বিংশ শতাব্দীর মহান কবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যার বহু উক্তি আমরা জেনেছি। এই উক্তিগুলো থেকে আমরা জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে অনেক কিছুই উপলব্ধি করতে পেরেছি।
কবিগুরু নিজের উক্তিগুলোর মাধ্যমে পাঠকদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তবে আপনাদের মধ্যে যারা সৌন্দর্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথের উক্তিগুলো কখনো পড়েন নি তারা কবিগুরুর দর্শনের এক বিশেষ দিক ফেলে এসেছেন। এমন কথা বলার কারণ হল, কবিগুরু সৌন্দর্যকে কেবল বাহ্যিক আভায় সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন।
তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৌন্দর্য নিয়ে লেখা উক্তিগুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো।
মনের সৌন্দর্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথের উক্তি, Rabindranath’s quote about the beauty of the mind :
মনের সৌন্দর্য নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য কিছু উক্তি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। আশা করি এই উক্তিগুলো আপনাদের মনের গভীরে সৌন্দর্যের নতুন অনুভূতির সঞ্চার করবে।
- “সৌন্দর্যের আলো শুধু বাস্তবিকতা জানায় না, তা মনের ভিতরের অনুভুতি জাগ্রত করে।”
- “সৌন্দর্যের আভা সেই যেটি সকল সীমা ছাড়িয়ে যায়।”
- “সৌন্দর্য একটি জীবনের শক্তি, একটি উচ্চ আদর্শ এবং একটি মনের সুখ।”
- “সৌন্দর্য ছড়িয়ে বসে থাকা জীবনের উচ্চ সত্তা এবং নতুন ভাবনার প্রকাশ।”
- “সৌন্দর্য দেখার জন্য চোখ নয়, প্রয়োজন মনের আলো।”
- “সৌন্দর্য তার, যিনি হৃদয়ে সৌন্দর্যের অনুভূতি রাখেন।”
- “সৌন্দর্য তার আপন আলোয় ভরে আছে। দেখিবার চোখ থাকলেই তাতে জ্যোতি পাওয়া যায়।”
- “সৌন্দর্য মুখে নেই; সৌন্দর্য হল একটি আলো যা হৃদয়েতে আছে”।
- “বাহ্যিক সৌন্দর্য আকর্ষণ করে তবে অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য মনমুগ্ধ করে”।
- “সৌন্দর্য হল সুখের প্রতিশ্রুতি”।
- “সৌন্দর্য যেখানেই থাকুক, তাকে খুঁজিয়া পাইতে হয়।”
- “দৃশ্যমান সৌন্দর্য যা আমাদের আনন্দিত করে তা হল অদৃশ্য”।
- “ভবিষ্যৎ তাদেরই, যারা তাদের স্বপ্নের সৌন্দর্য বিশ্বাসী”।
- “সৌন্দর্য দর্শকের চোখে থাকে”।
- “সৌন্দর্য সেই যা আমাদের মনে আনন্দ আনে এবং চিরকাল বেঁচে থাকে।”
- “সৌন্দর্য একটি অমৃত যা আত্মাকে করে তোলে”।
- “যা সুন্দর তা ভালো এবং যে ভালো সে শীঘৃই সুন্দর হবে”।
- “মানুষের হৃদয়ে সৌন্দর্যের আসন, চোখে তার প্রতিফলন।”
- “সৌন্দর্য হল আয়নায় দেখতে থাকা চিরন্তন”।
- “সৌন্দর্য হলো হৃদয়ের ভাবনা, যা অন্তরে অনুভূত হয়।”
- “সৌন্দর্য হল দৃশ্যমান সঙ্গিত”।
- “সৌন্দর্য তখনই শুরু হয়, যখন আপনি নিজের হতে পারেন”।
- “সৌন্দর্য শক্তি হাসি হল তলোয়ার”।
- “সৌন্দর্য কি শুধুই বাহ্যিক? অন্তরের সৌন্দর্যই আসল।”
- “সৌন্দর্য এর কোন কারন হয় না”।
- “একজন ব্যক্তির প্রকৃত সৌন্দর্য তার আত্মায় প্রতিফলিত হয়”।
- “সবকিছুর সৌন্দর্য আছে তবে সবাই তা দেখে না”।
- “সত্যিকারের সৌন্দর্য কোনো নির্দিষ্ট রূপে বা গঠনে সীমাবদ্ধ নয়।”
সৌন্দর্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথের সেরা উক্তি, Rabindranath’s best quotes on beauty :
সৌন্দর্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু অনবদ্য উক্তি রয়েছে, যা হয়তো আপনারা কখনোই শুনেন নি। কবিগুরুর উক্তিগুলোতে প্রতিফলিত হয়েছে সৌন্দর্যের অদৃশ্য দিক।
- “সৌন্দর্য্য মনের মধ্যে প্রেম জন্মাইয়া দেয়, সে আপনার প্রেমে অন্যকে প্রেমিক করিয়া তুলে, সে আপনি সুন্দর হইয়া অন্যকে সুন্দর করে।”
- “জগতের সাধারণের সহিত সৌন্দর্য্যের আশ্চর্য্য ঐক্য আছে। জগতের সর্ব্বত্রই তাহার তুলনা, তাহার দোসর মেলে। এই জন্য সৌন্দর্য্যকে সকলের ভাল লাগে। সৌন্দর্য্য যদি একেবারেই নূতন হইত, খাপছাড়া হইত, হঠাৎ-বাবুর মত একটা কিম্ভূত পদার্থ হইত, তাহা হইলে কি তাহাকে আর কাহারো ভাল লাগিত?”
- “আমরা সকলেই যদি কিছু না কিছু সুন্দর না হইতাম, তাহা হইলে সুন্দর ভাল বাসিতাম না!”
- “আমরা বাহিরে যেমনই হই-না কেন, আমরা বাস্তবিকই সুন্দর। সেই জন্য সৌন্দর্য্যের সহিতই আমাদের যথার্থ ঐক্য দেখিতে পাই।”
- “যাহার হৃদয়ে যত সৌন্দর্য্য বিরাজ করিতেছে, সে ততই সৌন্দর্য্য উপভোগ করিতে পারে। সৌন্দর্য্যের সহিত তাহার নিজের ঐক্য ততই সে বুঝিতে পারে ও ততই সে আনন্দ লাভ করে।”
- “যে সৌন্দর্য্য ফুল হইয়া ফুটিয়াছে সেই সৌন্দর্য্যই অবস্থাভেদে আমার হৃদয় হইয়া বিকশিত হইয়াছে; সেই জন্য ফুলও আমার হৃদয় চাহিতেছে, আমিও ফুলকে আমার হৃদয়ের মধ্যে চাহিতেছি।”
- “আমাদের নিজের মধ্যে সৌন্দর্য্যের ন্যূনতা থাকিলে, আমরা জগতের সৌন্দর্য্য-রাজ্যে প্রবেশাধিকার পাই না, ধরণীর ধুলা-কাদার মধ্যে লুটাইতে থাকি।”
- “প্রেম যেখানে ভাব, সৌন্দর্য্য সেখানে তাহার অক্ষর; প্রেম যেখানে হৃদয়, সৌন্দর্য্য সেখানে গান; প্রেম যেখানে প্রাণ, সৌন্দর্য্য সেখানে শরীর; এই জন্য সৌন্দর্য্যে প্রেম জাগায় এবং প্রেমে সৌন্দর্য্য জাগাইয়া তুলে।”
- সৃষ্টিকার্যের মধ্যে সৌন্দর্য সর্বাপেক্ষা আশ্চর্য রহস্যময়, কারণ, জগৎরক্ষায় তাহার একান্ত উপযোগিতা দেখা যায় না।সৌন্দর্য অন্ন নহে, বস্ত্র নহে, তাহা কাহারও পক্ষে প্রত্যক্ষরূপে আবশ্যক নহে।
- সৌন্দর্য অনাবশ্যক হইয়াও আমাদের আত্মার মধ্যে আলোড়ন উপস্থিত করে। যেন ওইখানে অনন্তের সহিত আমাদের নাড়ির টান উপলব্ধি করা যায়।
- সৌন্দর্য ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করিয়া থাকে। ফুল এক বসন্তে অনাদৃত হইয়া দ্বিতীয় বসন্তে ফোটে।
- সৌন্দর্য ক্ষেত্রেই আমরা ঈশ্বরের সমকক্ষ। ক্ষমতায় তিনি কোথায় আমি কোথায়! যেখানে সৌন্দর্য সেখানে আমরা দেখিতে পাই ঈশ্বরও আমাদিগকে চাহিতেছেন।
- সৌন্দর্য সেই প্রেমের লক্ষণ, আমাদের মন ভুলাইবার চেষ্টা। যদি সংসারে কাজ লওয়াই উদ্দেশ্য হয় তবে আমাদের মনোহরণের চেষ্টা বাহুল্য। জগতের বড়ো বড়ো দানব-শক্তির মাঝখানে ক্ষুদ্র প্রাণীদের নিকট হইতে অনায়াসে কান ধরিয়া কাজ আদায় করিয়া লওয়া যাইতে পারিত।
সৌন্দর্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, Rabindranath Tagore’s poem on beauty :
সৌন্দর্যের সংযম – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নর কহে, বীর মোরা যাহা ইচ্ছা করি।
নারী কহে জিহ্বা কাটি, শুনে লাজে মরি!
পদে পদে বাধা তব, কহে তারে নর।
কবি কহে, তাই নারী হয়েছে সুন্দর।
মানসী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী
পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি
আপন অন্তর হতে। বসি কবিগণ
সোনার উপমাসূত্রে বুনিছে বসন।
সঁপিয়া তোমার ‘পরে নূতন মহিমা
অমর করিছে শিল্পী তোমার প্রতিমা।
কত বর্ণ কত গন্ধ ভূষণ কত-না,
সিন্ধু হতে মুক্তা আসে খনি হতে সোনা,
বসন্তের বন হতে আসে পুষ্পভার,
চরণ রাঙাতে কীট দেয় প্রাণ তার।
লজ্জা দিয়ে, সজ্জা দিয়ে, দিয়ে আবরণ,
তোমারে দুর্লভ করি করেছে গোপন।
পড়েছে তোমার ‘পরে প্রদীপ্ত বাসনা
অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।
সৌন্দর্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান, Rabindranath Tagore’s song about beauty :
এই লভিনু সঙ্গ তব, সুন্দর হে সুন্দর!
পুণ্য হল অঙ্গ মম, ধন্য হল অন্তর সুন্দর হে সুন্দর ॥
আলোকে মোর চক্ষুদুটি মুগ্ধ হয়ে উঠল ফুটি,
হৃদ্গগনে পবন হল সৌরভেতে মন্থর সুন্দর হে সুন্দর ॥
এই তোমারি পরশরাগে চিত্ত হল রঞ্জিত,
এই তোমারি মিলনসুধা রইল প্রাণে সঞ্চিত।
তোমার মাঝে এমনি ক’রে নবীন করি লও যে মোরে
এই জনমে ঘটালে মোর জন্ম-জনমান্তর সুন্দর হে সুন্দর ॥
সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি তারায় তারায় খচিত–
স্বর্ণে রত্নে শোভন লোভন জানি বর্ণে বর্ণে রচিত॥
খড়্গ তোমার আরো মনোহর লাগে বাঁকা বিদ্যুতে আঁকা সে,
গরুড়ের পাখা রক্ত রবির রাগে যেন গো অস্ত-আকাশে।
জীবন-শেষের শেষ জাগরণসম ঝলসিছে মহাবেদনা-
নিমেষে দহিয়া যাহা কিছু আছে মম তীব্র ভীষণ চেতনা।
সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি তারায় তারায় খচিত-
খড়্গ তোমার,হে দেব ব্রজপাণি, চরম শোভায় রচিত।
তোমায় চেয়ে আছি বসে পথের ধারে সুন্দর হে।
জমল ধুলা প্রাণের বীণার তারে তারে সুন্দর হে॥
নাই যে কুসুম, মালা গাঁথব কিসে! কান্নার গান বীণায় এনেছি যে,
দূর হতে তাই শুনতে পাবে অন্ধকারে সুন্দর হে ॥
দিনের পরে দিন কেটে যায় সুন্দর হে।
মরে হৃদয় কোন্ পিপাসায় সুন্দর হে।
শূন্য ঘাটে আমি কী-যে করি–রঙিন পালে কবে আসবে তরী,
পাড়ি দেব কবে সুধারসের পারাবারে সুন্দর হে ॥
শেষ কথা, Conclusion :
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৌন্দর্য চেতনা কতটা বিশাল সেটা হয়তো উপরে উল্লেখিত উক্তিগুলো থেকে ধারণা করতেই পারছেন।
আজকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা উদ্ধৃতি ও কবিতাগুলো থেকে আশা করি আপনারা কবিগুরুর বিশিষ্ট মানসিকতা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন।
আজকের এই পোস্ট যদি আপনাদের মনোগ্রাহী হয়ে থাকে, তবে নিজের পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে প্রতিবেদনটি অবশ্যই শেয়ার করবেন।