প্রত্যেকটি মানুষেরই ইচ্ছে থাকে নিজের ব্যবসা শুরু করার। তবে একটি ব্যবসা শুরু করার আগে দরকার হয় তহবিলের আর সেই তহবিলের অভাবে অনেক ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা দাঁড় করানোর স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনা।
কিন্তু যদি কারোর বিশেষ দক্ষতা থাকলে সে অল্প অর্থ দিয়ে নিজের ছোট ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আমাদের দেশে স্টার্টআপের ধারণা খুবই জনপ্রিয়।এগুলো মূলত ছোট ব্যবসা যেগুলো বাড়ি থেকেই চালনা করা যায়। যদি আপনার কাছে জায়গা না থাকে তাহলে আপনি ছোট জায়গা বা বাড়ি ভাড়া নিতে পারেন।
নতুন উদ্যোগ শুরু করার আগে নিম্নলিখিত টিপসগুলি মাথায় রাখতে হবে:-
তহবিল: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট ব্যবসাগুলি অল্প অর্থ দিয়েই শুরু হয়। স্থানীয় এলাকা সমিতি এবং সমবায় সমিতিগুলি অতিরিক্তভাবে অগ্রিম তহবিল অফার করে থাকে। আপনি একটি ছোট ব্যবসার জন্য নিজের ধারণা মতো অর্থের ঋণ নিতে পারেন।
পরিকল্পনা: পরিকল্পনা ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ সঠিক পরিকল্পনা না করলে ব্যবসা ব্যর্থ হতে পারে। তাই ব্যবসা শুরু করার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আপনি যে পরিষেবা বা পণ্যটি অফার করতে চান তার বাজার পরীক্ষা করুন।
প্রতিযোগী বিশ্লেষণ:এরপর আপনার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তারা কী অফার করছে সেই সম্পর্কে জানতে হবে। দরকার পড়লে আপনার বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলতে এবং পরামর্শ নিতে হবে। শুধু তাই নয় লঞ্চ করার আগে সম্ভাব্য গ্রাহকদের একটি ডাটাবেস তৈরি করে নিতে হবে।
তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে নিজের পছন্দের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার জন্য শুধুমাত্র পর্যাপ্ত অর্থই যথেষ্ট নয়। এটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটিও আপনাকে দেখতে হবে আর এরজন্য প্রয়োজন দক্ষতার।
এছাড়াও ব্যবসা শুরু করার আগে লাইসেন্সিং পদ্ধতি এবং অন্যান্য আইনি বিষয়গুলি দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।এতে যেহেতু আপনি ভবিষ্যতে ঋণ ও ভর্তুকি পাবেন তাই আপনার ব্যবসার বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজনীয়। এতে আপনি আইনি পদক্ষেপ থেকেও রক্ষা পাবেন।
২০২৫ সালে বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি? What is the most profitable business currently in 2025?
২০২৫ সালে অনেকগুলো এমন ব্যবসা রয়েছে যেগুলো খুবই লাভজনক। এর মধ্যে রয়েছে অনলাইন ব্যবসা, বিশেষ করে ই-কমার্স এবং ডিজিটাল মার্কেটিং, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা সম্পর্কিত ব্যবসা এবং টেকনোলজি বিষয়ক ব্যবসা ইত্যাদি ।
২০২৫ সালের কয়েকটি লাভজনক ব্যবসা হল:-
ই-কমার্স: আমরা প্রায়ই অনলাইনে অর্ডার করি তাই অনলাইন শপিংয়ের চাহিদা বাড়ছে, তাই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম বা অনলাইন স্টোর তৈরি করলে অনেকটাই লাভ হবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং: বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য ও সেবার প্রচারের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির সাহায্য নেয়, তাই এটিও একটি লাভজনক ব্যবসা।
ফার্মেসি: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা বেড়েই চলেছে। সুতরাং এটিও একটি লাভজনক হতে পারে।
ফিটনেস সেন্টার ও যোগ স্টুডিও: যেহেতু আজকের যুগে মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে তাই ফিটনেস সেন্টার এবং যোগ স্টুডিওর চাহিদাও বাড়ছে।
অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট: মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলির চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে, তাই আপনি অ্যাপ তৈরি করে আয় করতে পারেন।
ডেটা সায়েন্স এবং এআই: ডেটা বিশ্লেষণ এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কিত ব্যবসাগুলি দিনে দিনে জনপ্রিয় হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
খুচরা ব্যবসা: নির্দিষ্ট ধরণের পণ্যের (যেমন, পরিবেশ-বান্ধব পণ্য, হস্তশিল্প) দোকান খুলেও লাভ করা যায়।
ফাস্ট ফুড ও কফি শপ: ফাস্ট ফুড এবং কফি শপ সবসময়ই জনপ্রিয়। এছাড়াও হোম বেকারি ও ফুড ডেলিভারি,অনলাইন টিউটরিং ইত্যাদিও জনপ্রিয় ব্যবসা।
ব্যবসা কথার অর্থ কি? What does the word business mean?
ব্যবসা বলতে লাভ করার উদ্দেশ্যে করা কোনো কাজ বা উদ্যোগকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপে যদি আপনি একটি দোকান খোলেন আর সেখানে জিনিসপত্র বিক্রি করে লাভ যে হয় সেটিই ব্যবসা।অন্যদিকে একটি কোম্পানি পণ্য তৈরি করে বাজারে বিক্রি করলেও সেটিকে ব্যবসা বলা হবে।
স্মার্ট ব্যবসার আইডিয়া কী কী/ What are smart business ideas?
স্মার্ট ব্যবসার আইডিয়া হল প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত ব্যবসার কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও লাভজনক করে তোলা। এই ধরনের ব্যবসাগুলো সাধারণত গ্রাহকসেবা, পণ্য উদ্ভাবন, এবং কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রযুক্তির সুবিধা দেয়।
কিছু স্মার্ট ব্যবসার উদাহরণ হল:-
- অনলাইন স্টোর (ই-কমার্স)
- ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি
- ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম
- অনলাইন কোর্স বিক্রি
- ড্রপশিপিং ই-কমার্স ব্যবসা
- প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড (POD) ব্যবসা
- মোবাইল ফোন এক্সেসরিজ ব্যবসা
- অনলাইন ফুড ডেলিভারি
- হস্তশিল্প বা ক্রাফট ব্যবসা
- কাস্টমাইজড মগ ও গিফট আইটেম বিক্রি করা।
২ লাখ টাকা দিয়ে কোন কোন ব্যবসা শুরু করা যায়? What businesses can be started with 2 lakh rupees?
২ লাখ টাকা দিয়ে অনেক ধরনের ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। যেমন:-
- খাবার ও পানীয় ব্যবসা
- ডিজিটাল মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া পরিষেবা
- হস্তশিল্প ও পোশাক ব্যবসা
- মোবাইল এক্সেসরিজ বা যন্ত্রাংশের ব্যবসা
- কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
- অনলাইন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা
- ছোট লন্ড্রি বা ড্রাই ক্লিনিং সার্ভিস
- একটি ছোট মুদি দোকান বা কনফেকশনারি দোকান।
ব্যবসায়িক ঝুঁকি কি? What is business risk?
ব্যবসায়িক ঝুঁকি হল এমন একটি অবস্থা যেখানে একটি ব্যবসা প্রত্যাশিত লাভের চেয়ে কম লাভ অর্জন করে অথবা লাভের পরিবর্তে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।এগুলো বাজারের পরিবর্তন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বাজারের পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ,চুরি অথবা জালিয়াতি বা আইনি পরিবর্তন ইত্যাদির জন্য হয়ে থাকে।
১০ হাজার টাকা দিয়ে কি ব্যবসা করা যায়? Can you do business with 10,000 rupees?
১০ হাজার টাকা দিতে যেই ব্যবসাগুলো করা যায় সেগুলো হল:-
- টিফিন সার্ভিস
- আচার তৈরি করার ব্যবসা
- হোমমেড স্ন্যাকস বা বেকারি আইটেম বিক্রি করা
- মোবাইল ফোন ও এক্সেসরিজ বিক্রি করা
- হ্যান্ডমেড গয়না বা হস্তশিল্প
- ফলের রস বা স্মুদির স্টল
- অনলাইন টিউশন বা শিক্ষকতা করা
- ব্লগিং বা কন্টেন্ট রাইটিং
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
- ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফি ।
ব্যবসায়ের জোট কি? What is a Business Alliance?
ব্যবসায়ের জোট হল দুটি বা তার বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি পারস্পরিক উপকারী সম্পর্ক, যা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য গঠন নির হয়। এই জোটগুলি সাধারণত স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠিত হতে পারে, যেমন খরচ কমানো, নতুন বাজারে প্রবেশ করা, অথবা নতুন প্রযুক্তি তৈরি করা।
আরও ভালোভাবে বলতে গেলে বলতে হয় একটি ব্যবসায়িক জোট হল দুটি বা ততোধিক স্বাধীন কোম্পানির মধ্যে একটি চুক্তি, যেখানে তারা তাদের সম্পদ, দক্ষতা এবং জ্ঞান একত্রিত করে একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে।
এই জোটগুলি প্রায়ই কৌশলগত অংশীদারিত্ব হিসাবে পরিচিত, যেখানে প্রতিটি কোম্পানি তার নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রেখে অন্য কোম্পানির সাথে সহযোগিতা করে। এই ধরনের জোটের মূল ধারণা হল, সম্মিলিতভাবে কাজ করে প্রতিটি কোম্পানি একা কাজ করার চেয়ে বেশি সুবিধা অর্জন করতে পারে।
ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলতে কি বোঝায়? What does it mean to be an Entrepreneur in Business?
একজন ব্যবসায়ী যিনি নতুন ব্যবসা শুরু করেন এবং নতুন ধারণা, পণ্য বা সেবার উদ্ভাবন করেন, তাকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলা হয়। সাধারণত, এই ধরনের ব্যক্তিরা নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য ঝুঁকি নেয় এবং তাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে থাকেন।
পরিশেষে
ব্যবসা শুরু করতে হলে ছোট ব্যবসা থেকেই শুরু করা উচিত এবং ধীরে ধীরে সেটিকে সম্প্রসারণ করতে হবে কারণ ছোট ব্যবসায় ঝুঁকি কম থাকে এবং সেটি কম বাজেটে শুরু করা যায়।
কোনও ব্যবসাই বড় বা ছোট নয়। আপনি কীভাবে আপনার ব্যবসা শুরু করবেন এবং বৃদ্ধি করবেন সেটি সম্পূর্ণ আপনার উপরই নির্ভর করছে।আশা করছি আমাদের এই প্রতিবেদনটি আপনাদের পছন্দ হবে। যদি পছন্দ হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনি আপনাদের বন্ধু, আত্মীয় স্বজন ও চেনা পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে পারেন।