মাটির তৈরি বহুতল ভবন! হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। আধুনিক স্থাপত্যের এই যুগেও মাটির তৈরি বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে এবং বেশ জনপ্রিয়তাও লাভ করেছে।
মাটির তৈরি বহুতল ভবন আছে এমন একটি জায়গার নাম হল ইয়েমেনের হাদরামাউত। এই অঞ্চলে অবস্থিত শিবাম শহরের সব বাড়ি মাটি দিয়ে তৈরি। এই শহরটি “মরুভূমির ম্যানহাটন” নামেও পরিচিত। এর কারণ হল এখানে ১৬ তলা পর্যন্ত উঁচু বাড়িঘর দেখা যায়, যা সবই মাটি দিয়ে তৈরি।
এখানে ইয়েমেনের শিবাম শহর সম্পর্কে কিছু অতিরিক্ত তথ্য দেওয়া হল:
ঐতিহাসিক পটভূমি:
শিবামের ইতিহাস প্রায় ১৭০০ বছর আগের। এটি প্রাচীন হাদরামাউত রাজ্যের অংশ ছিল। শহরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছিল। ১৬ শতাব্দীর মধ্যে, শিবাম একটি সমৃদ্ধ এবং জনবহুল শহরে পরিণত হয়।
স্থাপত্য:
শিবামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল এর বহুতল ভবনগুলি। এই ভবনগুলি কাদামাটি এবং খড় দিয়ে তৈরি। ভবনগুলির দেয়ালগুলি প্রায় ১.৫ মিটার পুরু। এই কারণে ভবনগুলি গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা এবং শীতকালে গরম থাকে।
ভবনগুলির উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এগুলি সাধারণত ৫ থেকে ৮ তলা পর্যন্ত হয়। প্রতিটি ভবনে একটি পরিবার বসবাস করে। ভবনগুলিতে সাধারণত একটি উঠান, একটি রান্নাঘর, একটি খাবার ঘর এবং কয়েকটি শোবার ঘর থাকে।
শিবামের সংস্কৃতি :
শিবামের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানকার মানুষজন তাদের ঐতিহ্য এবং রীতিনীতিগুলি খুব গুরুত্ব সহকারে পালন করে। তারা বিভিন্ন ধরনের উৎসব এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
শিবাম একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতি বছর বহু পর্যটক এই শহরটি দেখতে আসে। পর্যটকরা এখানকার স্থাপত্য, সংস্কৃতি এবং ইতিহাস দেখে মুগ্ধ হন।
শিবাম শহরটি বর্তমানে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। এর মাধ্যমে এই শহরের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
মাটির তৈরি বহুতল ভবনের কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। প্রথমত, এটি পরিবেশবান্ধব। মাটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান এবং এটি সহজেই পাওয়া যায়। এছাড়াও, মাটির তৈরি ভবনগুলির তাপ নিরোধক ক্ষমতা খুব বেশি। এর ফলে গ্রীষ্মকালে ঘর ঠান্ডা থাকে এবং শীতকালে গরম।
দ্বিতীয়ত, মাটির তৈরি ভবনগুলির নির্মাণ খরচ তুলনামূলকভাবে কম। কারণ, এতে ইট বা সিমেন্টের প্রয়োজন হয় না। তৃতীয়ত, মাটির তৈরি ভবনগুলি দেখতে খুব সুন্দর হয় এবং এগুলিতে একটি ঐতিহ্যবাহী স্পর্শ থাকে।
তবে, মাটির তৈরি বহুতল ভবন তৈরি করতে হলে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। মাটির গুণমান, ভবনের নকশা এবং নির্মাণের পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এছাড়াও, ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় এই ধরনের ভবন তৈরি করতে হলে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়।