অবিশ্বাস্য কিন্তু সত্যি! ঠান্ডা লেগে কাশি, বুকে ব্যথা আর শ্বাসকষ্ট ভেবেছিলেন বাবা-মা। কিন্তু কে জানতো, অসাবধানতায় গিলে ফেলা একটা ছোট্ট বোর্ডপিন খাদ্যনালীর বদলে সটান ঢুকে পড়েছে শ্বাসনালীতে, আর সেখান থেকে সোজা বাঁ দিকের ফুসফুসে আটকে গেছে! ১২ বছরের অঙ্কন বিশ্বাসের জীবন বাঁচিয়ে এক অলৌকিক অস্ত্রোপচার করে দেখালো কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ।
উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের অঙ্কন বিশ্বাস। ক’দিন আগে প্রবল বৃষ্টিতে ভিজেছিল সে, আর সেই কারণেই শুরু হয়েছিল ভয়াবহ কাশি। বাড়ির লোক ভেবেছিলেন সাধারণ ঠান্ডা লাগা। কিন্তু বসিরহাটে বুকের এক্স-রে করতেই টেকনিশিয়ানের চোখ ছানাবড়া! বাঁ দিকের ফুসফুসে আস্ত ২.৫ সেন্টিমিটারের একটি বোর্ডপিন আটকে আছে!
এই পিন বের করাটা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। কলকাতা মেডিক্যালের অভিজ্ঞ ইএনটি বিশেষজ্ঞদেরও রীতিমতো মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে। কারণ, পিনটি এমনভাবে ফুসফুসে বিঁধেছিল যে, বের করতে গেলেই খোঁচা লেগে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অবশেষে সফল ব্রঙ্কোস্কোপি পদ্ধতির মাধ্যমে অঙ্কনের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
অঙ্কনের বাবা গৌতম ও মা সাধনা জানান, গত ৩-৪ দিন ধরেই ছেলের বুকের বাঁ দিকে ব্যথা হচ্ছিল, সঙ্গে খুশখুশে কাশি আর মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট। স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধেও কোনও কাজ না হওয়ায় সোমবার তাকে বসিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই বুকের এক্স-রেতে বোর্ডপিনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে এবং দ্রুত তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। মঙ্গলবার ভোরবেলা অঙ্কনকে নিয়ে তার বাবা-মা মেডিক্যালে পৌঁছন।

মেডিক্যালের ইএনটি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক দীপ্তাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিভাবকরা যখন হাসপাতালে নিয়ে আসেন, তখন ছেলেটির প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, সঙ্গে একটানা কাশি। আমরা দ্রুত সিটি স্ক্যান করি, যেখানে এক্স-রের চেয়েও অনেক স্পষ্ট দেখা যায় বাঁ দিকের শ্বাসনালীতে ধাতব পিন ঢুকে আছে।” চিকিৎসকরা আরও জানান, কয়েক দিন ধরে পিনটি ঢুকে থাকায় ফুসফুসের স্বাভাবিক প্রসারণ-সঙ্কোচন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছিল, যার ফলে বাঁ দিকের ফুসফুসটা প্রায় চুপসেই গিয়েছিল।
ইএনটি বিশেষজ্ঞরা দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেন। দীপ্তাংশু মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি ওই বিভাগের বিশেষজ্ঞ বিজন অধিকারী ও তনয়া পাঁজা এবং স্নাতকোত্তর পড়ুয়া (পিজিটি) শুভ্রজ্যোতি নস্কর এই জটিল অস্ত্রোপচারে অংশ নেন। প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় নিপুণ দক্ষতায় রিজিড ব্রঙ্কোস্কপির মাধ্যমে বের করে আনা হয় সেই ২.৫ সেন্টিমিটার লম্বা বোর্ডপিনটি। শুভ্রজ্যোতি জানান, চরম সতর্কতা সত্ত্বেও পিনটি বের করার সময় ফুসফুসে একটি ছোট ক্ষত হয়েছে। আপাতত অঙ্কনকে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) রাখা হয়েছে।
তবে, কীভাবে এই বোর্ডপিনটি অঙ্কনের ফুসফুসে গেল, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না গৌতম ও সাধনা। এই বিরল অস্ত্রোপচারের সফলতা নিঃসন্দেহে কলকাতা মেডিক্যালের ইএনটি বিভাগের মুকুটে নতুন পালক যোগ করেছে।