মধ্যরাতে রহস্যজনক রেডিয়ো সঙ্কেত: খুলনা-যশোর থেকে ভেসে এলো সন্দেহজনক কথোপকথন, সতর্ক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা মহল

রেডিয়ো সঙ্কেত

ভারতের পূর্ব সীমান্তে সম্প্রতি গভীর রাতে হ্যাম রেডিয়োর তরঙ্গে ধরা পড়েছে একাধিক রহস্যজনক বার্তালাপ ও কথোপকথন। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, খুলনা ও যশোর অঞ্চল থেকেই ভেসে এসেছে এই অজানা রেডিয়ো সঙ্কেত। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এবং ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নজরদারি বাড়ানোর।

রহস্যের সূত্রপাত

হ্যাম রেডিয়োর প্রচলিত সংকেত
Pin it

ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সদস্য এবং অভিজ্ঞ হ্যাম রেডিয়ো চালক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানাচ্ছেন, জানুয়ারির কোনও এক মধ্যরাতে আচমকা একটি অচেনা আওয়াজে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। হ্যাম রেডিয়োর তরঙ্গে তখন চলছিল এক অজানা ভাষায় কথোপকথন। হ্যাম রেডিয়োর প্রচলিত সংকেত ভাষায় (‘কিউআরজ়েড’) উত্তর চাইলে কোনো সাড়া মেলেনি। বরং কিছুক্ষণ পরেই ফের চালু হয় সেই বার্তালাপ।

দিক নির্ণায়ক প্রযুক্তির সাহায্যে রহস্য উদঘাটন

রেডিয়ো সংকেতের উৎস সন্ধানে ‘ডায়রেকশনাল অ্যান্টেনা’ ব্যবহার করেন হ্যাম চালকরা। তাঁদের দাবি, সংকেতের দিক ও শক্তির ভিত্তিতে বোঝা যায়, ভারতের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে বার্তাগুলি আসছে। সংকেতের ভাষা ছিল কখনও বাংলা, কখনও আবার উর্দুতে।

আলু-পেঁয়াজে সময়ের সংকেত!

সাবধানতামূলক ভাষায় দেওয়া ওই বার্তাগুলিতে ব্যবহৃত হচ্ছিল নির্দিষ্ট সবজির নাম—যেমন ‘আলু’, ‘পেঁয়াজ’—যেগুলি ছিল সময় বা কোড বোঝানোর ইঙ্গিত। কথোপকথনে কোথাও কাউকে পাঠানো, কিছু জিনিস পৌঁছে দেওয়ার মতো বিষয় উঠে এসেছে। এর থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধে যে, কোনো সংগঠিত ষড়যন্ত্র বা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলছিল কিনা।

বাংলাদেশি হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সহযোগিতা

ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব এ বিষয়ে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের শীর্ষকর্তা অনুপ ভৌমিকের সঙ্গে। তাঁর ক্লাবের সদস্যরাও নজরদারিতে একই ধরনের সংকেত ধরা পড়ার কথা নিশ্চিত করেন। যদিও বার্তাপ্রেরকদের পরিচয় এখনও প্রকাশ্যে আসেনি, কারণ বাংলাদেশের হ্যামরা জানিয়েছেন, তাঁরা নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ করতে পারবেন না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সক্রিয়তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সক্রিয়তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
Pin it

বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানানো হলে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। গঙ্গাসাগর মেলার সময়, যেখানকার হ্যাম নেটওয়ার্ক অত্যন্ত শক্তিশালী, সেখানে এই কথোপকথন আরও স্পষ্ট শোনা যায়। অম্বরীশ ও তাঁর সহকর্মীরা সেই কথোপকথন রেকর্ড করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠান। পরে মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা ব্যক্তিগতভাবে অম্বরীশের বাড়িতে এসে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন।

‘রিপিটার’ বন্ধ, ব্যবহার হচ্ছে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট যোগাযোগ ব্যবস্থা

বর্তমানে রাজ্যে হ্যাম রেডিয়োর ‘রিপিটার’ নেটওয়ার্ক আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ, মার্চ মাসেও বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি সেই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বার্তা আদানপ্রদান করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এখন হ্যাম চালকরা পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মোডে যোগাযোগ রাখছেন।

রেডিয়ো প্রযুক্তি একদিকে যেমন দুর্যোগকালে জীবনদায়ী হয়ে ওঠে, অন্যদিকে তা যদি ভুল উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তবে বিপদের কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সক্রিয়তা ও হ্যাম চালকদের তৎপরতায় হয়তো বড়সড় ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা রুখে দেওয়া গেছে। তবে এই ঘটনা আরও একবার দেখিয়ে দিল, সীমান্তবর্তী প্রযুক্তি ব্যবহারে সতর্কতা কতটা প্রয়োজন।

RIma Sinha

Rima Sinha is a professional journalist and writer with a strong academic background in media and communication. She holds a Bachelor of Arts from Tripura University and a Master’s degree in Journalism and Mass Communication from Chandigarh University. With experience in reporting, feature writing, and digital content creation, Rima focuses on delivering accurate and engaging news stories to Bengali readers. Her commitment to ethical journalism and storytelling makes her a trusted voice in the field.

Recent Posts