পরীক্ষায় ফেল মানেই কি জীবনের শেষ? নাকি এটা হতে পারে এক নতুন শুরুর প্রথম ধাপ? কর্ণাটকের বাগালকোট জেলার এক দম্পতি যেন জীবনের পাঠটাই নতুন করে শিখিয়ে দিলেন সমাজকে।
দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় অভিষেক চোলাচাগুদ্দা নামে এক ছাত্র ৬২৫ নম্বরের পরীক্ষায় মাত্র ২০০ নম্বর পেয়ে সব বিষয়েই অকৃতকার্য হয়েছে। ফলাফল—৩২ শতাংশ নম্বর, যা উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। সাধারণভাবে এমন ফলাফলের পর বাড়িতে হতাশা, কান্না, বকুনি, কখনও বা মানসিক নির্যাতনের ছবিই দেখা যায়। তবে অভিষেকের পরিবার সম্পূর্ণ অন্য পথে হেঁটেছে।

ফল প্রকাশের দিন, যখন আত্মীয়–স্বজন, পাড়া–প্রতিবেশী কটাক্ষ করতে ব্যস্ত, তখনই অভিষেকের মা–বাবা তাঁকে কেক কেটে মিষ্টি খাইয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। তারা বলেন, ‘‘হতেই পারে পরীক্ষায় তুমি সফল হওনি, কিন্তু চেষ্টা করেছো আন্তরিকভাবে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জীবন এখানে থেমে যায় না। আবার চেষ্টা করো, সফলতা আসবেই।’’
অভিষেকের বাবা জানান, ছেলে পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল, পরীক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। কিন্তু ফলাফলে সেই পরিশ্রমের প্রতিফলন ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, এই উদ্যাপন শুধুই আনন্দের জন্য নয়, বরং ছেলের মনোবল ফিরিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ।
অভিষেক নিজেও এই ভালোবাসা ও সমর্থনে নতুন করে সাহস পেয়েছে। সে বলে, ‘‘পরীক্ষায় ফেল করার পরেও পরিবারের যেভাবে পাশে পেয়েছি, তা আমার জীবনের অন্যতম বড় প্রেরণা। আমি আবার চেষ্টা করব এবং ভবিষ্যতে ভালো করেই পাশ করব।’’

এই ঘটনাটি কেবল একটি পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের গল্প নয়, এটি সমাজের প্রতি এক বার্তা—পরীক্ষায় নম্বরই শেষ কথা নয়। কখনও কখনও ব্যর্থতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সাফল্যের বীজ। এবং সেই বীজ ফলাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিবার ও সমাজের সমর্থন।
পরীক্ষা মানেই শুধু নম্বর নয়, এটা জীবনের পথে চলার একটি ধাপমাত্র। অভিষেকের পরিবার প্রমাণ করে দিল, ভালোবাসা, সমর্থন ও ইতিবাচক মনোভাবই পারে একজন কিশোরের জীবনে আশার আলো দেখাতে। সমাজের আরও অনেক পরিবার যদি এমন ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়, তবে ভবিষ্যতের অভিষেকরা হতাশ না হয়ে স্বপ্ন দেখতে শিখবে নতুন করে।