অনলাইন শপিং এখন ভারতীয় বাজারে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে ক্রেতাদের ঠকানোর প্রবণতাও দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি ভারতের মানদণ্ড সংস্থা বিআইএস (BIS) দিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আমাজন ও ফ্লিপকার্টের গুদামে বিপুল পরিমাণ নকল ও নিম্নমানের পণ্য উদ্ধার করেছে। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে, পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও।
দিল্লির গুদামে বিপুল পরিমাণ নকল পণ্য

গত ১৯ মার্চ দিল্লির মোহন কো-অপারেটিভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে আমাজনের গুদামে অভিযান চালান বিআইএস-এর তদন্তকারীরা। সেখানে মজুত থাকা মিক্সার, গিজার, গ্রাইন্ডারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রী পরীক্ষা করে দেখা যায়, এগুলোর অধিকাংশই নকল। কিছু পণ্যের গায়ে আইএসআই (ISI) মার্ক ছিল না, আবার কিছু পণ্যে জাল আইএসআই মার্ক বসানো ছিল।
প্রায় ১৫ ঘণ্টার দীর্ঘ তদন্তের পর আমাজনের গুদাম থেকে সাড়ে তিন হাজারের বেশি পণ্য বাজেয়াপ্ত করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা।
ফ্লিপকার্টের গুদামে নকল স্পোর্টস সু
তদন্তকারীরা এরপর ফ্লিপকার্টের গুদামে অভিযান চালান। সেখানে ৫৯০ জোড়া নিম্নমানের স্পোর্টস সু পাওয়া যায়। জুতোগুলোর গায়ে উৎপাদনের তারিখ এবং আইএসআই মার্ক ছিল না। বাজেয়াপ্ত এই নকল জুতোর বাজারমূল্য ৬ লক্ষ টাকা।
দেশজুড়ে তল্লাশি, উদ্ধার প্রচুর জাল পণ্য
এই অভিযান শুধু দিল্লি নয়, দেশের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। গুরগাঁও, ফরিদাবাদ, লখনউসহ একাধিক জায়গার ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালানো হয় এবং ৭৬৯ ধরনের প্রচুর জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়। তামিলনাড়ুর পুদুভয়াল এলাকায় আমাজনের গুদাম এবং কোডুভাল্লিতে ফ্লিপকার্টের গুদামেও তল্লাশি চালানো হয়।
আমাজনের গুদাম থেকে উদ্ধার হওয়া কিছু নকল পণ্য:
- সিলিং ফ্যান
- বাচ্চাদের খেলনা ও ডায়াপার
- জলের বোতল
বাজেয়াপ্ত মোট পণ্যের সংখ্যা ৩৩৭৬টি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা।
ফ্লিপকার্টের গুদাম থেকে উদ্ধার:
- ৩৫৮টি ডায়াপার
- স্টেনলেস স্টিলের বোতল
বিআইএসের হুঁশিয়ারি ও সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া

বিআইএস জানিয়েছে, কোনও সংস্থা অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই অভিযানের ফলে ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নকল পণ্য রুখতে সরকারের উদ্যোগ আরও জোরদার হচ্ছে।
অন্যদিকে, আমাজনের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, তারা ভারতে একটি মার্কেটপ্লেস পরিচালনা করে এবং সব আইন ও নিয়ম মেনেই কাজ করে। কোনও অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
তবে এই ঘটনার পর অনলাইন কেনাকাটায় গ্রাহকদের আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। নকল পণ্য এড়াতে কেবলমাত্র বিশ্বস্ত বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ড থেকে কেনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।