নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সকলের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার পাশাপাশি নিজের যত্নের বিষয়েও তাঁদের সচেতন থাকা উচিত। দেরিতে হলেও বর্তমান যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। এর ফলে ক্যানসার এখন আর অতটা ভীতিকর রোগ নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যানসারের নিরাময় সম্ভব।
সময় থাকতেই সাবধান হোন:
নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার এবং জরায়ুমুখের ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ছে। ৫টি পরীক্ষা জীবন বাঁচাতে পারে। অতিরিক্ত ওজন এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এর অন্যতম কারণ। চিকিৎসকেরা বলছেন, ৩০ বছর পেরোলেই কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি, যা ক্যানসারের আগাম আভাস দিতে পারে।
কোন ৫টি পরীক্ষা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাবে?
১. প্যাপ টেস্ট (Pap Test) :
প্যাপ টেস্ট জরায়ুমুখের ক্যানসার নির্ণয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষায় জরায়ুমুখ থেকে কোষের নমুনা সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমে কোষের অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত বিভাজন হচ্ছে কি না, তা দেখা যায়। সাধারণত ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সী নারীদের নিয়মিত প্যাপ টেস্ট করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতি তিন বছর অন্তর এই পরীক্ষা করালে জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে এবং নিরাময় সম্ভব হয়।
২. ম্যামোগ্রাম (Mammogram) :
ম্যামোগ্রাম স্তন ক্যানসার শনাক্ত করতে জরুরি। এটি এক বিশেষ ধরনের এক্স-রে, যা স্তনের কোষের অনিয়মিত বৃদ্ধি সম্পর্কে তথ্য দেয়। স্তনের ভেতরে কোনো মাংসপিণ্ড বা টিউমার থাকলে এই পরীক্ষা তা শনাক্ত করতে পারে। ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের প্রতি ১ থেকে ২ বছর অন্তর ম্যামোগ্রাম করিয়ে রাখা উচিত।
৩. এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট (HPV DNA Test) :
জরায়ুমুখের কোষে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)-এর উপস্থিতি নির্ণয় করতে এই পরীক্ষা করা হয়। যদি ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি ছড়িয়ে থাকে, তাহলে প্যাপ টেস্টের পাশাপাশি এইচপিভি ডিএনএ টেস্টও করানো প্রয়োজন। ৩০ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে প্যাপ টেস্টের সঙ্গে প্রতি ৫ বছর অন্তর এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট করালে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

৪. বিআরসিএ১ এবং বিআরসিএ২ জিন টেস্টিং (BRCA1 and BRCA2 Gene Testing) :
স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার নির্ণয়ে বিআরসিএ১ এবং বিআরসিএ২ জিন টেস্টিং নামক এই দুটি পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ সহজে ধরা পড়ে না। তাই পরিবারে যদি স্তন ক্যানসার, জরায়ুমুখের ক্যানসার বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তাহলে ৩০ বছর পেরোলেই এই দুই জিন স্ক্রিনিং করিয়ে রাখা জরুরি।
৫. হিস্টেরোস্কোপি (Hysteroscopy) :
এই পদ্ধতিতে একটি ক্যামেরা বসানো নল (হিস্টেরোস্কোপ) যোনি এবং জরায়ুমুখের মধ্য দিয়ে জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়। এর ক্যামেরার সাহায্যে জরায়ুর ভেতরের অংশ সরাসরি দেখা যায়। জরায়ুর ভেতরের আস্তরণ বা এন্ডোমেট্রিয়ামের কোনো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, পলিপ বা টিউমার আছে কি না, তা নির্ণয়ে এই পরীক্ষা কার্যকর।
নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হোন এবং সময় মতো এই পরীক্ষাগুলো করিয়ে সুস্থ জীবনযাপন করুন। আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া কেবল আপনার জন্য নয়, আপনার পরিবারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।