আবার ভাইরাস আতঙ্ক! হাঙ্গেরিতে ছড়াল মারণ রোগ, সীমান্ত বন্ধ, জারি লাল সতর্কতা—কী হতে চলেছে এবার?

হাঙ্গেরিতে ছড়াল মারণ রোগ

৫০ বছর পর ফের ভয়ানক ভাইরাসের হানায় কাঁপছে ইউরোপ। হাঙ্গেরির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ফের দেখা দিল ‘পা এবং মুখের রোগ’ (Foot-and-Mouth Disease বা FMD)। একে কেন্দ্র করেই ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, জারি হয়েছে লাল সতর্কতা।

কোথা থেকে শুরু?

২০২৫ সালের মার্চের প্রথমদিকে, স্লোভাকিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন কিসবাজক্স এলাকার একটি গবাদি পশুর খামারে প্রথমবার এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপরই আশেপাশের অঞ্চলেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তাদের সীমান্ত সিল করে দেয় এবং পর্যটকদের জন্য নতুন ভ্রমণ নির্দেশিকা জারি করে।

‘পা এবং মুখের রোগ’

ভাইরাসের উৎস নিয়ে ধোঁয়াশা

হাঙ্গেরির প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব জৈবিক কারণেই হতে পারে। তবে ঘটনাটিকে ঘিরে বাড়ছে সন্দেহ। প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের চিফ অফ স্টাফ, গারগেলি গুলিয়াস এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে দাবি করেন— “ভাইরাসটি প্রাকৃতিক নয়, এটি মনুষ্যসৃষ্ট।”

FMD কী এবং কতটা ভয়ানক?

‘পা ও মুখ রোগ’ হল একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাল ইনফেকশন, যা প্রধানত গবাদি পশু, ছাগল, ভেড়া, শূকর প্রভৃতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মানুষের জন্য সরাসরি প্রাণঘাতী না হলেও, গবাদি পশু শিল্পের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে। এই রোগে সংক্রামিত পশুরা মুখে ও পায়ে ফোসকা ও ঘাতে কষ্ট পায়, জ্বর, খোঁড়া হয়ে পড়া, এবং দুধ উৎপাদনে ব্যাপক হ্রাস দেখা যায়। ছোট গবাদি পশুরা সহজেই মারা যায় বা পঙ্গু হয়ে পড়ে।

সংক্রমণ কত দ্রুত ছড়ায়?

ভাইরাসটি সংক্রামিত পশুর সংস্পর্শ, দূষিত খাবার, জল, সরঞ্জাম এমনকি হাওয়ার মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এটি খুবই দ্রুত ছড়ায় এবং দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পুরো খামার একসঙ্গে সংক্রমিত হতে পারে।

ইউরোপে সীমান্ত সিল, পশু হত্যার সিদ্ধান্ত

বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থা (OIE) জানিয়েছে, প্রথম সংক্রমণের পর থেকে হাঙ্গেরির প্রায় ৩,০০০ গবাদি পশুকে হত্যা করতে হয়েছে ভাইরাস ছড়ানো আটকাতে। সীমান্ত সিল করা হয়েছে অস্ট্রিয়া ও স্লোভাকিয়ার সঙ্গে, যা ইউরোপের কৃষি বাণিজ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে চলেছে।

ইউরোপে সীমান্ত সিল, পশু হত্যার সিদ্ধান্ত

মানুষের জন্য ঝুঁকি কতটা?

ভাইরাসটি মানুষের জন্য খুব একটা বিপজ্জনক নয়। তবে মানবদেহে সংক্রমণের ঘটনা একেবারে বিরল হলেও শূন্য নয়। যদিও এটি পরবর্তী মানব-মহামারীর কারণ হবে না বলেই বিজ্ঞানীদের ধারণা, কিন্তু অর্থনৈতিক ও খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকি বিপুল।

কী হতে চলেছে এবার?

বর্তমানে ইউরোপজুড়ে সতর্কতা জারি হয়েছে। হাঙ্গেরি সরকার ব্যাপক পরিসরে পশুপাল পরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরিদর্শন এবং ট্রেড নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। দেশজুড়ে চাষি ও পশুপালকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই ভাইরাস প্রাকৃতিক, না কি ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো—সে বিতর্ক চললেও, একটি বিষয় স্পষ্ট: ভাইরাস ও সংক্রমণ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রস্তুত থাকা ছাড়া আর কোনও পথ নেই।

হাঙ্গেরির এই পরিস্থিতি আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে—ভাইরাস কখনও নিছক ‘গুজব’ নয়। এটি কখন, কোথা থেকে ফিরে আসবে—তা কেউ জানে না। তাই সতর্ক থাকাই এখন একমাত্র উপায়।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts