৮২ বছর বয়সেও একঝলকও দেখেননি নারীকে! অবিশ্বাস্য এই সাধকের গল্প শুনলে চমকে যাবেন!

৮২ বছর বয়সেও দেখেননি নারীর ঝলক

অবিশ্বাস্য! ৮২ বছর জীবনেও এক নারীর মুখও দেখেননি এই সাধক। এ-ও কি সম্ভব? একজন মানুষ জন্মালেন, বড় হলেন, ৮২ বছর পর্যন্ত বাঁচলেন, অথচ সারা জীবনে একটি মুহূর্তের জন্যও কোনো নারীকে দেখলেন না! পৃথিবীতে নাকি এমনই এক পুরুষ ছিলেন যিনি জীবদ্দশায় কোনো নারীর মুখ দেখেননি, এমনকি নিজের মাকেও না। এই অবিশ্বাস্য সাধকের গল্প শুনলে আপনি চমকে যাবেন!

মিহাইলো টোলোটোস এর এক অবিস্মরণীয় জীবন :

ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম ‘ইউনিল্যাড’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অসাধারণ মানুষটির নাম ছিল মিহাইলো টোলোটোস। তিনি ছিলেন গ্রিসের হালকিডিকির বাসিন্দা। ওই প্রতিবেদন আরও জানায়, মিহাইলো শুধুমাত্র বন্ধুবান্ধবদের কাছে শুনে এবং বই পড়ে নারীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন, কিন্তু কোনো নারীকে চাক্ষুষ করেননি।

ধারণা করা হয়, মিহাইলোর জন্ম হয়েছিল ১৮৫৬ সালে। তাকে জন্ম দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই নাকি তার মা মারা যান। সদ্যোজাত মিহাইলো অনাথ হয়ে পড়েন।

মাউন্ট অ্যাথোসের মঠে বেড়ে ওঠা :

মিহাইলোর মা মারা যাওয়ার পর গ্রিসের মাউন্ট অ্যাথোস-এর একটি মঠের সন্ন্যাসীরা তাঁকে দত্তক নেন। সন্ন্যাসীদের মধ্যেই তার বেড়ে ওঠা। মিহাইলো শুধু সন্ন্যাসীদের মধ্যে বড় হননি, ছোটবেলা থেকেই তিনি তাদের আদবকায়দা রপ্ত করেছিলেন এবং মঠের সন্ন্যাসীদের মতো কঠোর জীবনযাপন শুরু করেন।

মিহাইলো যে মঠে থাকতেন, সেখানে অত্যন্ত কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলা হতো। তার মধ্যে অন্যতম ছিল, কোনো নারীকে মঠে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া। শুধু নারীই নয়, গরু, ভেড়া-সহ কোনো গবাদি পশুকেও ওই মঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না।

গ্রিসের ওই মঠের এই শতাব্দীপ্রাচীন প্রথা আজও বলবৎ রয়েছে। নারীদের মঠে প্রবেশ করতে না দেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল, সন্ন্যাসীরা যাতে সারা জীবন সঠিকভাবে ব্রহ্মচর্য পালন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।

বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন এক জীবন :

বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন এক জীবন

তবে মঠের সন্ন্যাসীদের বহির্বিশ্বে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো। ফলে তারা বাইরে গিয়ে প্রয়োজনে কোনো নারীর সঙ্গেও দেখা করতে পারতেন। কিন্তু মিহাইলো যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন তিনি নাকি কখনওই মাউন্ট অ্যাথোসের ওই মঠ ছেড়ে বাইরে যাননি। ১৯৩৮ সাল নাগাদ, ৮২ বছর বয়সে মিহাইলো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মিহাইলোর মৃত্যুর পর মাউন্ট অ্যাথোসের সন্ন্যাসীরা নাকি তাকে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে সমাধিস্থ করেছিলেন। মঠের সন্ন্যাসীরা মনে করতেন, মিহাইলোই বিশ্বের একমাত্র পুরুষ যিনি কখনও কোনো নারীর মুখদর্শন করেননি। তাই সন্ন্যাসীদের মধ্যে তার সম্মান ছিল অনেক বেশি।

একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে নাকি এ-ও প্রকাশিত হয়েছিল যে, শুধু নারীদেরই না, মিহাইলো কখনও ট্রেন, বিমান এমনকি কোনো সিনেমাও দেখেননি! ১৯৩৮ সালের ২৯ অক্টোবর ‘এডিনবার্গ ডেইলি কুরিয়ার’ সংবাদপত্রে মিহাইলোকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘জীবনে কোনো নারীকে না দেখেই মারা গিয়েছেন গ্রিসের সন্ন্যাসী’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল।

মাউন্ট অ্যাথোস নিয়ে বিতর্ক :

বর্তমানে মাউন্ট অ্যাথোস ইউনেস্কো দ্বারা বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে স্বীকৃত। লক্ষ লক্ষ দর্শকের কাছে এটি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

তবে এখনও মাউন্ট অ্যাথোসের মঠগুলিতে নারীদের প্রবেশ না করতে দেওয়ার কারণে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই নিয়মকে অনেকে ‘বৈষম্যমূলক’ এবং ‘প্রাচীন’ বলেও মন্তব্য করেছেন।

মাউন্ট অ্যাথোসের কোলে ২০টি মঠ রয়েছে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার সন্ন্যাসী বাস করেন। এই ২০টি মঠের মধ্যে ১৭টিতে গ্রিসের সন্ন্যাসীরা বাস করেন, বাকি তিনটিতে সার্বিয়া, বুলগেরিয়া এবং রাশিয়ার সন্ন্যাসীরা থাকেন।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts