কাঁচরাপাড়ার বাঘমোরে অবস্থিত একটি জিম সেন্টারে ২০২৪ সালের প্রথমদিকে একাধিক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে। কসরত করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউবা পিঠে আঁচড় লাগার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এইসব অদ্ভুত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, যা দাবি করছে, ওই জিমে অশরীরী শক্তির উপস্থিতি রয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে ওঠে যে, শেষ পর্যন্ত জিমটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি কী?
জিম সেন্টারে আসা বেশ কিছু যুবক-যুবতী কসরত করতে গিয়ে একের পর এক অস্বাভাবিক ঘটনার শিকার হচ্ছেন। কেউ অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন, আবার কারো শরীরে আঘাত লাগছে। ঘটনাগুলোর পরপরই স্থানীয়রা মনে করছেন, জিমের ভিতরে কোনো অশরীরী শক্তির উপস্থিতি রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কর্তৃপক্ষ কোনো অস্বাভাবিক কিছু খুঁজে পায়নি, তবে স্থানীয়রা দাবি করছে, এটা কিছু গভীর রহস্যের ফল।

জিম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য :
জিমের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে জানা যায়, কাঁচরাপাড়া শাখাটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। শিল্পা পোদ্দার নামের জিমের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলেন, “এই মুহূর্তে জিম পুনরায় খোলার সম্ভাবনা নেই। যাঁরা এখানে কাজ করেন, তাঁদের জীবন ঝুঁকিতে রাখা সম্ভব নয়।” তিনি ওই সময় জানান, মাত্র ছয় মাস আগে জিমটি খোলা হয়েছিল, তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটার পর থেকেই সেখানে অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়েছে।
ডিটেকটিভ অফ সুপারন্যাচারালের তদন্ত :
এই ঘটনার তদন্ত করেছেন ডিটেকটিভ অফ সুপারন্যাচারালের (DOS) প্রতিষ্ঠাতা দেবরাজ সান্যাল। তাঁর দল এই ঘটনার পেছনে কী রহস্য রয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। দেবরাজ সান্যাল এই বিষয়ে জানিয়েছিলেন, “দুই মাস ধরে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, যার তদন্ত করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনার পেছনে তিনটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে: প্রথমত, বিষাক্ত গ্যাসের কারণে, দ্বিতীয়ত, সবাই হয়তো এ নিয়ে নাটক করছে, বা তৃতীয়ত, সত্যিই যদি কিছু অশরীরী শক্তি এখানে উপস্থিত থাকে।”
তিনি জানিয়েছেন, আগেও বহু ‘ভুতুড়ে’ ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন, তবে এই ঘটনায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। গ্যাস লিকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না, এবং পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যুক্তিবাদীদের মত :
এ বিষয়ে বিজ্ঞানের পক্ষ থেকে যুক্তিবাদী সংগঠনের সম্পাদক দীপক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “এটি একটি গণ হিস্টিরিয়ার ফল, যা মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।” তাঁর মতে, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি একাধিকবার রাজ্যে ঘটেছে এবং এগুলো মূলত মানসিক সমস্যা। তিনি আরও বলেন, “ভূত বা জিন বলে কিছু নেই, এটি কুসংস্কার। যারা এই ধরনের আতঙ্কে ভুগছেন, তাদের মানসিক চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত।”

কাঁচরাপাড়ার বাঘমোরে জিম সেন্টারের ঘটনা বর্তমানে একটি রহস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানী এবং যুক্তিবাদীরা এটিকে একটি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হিসেবে দেখছেন। তবে, এখনও পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট কারণ বের করা যায়নি, এবং তদন্ত চলছে।
এখনও প্রশ্ন রয়ে গেছে—জিমে ঘটে যাওয়া এসব অস্বাভাবিক ঘটনা কি সত্যিই কোনো অশরীরী শক্তির ফল, না কি এটি শুধুমাত্র মানসিক আতঙ্কের ফলস্বরূপ? সময়ই বলবে, তবে যতদিন না একটি নিশ্চিত উত্তর পাওয়া যায়, ততদিন এই রহস্য হয়তো মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেই যাবে।