মানুষের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল ডিএনএ। এটি কেবল একজন ব্যক্তির বংশপরিচয় নয়, পাশাপাশি আমাদের অস্তিত্বেরও মূল ভিত্তি। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে সেই ডিএনএ কৃত্রিমভাবে তৈরির এক যুগান্তকারী প্রকল্প হাতে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যা একদিকে যেমন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে জন্ম দিয়েছে গভীর বিতর্ক আর প্রশ্নের।
বিতর্কের কেন্দ্র এই কৃত্রিম ডিএনএ :
একটি বিতর্কিত তথা উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এবার মানুষের কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই কাজে বিশ্বের বৃহত্তম মেডিকেল চ্যারিটি (চিকিৎসা বিষয়ক দাতব্য সংস্থা) প্রায় ১১৭ কোটি টাকার মতো বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই প্রকল্পে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন।
এই প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হলো কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করে মানবজীবনকে আরও উন্নত করা। চিকিৎসক জুলিয়ান সালেহ-এর মতে, আকাশের উচ্চতায় উঠতে হবে। মানুষের জীবনে আরও উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। ফলে সেখান থেকে নতুন করে সমস্ত তৈরি করতে হবে। যদি কৃত্রিমভাবে ডিএনএ তৈরি করা যায় তাহলে সেখান থেকে নতুন দিগন্ত সামনে উঠে আসবে।
তাঁর কথায়, এই গবেষণা মানবজাতির জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
বিজ্ঞানীদের যুক্তি নিয়ে আশঙ্কার মেঘ :

উল্লেখ্য এই গবেষণার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কৃত্রিম ডিএনএ তৈরির অর্থ কি মানুষের বংশপরিচয়কে বিপন্ন করা? সামাজিক মাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
নেটিজেনরা বলছেন, ডিএনএ মানুষের প্রধান শক্তি, যা মানুষের বংশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এভাবে এর কৃত্রিম সৃষ্টির প্রক্রিয়া ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে পরীক্ষাগারে মানুষ তৈরির পথ খুলে যেতে পারে, যা পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বকেই সংকটে ফেলবে। মানুষের মধ্যে এই আশঙ্কা দানা বাঁধছে যে, এই কাজ শেষ হলে মানুষ নিজেকে ‘ভগবান’ ভাবতে শুরু করতে পারে।
তবে এই সমস্ত বিতর্ককে বিজ্ঞানীরা আপাতত ‘অযৌক্তিক’ বলে মনে করছেন। তাদের বক্তব্য, এটি নিছকই একটি পরীক্ষা মাত্র, এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। তাই এখনই এটি নিয়ে এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এই প্রকল্পে আরও অনেক অর্থ খরচ হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা, কারণ এই প্রকল্প নিয়ে সকলের আগ্রহ তুঙ্গে। তারা এর শেষ দেখে তবেই ছাড়বেন।
কৃত্রিম ডিএনএ তৈরির এই গবেষণা মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ হবে নাকি তা এক নতুন সংকটের জন্ম দেবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।