মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণে এখন পর্যন্ত ১,৬০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এবং বিশেষজ্ঞরা পূর্বেই সতর্ক করেছিলেন যে, মৃতের সংখ্যা ১০,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। হলো ঠিক তাই। মায়ানমারে ভূমিকম্পের কারণে মৃতের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে গেল। সম্প্রতি এ ভূমিকম্পটি শুধু মিয়ানমারই নয়, বরং প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড, ভারত, বাংলাদেশ এবং চীনেও শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের বিস্তৃত প্রভাব

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল, যেখানে উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিতদের খুঁজে বের করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। মিয়ানমারের সামরিক সরকার একদিন পর জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১,৬৪৪ জনে পৌঁছেছে এবং আহতের সংখ্যা ২,৪০০ জনেরও বেশি। এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) সতর্ক করে দিয়েছে যে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এবং এটি ১০,০০০ এরও বেশি হতে পারে।
এশিয়ান ব্লকের সহায়তা
এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারের জন্য সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির সংগঠন আসিয়ান (ASEAN) মিয়ানমারের জন্য মানবিক সহায়তা এবং ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে ত্বরিত সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, “আসিয়ান তার সংহতি নিশ্চিত করে এবং মানবিক সহায়তা সমন্বয়, ত্রাণ কার্যক্রমকে সমর্থন ও সহজতর করার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করবে।”
ভারতের ‘অপারেশন ব্রহ্মা’
ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের সরকারের পক্ষ থেকে ‘অপারেশন ব্রহ্মা’ নামে একটি বৃহৎ ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মেঘালয় এবং মণিপুরসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ, এমনকি বাংলাদেশ ও চীনের কিছু অঞ্চলেও ভূমিকম্পের প্রভাব অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের পরবর্তী পরিস্থিতি
মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ ভূমিকম্পের পর বিদ্যুৎ ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং বিদেশী সাহায্যের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন, এবং বলেছেন, “আমি যেকোনো দেশ, যেকোনো সংস্থা বা মিয়ানমারের যেকোনো ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে চাই।” চীন ও রাশিয়া ইতিমধ্যে মিয়ানমারে সাহায্য পাঠিয়েছে।
এদিকে, মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতেও নতুন করে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যা শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর ইতিমধ্যেই কাঁপছিল। তবে নতুন কম্পনগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
ভূমিকম্পের বৈশ্বিক ঝুঁকি

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি, কারণ এটি সক্রিয় সাগাইং ফল্ট লাইনে অবস্থিত, যার ইতিহাসে শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটেছে। ১৯৪৬ সালে ৭.৭ মাত্রার এবং ২০১২ সালে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প এই অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল।
মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারকে এখন শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতেই হবে না, বরং দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অত্যন্ত সংকটময়। একদিকে যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশ, অন্যদিকে ভয়াবহ মানবিক সংকট—এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের পুনরুদ্ধার সহজ হবে না।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় মিয়ানমার যাতে দ্রুত পুনর্গঠন করতে পারে, সেই আশাতেই সহায়তা কার্যক্রম চলছে।