হরপ্পা সভ্যতার নাম আমরা সবাই জানি। কিন্তু যদি বলি তারও আগে এক বিস্ময়কর সভ্যতা ছিল, যা এখন ভারত মহাসাগরের গভীরে বিলীন? হ্যাঁ, ঘটনার চাঞ্চল্যকর দাবি করছেন গবেষকরা। প্রায় ২৫ বছর আগে পশ্চিম ভারতের খাম্বাত উপসাগরে (Gulf of Khambhat) এক ‘ডুবন্ত শহরের’ (sunken city) সন্ধান মেলে, যা ভারতীয় ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
২০০০ সালে এই আবিষ্কারটি রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করে। সোনার প্রযুক্তির সাহায্যে সমুদ্রের প্রায় ১২০ ফুট নিচে বিশাল এক স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায়। এর দৈর্ঘ্য ৫ মাইলের বেশি এবং প্রস্থ ২ মাইল। কেবল পাথরের কাঠামোই নয়, এখানে ৯,৫০০ বছর পুরোনো জ্যামিতিক নকশা, শিল্পকর্ম, মৃৎশিল্প এবং এমনকি মানুষের দেহাবশেষও খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।
হরপ্পার চেয়েও প্রাচীন?
এই আবিষ্কার সিন্ধু সভ্যতাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। এতদিন পর্যন্ত সিন্ধু সভ্যতাকে ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু খাম্বাত উপসাগরের এই শহর প্রমাণ করে, সিন্ধু সভ্যতার আগেও ভারতে এক উন্নত জনপদ বা সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল।
বিতর্ক ও রহস্য

তবে এই আবিষ্কার নিয়ে বিতর্কও কম নেই। একাংশ গবেষক এই সভ্যতার প্রাচীনত্ব এবং এর ‘মাতৃ-কেন্দ্রিক’ (matriarchal) প্রকৃতিকে সমর্থন করেন। আবার অনেকে এই দাবি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে এই ‘হারানো সভ্যতা’ নিয়ে বিতর্ক এখনও অব্যাহত।
উদ্ধার হওয়া নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মৃৎশিল্প, পুঁতি এবং ভাস্কর্য, যা সেই প্রাচীন সভ্যতার জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির দিকে আলোকপাত করে। খাম্বাত উপসাগরের এই ‘ডুবন্ত শহর’ সত্যিই এক ঐতিহাসিক রহস্য, যা ভারতের অতীতকে নতুন করে জানতে সাহায্য করতে পারে। এই সভ্যতা কি সত্যিই হরপ্পার চেয়েও প্রাচীন, নাকি এটি অন্য কোনো অজানা ইতিহাস? এর উত্তর পেতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।