বর্তমান সময়ে ইলেকট্রিক এসি বাসে চড়তে কার না ভালো লাগে? দিল্লি, কলকাতা-সহ দেশের অনেক শহরেই এই বাস চলাচল করছে। তবে কলকাতার কথা বলতে গেলে, শহরে গত কয়েক বছরে এই বাসের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম—শহরের সর্বত্রই ছুটে চলেছে এই বাস। তবে হ্যাঁ, এর ভাড়া অন্যান্য বাসের তুলনায় কিছুটা বেশি হয়। কিন্তু তীব্র গরমে একবার এই বাসে উঠলে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়, যাত্রা অনেক আরামের হয়।
তবে আপনি কি জানেন, এই ইলেকট্রিক বাস চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে? পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী দিনে আর এই ইলেকট্রিক বাস কেনা হবে না। তাহলে কি কলকাতা শহর থেকে এই বাস উঠে যাবে? বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন এই প্রতিবেদনে।
তবে কি কলকাতা থেকে বিদায় নিচ্ছে ইলেকট্রিক বাস?
কলকাতার অনেকেই ইলেকট্রিক বাসে চড়তে ভালোবাসেন, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই যে, ইলেকট্রিক বাস চালাতে গিয়ে রাজ্য সরকারকে রীতিমতো বিপাকে পড়তে হচ্ছে। যতটা পরিষেবা দেওয়ার কথা, ততটা এই বাস দিতে পারছে না। বর্তমানে WBTC (পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন নিগম)-এর অধীনে মোট ৮০টি ইলেকট্রিক বাস রয়েছে। এই বাসগুলির দৈর্ঘ্য ৯ থেকে ১২ মিটার, আর দাম ৯৫ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
এত টাকা দিয়ে বাস কিনে এখন সরকারের মাথায় হাত দেওয়ার মত পরিস্থিতি। বাসের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে নানা সমস্যা সরকারকে ভাবতে বাধ্য করছে, কেন এই বাস কেনা হয়েছিল। সূত্রের খবর, বাসগুলি কেনার সময় দেশের প্রথম সারির একটি গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা দাবি করেছিল, এগুলি অনায়াসে ১২ বছর যাত্রী পরিষেবা দিতে পারবে। একবার ফুল চার্জ দিলে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার ছুটতে পারবে বাসগুলি। কিন্তু বাস্তবে ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
ইলেকট্রিক বাস নিয়ে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সমস্যা :

১২ বছর তো দূরের কথা, মাত্র ৭ বছরের মধ্যেই অধিকাংশ বাস অকেজো হতে শুরু করেছে। ব্যাটারির কার্যক্ষমতা ব্যাপক হারে কমে গেছে। জানলে অবাক হবেন, ব্যাটারির ক্ষমতা এখন নেমে এসেছে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটারে। আরেকটি বড় সমস্যা হলো, এই বাসের রক্ষণাবেক্ষণ এবং যন্ত্রাংশের দাম অত্যন্ত চড়া। হাতেগোনা কয়েকটি সংস্থাই এই যন্ত্রাংশগুলি বাজারে সরবরাহ করে। প্রতিটি বাসে তিনটি করে ব্যাটারি থাকে, আর এক-একটির দাম ১৮ লক্ষ টাকা! এত দাম দিয়ে জিনিস কিনেও সরকারকে লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার বিকল্পের কথা ভাবছে।
নবান্নে নাকি গণপরিবহন বিভাগের বিভিন্ন কর্তাদের সঙ্গে সরকার এই বিষয়ে আলোচনা করেছে। খবর, এই ইলেকট্রিক বাসের বদলে সিএনজি এসি বাস কেনার কথা ভাবছে সরকার। এমনকি শুক্রবার থেকেই ২০০টি সিএনজি এসি বাস কেনার তোড়জোড়ও নাকি শুরু করে দিয়েছে পরিবহন দফতর।
এই ধরনের বাসের দাম নাকি ৪২ থেকে ৪৪ লক্ষ টাকার মধ্যে। দাবি করা হচ্ছে, বিনা ঝামেলায় অন্তত ১৫ বছর রাস্তায় বুক ফুলিয়ে এই বাস চলতে পারবে। প্রশ্ন উঠছে, কবে এই বাস রাস্তায় নামবে? সূত্রের খবর, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আসন্ন দুর্গাপূজার আগেই ৩০ থেকে ৪০টি সিএনজি এসি বাস শহরের রাস্তায় নামতে পারে। যদিও পুরো বিষয়টি সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ওপর নির্ভর করবে।