দীর্ঘ ৮৫ বছরের পুরনো এক আইসক্রিম ব্র্যান্ডের ইতিহাসে যেন শনির দশা নেমে এসেছে! জনপ্রিয় মার্কিন আইসক্রিম ব্র্যান্ড ‘থ্রিফ্টি’-র নির্মাতা সংস্থা ঋণের জালে জড়িয়ে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। এর ফলস্বরূপ, রাতারাতি বন্ধ হয়ে গেছে ৫০০টি কাউন্টার, এবং অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে এই জনপ্রিয় আইসক্রিম।
কেন এই দশা?
ভাঁড়ে মা ভবানী দশা হয়েছে থ্রিফ্টি আইসক্রিমের নির্মাণকারী সংস্থা রাইট এইড-এর। গলা পর্যন্ত ঋণে ডুবে গেছে তারা। এক বছরের মধ্যে এটি দ্বিতীয় বারের মতো তাদের দেউলিয়া দশা। টাকার অভাবে তারা একের পর এক দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। এমন চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই থ্রিফ্টি আইসক্রিম বাজার থেকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে, এবং এর ফলে কয়েকশো শ্রমিক কাজ হারাবেন।
থ্রিফ্টি আইসক্রিমের উত্থান ও পতন :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, অর্থাৎ ১৯৪০ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে থ্রিফ্টি আইসক্রিমের জন্ম হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইসক্রিম ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৯৬ সালে রাইট এইড এই ব্র্যান্ডটি অধিগ্রহণ করার পর এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে শুরু করে। দেশজুড়ে একের পর এক কাউন্টার খোলা হয় এবং থ্রিফ্টি আইসক্রিম সাধারণ মানুষের কাছে একটি প্রিয় নাম হয়ে ওঠে।
তবে, রাইট এইডের বর্তমান আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তারা তাদের সমস্ত বিলাসিতা ত্যাগ করার পরিকল্পনা করছে। চলতি বছরের মে মাসের গোড়ায় তারা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে এবং ৫০০ কাউন্টার বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয়, এ বছর মোট ১,২০০ কাউন্টার বন্ধ করার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। ক্যালিফোর্নিয়ার এল মন্টের কারখানায় তৈরি হয় থ্রিফ্টি আইসক্রিম। ঋণ মেটাতে সেই উৎপাদন প্লান্টের বেশ কিছু সম্পত্তিও বিক্রি করতে চলেছে রাইট এইড।

কি হবে থ্রিফ্টি আইসক্রিমের ভবিষ্যৎ?
যদিও এই মুহূর্তে আইসক্রিমটি এখনও বাজার থেকে পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়নি। বিভিন্ন দোকান এবং খুচরো বিক্রেতাদের কাছে এটি এখনও পাওয়া যাচ্ছে। রাইট এইড আশ্বস্ত করেছে যে, এই ৮৫ বছরের পুরনো আইসক্রিমের ব্র্যান্ডটি বেঁচে থাকবে। তারা জানিয়েছে, আগামী দিনে মুদির দোকান এবং অন্যান্য খুচরো বিক্রেতাদের মাধ্যমে থ্রিফ্টি আইসক্রিম বিক্রি করা হবে। খরচ কমানোর উদ্দেশ্যেই তাদের নিজস্ব পার্লার এবং কাউন্টার বন্ধ করা হচ্ছে।
২০১৮ সালে, রাইট এইড অ্যালবার্টসন নামের একটি সংস্থার সঙ্গে থ্রিফ্টি আইসক্রিমের ব্র্যান্ডটি বিক্রি করার জন্য চুক্তি করেছিল। এর মাধ্যমে তারা বিপুল অঙ্কের ঋণ শোধ করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেই চুক্তি শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়, যার ফলে তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি।
থ্রিফ্টি আইসক্রিমের এই দশা বাণিজ্যিক দুনিয়ায় একটি বড় ধাক্কা। এটি প্রমাণ করে যে, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী একটি ব্র্যান্ডেরও আর্থিক সংকটে পড়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হতে পারে। আপনার কি মনে হয়, থ্রিফ্টি আইসক্রিম আবার তার পুরনো গৌরব ফিরে পাবে?