ভাবুন তো, আপনি বসে আছেন ট্রেনের জানালার পাশে। বাইরের দৃশ্য চোখ ফেরাতে দিচ্ছে না—বরফে মোড়া পাহাড়, কখনো বিশাল গভীর খাঁদ, তো কখনো অন্ধকার টানেলের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলা ট্রেন। এটাই হতে চলেছে ভারতের রেলের সবচেয়ে বিস্ময়কর যাত্রা, যা এবার সত্যি হতে চলেছে!
২৭২ কিমি পথ, মাত্র ৩ ঘণ্টায়! স্বপ্ন নয়, এটাই বাস্তব!

ভারতীয় রেল (Indian Railways) ২৮ বছর আগে শুরু করা স্বপ্নের প্রকল্প অবশেষে বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। ১৯৯৭ সালে যে পথচলার শুরু, ২০২৪ সালের ১৯ এপ্রিল তা পূর্ণতা পেতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরেই সূচনা হবে এই ঐতিহাসিক যাত্রার।
কোথা থেকে কোথায় চলবে এই ট্রেন?
এই অত্যাধুনিক রেলপথে চালানো হবে ‘বন্দে ভারত সেমি হাই-স্পিড ট্রেন’, যা চলবে জম্মুর কাটরা স্টেশন থেকে কাশ্মীরের শ্রীনগর পর্যন্ত। এতদিন পর্যন্ত জম্মু থেকে শ্রীনগর যেতে গাড়িতে সময় লাগত ৭ ঘণ্টার বেশি। তুষারপাত হলে অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হত। এবার সেই সব সমস্যার সমাধান হতে চলেছে।
এই রেলপথে যা থাকছে, তা এক কথায় ‘অবিশ্বাস্য’!
- ৯২৭টি সেতু, ছোট-বড় মিলিয়ে
- ৩৬টি সুড়ঙ্গ, যার মধ্যে ১১৯ কিমি ট্রেন চলবে একটানা টানেলের ভিতর দিয়ে
- বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেলসেতু—চেনাব সেতু, যার উচ্চতা ৩৫৯ মিটার, যা আইফেল টাওয়ারের থেকেও ৩৫ মিটার বেশি!
- ভারতের প্রথম কেবল-স্টেড রেল সেতু—অঞ্জি নদীর উপর নির্মিত
- ৩০,০০০ টন স্টিল ব্যবহার, যা ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকবে!

বিশেষ কিছু টানেল যা নজর কেড়েছে:
- T-50 টানেল: ভারতের দীর্ঘতম ট্রান্সপোর্ট টানেল, দৈর্ঘ্য ১২.৭৭ কিমি
- T-80 টানেল: দ্বিতীয় দীর্ঘ, ১১.২ কিমি, বরফে ঢাকা পির পাঞ্জাল পর্বতের নিচে
- T-34 টানেল: ৫ কিমি দীর্ঘ, সংযুক্ত অঞ্জি খাড় সেতুর সঙ্গে
- T-33 টানেল: ৩.২ কিমি, তৈরি হয়েছে ত্রিকুট পাহাড়ে
এই রেলপথ বদলে দেবে ভারতের মানচিত্র!
শুধু জম্মু-কাশ্মীর নয়, সমগ্র দেশের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযোগ আরও মজবুত করবে এই প্রকল্প। পর্যটন, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা—সব দিক থেকেই এই রেললাইন হয়ে উঠবে গেম চেঞ্জার।
এক কথায়, ভারতের রেল ইতিহাসে শুরু হতে চলেছে এক নতুন যুগ! পাহাড়, সেতু, সুড়ঙ্গ আর আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনে গড়ে উঠছে রেলপথের এক বিস্ময়কর অধ্যায়।
এমন যাত্রা আপনি কি মিস করতে পারবেন? চোখ রাখুন, শিগগিরই খুলছে এই রেল স্বপ্নের দরজা!