাব যবে দূর হিম-গিরি শিল, ওগো বাদলের পরী
ব্যথা ক’রে বুক উঠিবে না কভু সেথা কাহারেও স্মরি?
সেথা নাই জল, কঠিন তুষার, নির্মম শুভ্রতা-
কে জানে কী ভাল বিধুর ব্যথা — না মধুর পবিত্রতা!
সেথা মহিমার ঊর্ধ্বে শিখরে নাই তরলতা হাসি,
সেথা যাও তব মুখের পায়ের বরষা-নূপুর খুলি,
চলিতে চকিতে চমকি’ উঠ না, কবরী উঠে না দুলি।
সেথা রবে তুমি ধেয়ান-মগ্না তাপসিনী অচপল,
তোমার আশায় কাঁদিবে ধারায় তেমনি “ফটিক-জল”

কেমন বৃষ্টি ঝরে
– জীবনানন্দ দাশ

কেমন বৃষ্টি ঝরে—মধুর বৃষ্টি ঝরে—ঘাসে যে বৃষ্টি ঝরে—রোদে যে বৃষ্টি ঝরে আজ
কেমন সবুজ পাতা—জামীর সবুজ আরও—ঘাস যে হাসির মতো—রোদ যে সোনার মতো ঘাসে
সোনার রেখার মতো—সোনার রিঙের মতো—রোদ যে মেঘের কোলে—তোমার গালের টোলে রোদ
তোমার চুলে যে রোদ—মেঘের মতন চুলে—তোমার চোখে যে রোদ—সেও যে মেঘের মতো চোখ
আকাশে সোনালি চিল পাখনা ছড়ায়ে কাঁদে—(এমন সোনালি চিল)—সোনালি রেণুর মতো ঝরিছে কান্না আহা, মিশরে শুনেছি যেন কবে
আকাশে এমন ছেঁড়া ময়লা মেঘের রাশ—পড়েছে তাদের ছায়া নীলের ঘোলা জলে নিঝুম পিরামিডে
এমনই সোনালি রোদ—সোনার থামের মতো—ঘিয়ের শিখার মতো রয়েছে আকাশ ছিঁড়ে তবু
কেঁদেছে সোনালি চিল এমনই আকাশ ঘুরে—শুনেছি মিশরে  আমি হাজার হাজার যুগ আগে
তোমার চুলে যে রোদ—মেঘের মতন চুলে—তোমার চোখে যে রোদ—সেও যে মেঘের মতো চোখ
কেমন বৃষ্টি ঝরে—মধুর বৃষ্টি ঝরে—ঘাসে যে বৃষ্টি ঝরে—রোদে যে বৃষ্টি ঝরে আজ

বর্ষার কবিতা
– সুকুমার রায়

কাগজ কলম লয়ে বসিয়াছি সদ্য,
আষাঢ়ে লিখিতে হবে বরষার পদ্য।
কি যে লিখি কি যে লিখি ভাবিয়া না পাই রে,
 হতাশে বসিয়া তাই চেয়ে থাকি বাইরে।
সারাদিন ঘনঘটা কালো মেঘ আকাশে,
ভিজে ভিজে পৃথিবীর মুখ খানা ফ্যাকাশে।
বিনা কাজে ঘরে বাঁধা কেটে যায় বেলাটা,
মাটি হল ছেলেদের ফুটবল খেলাটা।
আপিসের বাবুদের মুখে নাই ফুর্তি,
ছাতা কাঁধে জুতা হাতে ভ্যাবাচ্যাকা মূর্তি।
কোনখানে হাটু জল কোথা ঘন কর্দম –
চলিতে পিছল পথে পড়ে লোকে হরদম।
 ব্যাঙেদের মহাসভা আহ্লাদে গদ,
গান করে সারারাত অতিশয় বদ্‌।

বর্ষা নিয়ে লেখা কিছু প্রেমের কবিতা, Love poems written about Monsoon :

বৃষ্টির কথা থাক, বিরহের কথা বলি।

বৃষ্টির কথা থাক, বিরহের কথা বলি।
শুনাই দুজনে বিদ্যাপতির বিষণ্ন পদাবলী,
বর্ষার কথা থাক, বকুলের কথা বলি।
ঝরা বকুলেই ভরে রাখি এই প্রশস্ত অঞ্জলি।
আকাশের কথা থাক, হৃদয়ের কথা শুনি।
যদিও বিরহ তবু মিলনের স্বপ্নজালই বুনি,
অশ্রুর কথা থাক, আবেগের কথা শুনি-
সহস্র রাত কেটে যাক
দূর আকাশের তারা গুনিব।
গরিমার কথা থাক, বিনয়ের পাঠ ধরি।
কলহের কোনো কাজ নেই, কিছু করুণার গান করি।
বিদ্যার কথা থাক, প্রেমের কবিতা পড়ি।
চারদিকে এই জলধারা তবু সৃষ্টির দ্বীপ গড়ি।

আমি তো কেবল তোমার দিকেই যাই
বাতাস আমাকে নেয় যে অন্য দিকে।
এরই মাঝে চলে আষাঢ়ের কারসাজি
হয়ে যাও তুমি ক্রমেই ঝাপসা, ফিকে।
 
ফিকে হতে হতে মুছে যাও পুরোপুরি
তখন তোমার পাই না কোনোই দিশা
মেঘমসলিনে ঢেকে যায় অবয়ব
এই আষাঢ়েও বাড়ে চাতকের তৃষা।
 
মেঘেরা যখন ঝেঁপে আসে জানালায় 
তখন তোমাকে দেখি যে একঝলক।
ঝলক মানেই অমোঘ অভিজ্ঞান,
তোমার দিকেই যাওয়ার দিকফলক।
 
প্রতিবারই ঠিক করে নিই দিক-দিশা
বেহায়া বাতাস কেবল ই ঘুরিয়ে দেয়।
যতবারই আমি চেষ্টা করি না কেন
বাতাস আমাকে অন্য দিকেই নেয়।
আমি তো কেবল তোমার দিকেই যাই

নীল আকাশে মেঘের ভেলা
প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজ,
ষড়ঋতুর আবর্তনে ফের
বর্ষা এসেছে আজ।
কালো মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশ
বিদ্যুৎ চমক, সাথে মেঘের গর্জন
রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে
চলছে অবিরাম বর্ষণ।
আষাঢ়ের এই দিনে
বৃষ্টি সারাদিন ঝরছে,
নদী-নালা পানিতে থৈ থৈ
মাঠ-ঘাট, খাল-বিল ভরছে।
বৃক্ষ-লতা পেয়েছে ফিরে
নতুন জীবন,
জুঁই -চামেলী, কদম-কেয়ার গন্ধে
মৌ মৌ করছে ফুলবন।
বৃষ্টির অবিরাম বর্ষণে
ধুয়ে যাক সমাজের পাপ-পংকিলতা যত,
প্রিয় স্বদেশ হোক শান্তির আবাসভূমি
মুছে যাক সমাজের অন্যায়-অবিচার ক্ষত।

বর্ষা নিয়ে লেখা কিছু ছোটো কবিতা, Short poem written about monsoon :

বৃক্ষ-লতা পেয়েছে ফিরে নতুন জীবন,

বৃক্ষ-লতা পেয়েছে ফিরে নতুন জীবন,
জুই-চামেলী, কদম-কেয়ার গন্ধে
মৌ মৌ করছে ফুলবন।
বৃষ্টির অবিরাম বর্ষণে
ধুয়ে যাক সমাজের পাপ-পংকিলতা যত,
প্রিয় স্বদেশ হোক শান্তির আবাসভূমি
মুছে যাক সমাজের অন্যায়-অবিচার ক্ষত।

অজয় নদে বান ডেকেছে, উপছে পড়ে প্রবল ঢেউ,
মাঝি একা বসে ঘাটে, নাইকো কূলে আর কেউ।
মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ে,
পলাশ বনে পাতা নড়ে,
বর্ষায় ভিজে রাস্তার কুকুর, ডাক ছাড়ে ঘেউ ঘেউ,
আমি দেখি জানলা খুলে, আর দেখে না কেউ।
ঝম ঝমা ঝম বৃষ্টি পড়ে, গাঁয়ে ঢোকে জল,
বাসায় ভিজে পাখিরা সব, করছে কোলাহল।

বিহঙ্গের ডানা থেকে খসে পড়ে তারা,
আমি নই নক্ষত্র আকাশ তবু দিক হারা।
মোহিত কত সব জল-মৃদঙ্গ পেলবতা ভরা,
বিমূর্ত প্রেম তবুও আকুল; বর্ষায় অমিয় ধারা।
নয়নের বারিধি অবিরাম; তুমি তার দৃষ্টি,
তোমার নিলয় সাজানো মেঘে অবয়ব কৃষ্টি।
এ চরণ তো এগোয় না সামনে সীমাহীন পথ,
ডানে-বাঁয়ে প্রলয়রত চলমান প্রেম-রথ।
ঝমঝম ঝমঝম অবিরত বারিধারা শুধুই ঝরছে।
গগনের নয়নের অশ্রু থামবার বস্তু নয়।

ঝমঝম ঝমঝম অবিরত বারিধারা শুধুই ঝরছে।
গগনের নয়নের অশ্রু থামবার বস্তু নয়।
দিবা গত হয়ে এখন এসেছে নিশি,
তবু ঝরঝর বারিধারার বিরতি নেই এতটুকু।
ক্ষণে ক্ষণে ঝলকে উঠছে আকাশে আগুনের রেখা।
অসিত অম্বরে গম্ভীর জলদেরা প্রলয় নাদে মত্ত।
সহসা মর্মভেদী অশনি ধ্বনি
এ হৃদয়কে করছে ভীতিগ্ৰস্ত!
কোথাও নেই সাড়া পশু পাখির,
পথঘাট জনশূন্য।
মাঠ হয়েছে জলমগ্ন, পুষ্করিণী কানায় কানায় পূর্ণ।
বাতায়ন পাশে বসে দেখছি
প্রকৃতির নটরাজ তান্ডব লীলাখেলা।
একঘেয়ে বারিপাতের শব্দে কর্ণ হয়েছে অভ্যস্ত।
থেকে থেকেই শীতল সমীরন
এ তনু মনকে করছে ক্লান্তিহীন।
নীরদদের গুরুগম্ভীর নাদ শ্রবণে,
এ চিত্তে জড়ো হয় কত ছন্দ।
সেই তালে আপনার মননে
রচে চলি কত কাব্য।

শেষ কথা, Conclusion :

আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো বর্ষাকাল নিয়ে কবিতা খোঁজ করে থাকেন, তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন। উপরে উল্লেখিত কবিতাগুলোর মাধ্যমে আশা করি আপনাদের খোঁজ শেষ হবে। প্রতিবেদনটি আপনাদের মনোগ্রাহী হলে অবশ্যই আপনার পরিবার পরিজন ও বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করে নেবেন।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts