স্বামী তো পারেননি, করল এআই! ১৮ বছর পর মা হচ্ছেন যুবতী

স্বামী তো পারেননি, করল এআই! ১৮ বছর পর মা হচ্ছেন যুবতী

১৮ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষা, অসংখ্য চেষ্টা এবং চিকিৎসকদের হতাশাজনক বার্তা—সবকিছুকে পেছনে ফেলে এক অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। যে দম্পতিকে ডাক্তাররা জানিয়ে দিয়েছিলেন, আইভিএফ-এর মাধ্যমেও তাঁদের পক্ষে মা-বাবা হওয়া সম্ভব নয়, সেই দম্পতির কোল আলো করে এসেছে ফুটফুটে সন্তান। আর এই অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছে এআই! চলুন জেনে নেই কিভাবে এই অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে।

১৮ বছরের সংগ্রাম :

১৮ বছর ধরে এক দম্পতি সন্তানের মুখ দেখার জন্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁরা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ (IVF) পদ্ধতির দ্বারস্থ হন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।

চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, তাঁদের পক্ষে কোনো দিনই মা-বাবা হওয়া সম্ভব নয়, কারণ তাঁদের দুজনেরই বন্ধ্যত্ব রয়েছে। বিশেষত, পুরুষ সঙ্গীর শুক্রাণুর সংখ্যা এতটাই কম ছিল যে আইভিএফও সঠিক ভাবে কাজ করবে না বলে জানানো হয়েছিল। এই গভীর হতাশার মধ্যে থেকেও আশার আলো দেখাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

এআইয়ের জাদুকরী হস্তক্ষেপ:

চিকিৎসা বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্রমশই অপরিহার্য হয়ে উঠছে। রোগের কারণ নির্ণয় থেকে শুরু করে ওষুধ তৈরি, এমনকি অত্যাধুনিক রোবটিক সার্জারিতেও এআই-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর এখন দেখা যাচ্ছে, বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণেও এআই এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

যারা প্রাকৃতিক বা জৈবিক উপায়ে সন্তান লাভে ব্যর্থ হন, তাদের জন্য আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান ‘টেস্ট টিউব বেবি’ বা আইভিএফ পদ্ধতি নিয়ে এসেছে। এই পদ্ধতিতে মায়ের শরীর থেকে ডিম্বাণু এবং বাবার শুক্রাণুর নিষেক শরীরের বাইরে ঘটানো হয়। এরপর তৈরি হওয়া ভ্রূণ মায়ের গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়।

এআইয়ের জাদুকরী হস্তক্ষেপ:

ওভারিতে সিস্ট, ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ, এন্ডোমেট্রিওসিস বা পলিসিস্টিক ওভারির মতো সমস্যা থাকলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যদিও এর সাফল্যের হার বেশি, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এটি ব্যর্থও হয়, যেমনটি হয়েছিল এই দম্পতির ক্ষেত্রে। কারণ পুরুষ সঙ্গীর ছিল ‘অ্যাজোস্পার্মিয়া’ (Azoospermia)।

অ্যাজোস্পার্মিয়া এমন একটি সমস্যা যেখানে শুক্রাণু উৎপাদনের হার মারাত্মকভাবে কমে যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন প্রায় ১২ কোটির বেশি শুক্রাণু তৈরি হলেও, অ্যাজোস্পার্মিয়া আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা অনেক কমে যায় এবং শুক্রাণুর গুণগত মানও হ্রাস পায়। ফলে এই শুক্রাণু দিয়ে নিষেক ঘটানো সম্ভব হয় না এবং আইভিএফও কার্যকরী হয় না।

ঠিক এখানেই নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল এআই। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ‘স্টার’ (STAR) নামক এক বিশেষ প্রযুক্তি তৈরি করেছেন। এই প্রযুক্তি শুক্রাশয়ের কোটি কোটি শুক্রাণুর মধ্যে থেকে গুণগত মান সম্পন্ন নির্দিষ্ট শুক্রাণুগুলোকে চিহ্নিত করতে সক্ষম।

এই দম্পতির ক্ষেত্রেও, পুরুষ সঙ্গীর শুক্রাণুর নমুনা থেকে এআই মাত্র তিনটি বিশেষ শুক্রাণুকে আলাদা করতে সক্ষম হয়। এই তিনটি শুক্রাণুই ছিল শেষ সম্বল, যা ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে পারত।

সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এই বিশেষ তিনটি শুক্রাণুকে খুঁজে বের করা কার্যত অসম্ভব ছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেই কাজটিই নিখুঁতভাবে করে দেয়। ফলস্বরূপ, আইভিএফ সফল হয় এবং নির্ধারিত সময়েই দম্পতির কোলে আসে তাদের বহু প্রতীক্ষিত সন্তান।

RIma Sinha

Rima Sinha is a professional journalist and writer with a strong academic background in media and communication. She holds a Bachelor of Arts from Tripura University and a Master’s degree in Journalism and Mass Communication from Chandigarh University. With experience in reporting, feature writing, and digital content creation, Rima focuses on delivering accurate and engaging news stories to Bengali readers. Her commitment to ethical journalism and storytelling makes her a trusted voice in the field.

Recent Posts