২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রয়াগরাজে শুরু হওয়া মহাকুম্ভে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার সাধু-সন্ন্যাসীরা সমবেত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ব্যক্তি বিশেষভাবে সকলের দৃষ্টি কেড়েছেন। তিনি হলেন মাসানি গোরখ বাবা, যিনি আগে আইআইটি মুম্বই থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন।
আইআইটি মুম্বই ভারতের অন্যতম সেরা প্রযুক্তিগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে পড়ার স্বপ্ন দেখে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী। কিন্তু এখানে ভর্তি হওয়া সহজ কাজ নয়। তাই আইআইটি থেকে পাস করা একজনের জন্য এক বিরাট অর্জন। কিন্তু মাসানি গোরখ বাবা এই সুযোগকে ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছেন।
একজন সফল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরিবর্তে সন্ন্যাসী হওয়ার এই সিদ্ধান্ত সকলকে চমকে দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এই ঘটনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। লোকজন নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। কেউ কেউ তাঁর এই সিদ্ধান্তকে প্রশংসা করছেন, আবার কেউ কেউ বিস্মিত হয়েছেন।
মাসানি গোরখ বাবার এই গল্প আমাদের ভাবিয়ে তোলে, জীবনে সফলতা কী? সুখী হওয়ার জন্য কী করা উচিত? তাঁর জীবন প্রমাণ করে যে এই প্রশ্নের উত্তর সবার জন্য আলাদা হতে পারে।
আইআইটি বাবা একজন প্রাক্তন এয়ার স্পেস এবং অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। হরিয়ানার বাসিন্দা এই ব্যক্তির আসল নাম অভয় সিং। একজন সফল কর্মজীবন ছেড়ে তিনি কীভাবে সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন, তা জানলে অনেকেই অবাক হবেন।
অভয় সিংয়ের স্বপ্ন ছিল ফটোগ্রাফার হওয়া। কিন্তু ফটোগ্রাফিতে ভালো চাকরি পেতে ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। এই কারণে তিনি একসময় কোচিংও পড়াতেন। তিনি নিজেই বলেন, তাঁর জীবন যেন হিন্দি সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর মতো।
একজন সফল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও অভয় সিং কেন সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন, তা নিয়ে অনেকেরই কৌতূহল রয়েছে। সম্ভবত, তিনি জীবনের আরও গভীর অর্থ খুঁজতে এই পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।

আইআইটি বাবার জীবনকাহিনি আমাদের শিক্ষা দেয় যে জীবন যাপনের একাধিক উপায় রয়েছে। সফলতা শুধুমাত্র পেশাগত জীবনেই সম্ভব নয়। আধ্যাত্মিক জীবনও জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এক সাক্ষাৎকারে আইআইটি বাবা তাঁর জীবনের অনেক গোপন তথ্য প্রকাশ করেছেন। একজন সফল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরেও তিনি কেন সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, জ্ঞান অর্জন করা ভালো, কিন্তু জীবনের সত্যি অর্থ খুঁজতে গেলে অনেক দূর যেতে হয়।
আইআইটি মুম্বই থেকে পড়াশোনা শেষ করে আইআইটি বাবা পদার্থবিজ্ঞানের কোচিংও করেছেন। এরপর আবেগের বশে তিনি ফটোগ্রাফি শিখতে শুরু করেন। ডিজাইনিংয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেও তিনি মনে শান্তি পাননি। তিনি বলেন, জীবনে আমি অনেক কিছু করেছি, কিন্তু ভিতরে একটা শূন্যতা থেকেই গেছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং ছিল তাঁর প্রথম পছন্দ, কিন্তু তা তাঁকে সুখী করতে পারেনি। এরপর তিনি ট্রাভেল ফটোগ্রাফি শুরু করেন, আশা করেছিলেন এই কাজ তাঁকে সুখ দেবে। কিন্তু সেটাও তাঁর ভিতরের শূন্যতা পূরণ করতে পারেনি।
অবশেষে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। আজ তিনি প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে আছেন এবং মহাকুম্ভ উপভোগ করছেন। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় ক্ষেত্রে ঘুরে বেড়ান এবং মানুষকে জীবনের সত্যি অর্থ সম্পর্কে শিক্ষা দেন।
আইআইটি বাবার জীবন গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় যে, জীবনে সফল হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সত্যি সুখ পাওয়ার জন্য আত্মাকে শান্ত করতে হবে।