ভারতের শেষ গ্রাম—এই বিশেষণটি এমন একটি গ্রামকে নিয়ে ব্যবহৃত হয়, যা ভারতের উত্তর সীমান্তে অবস্থিত। চমকপ্রদ হলেও, এই গ্রামের পরিস্থিতি বর্তমানে ভয়ংকর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার মানা গ্রাম, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০,৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত, একসময় শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশের জন্য পরিচিত ছিল। তবে, আজ তা বরফের তলায় চাপা পড়ে গেছে এবং এখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
মানা গ্রামটি ভারত ও তিব্বতের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। বদ্রীনাথ ধাম থেকে কিছুটা দূরেই এই গ্রামটির অবস্থান। প্রতিবছর বহু মানুষ ঘুরতে আসেন শুধুমাত্র এই গ্রামটির বিশেষত্ব ও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে। এটি ভারতের শেষ গ্রাম হিসেবে পরিচিত এবং ভারতীয় ভূখণ্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থান করে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভয়াবহ পরিস্থিতি

সম্প্রতি, এখানকার পরিস্থিতি অত্যন্ত চরম হয়ে উঠেছে। ভারী তুষারপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মানা গ্রাম প্রায় সম্পূর্ণভাবে বরফে ঢাকা পড়ে গেছে। এর ফলে, গ্রামটির বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বিশেষত, এই দুর্যোগে গ্রামটির অন্তত ৪২ জন নিখোঁজ হয়ে গেছে, যাদের সন্ধানে উদ্ধারকারী দল কাজ করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের বাড়ির ভেতরে আছেও, তবে বরফের তলায় চাপা পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্ধার অভিযান চলতে থাকলেও, তুষারঝড় এবং অতিরিক্ত তুষারের কারণে তা জটিল হয়ে উঠছে।
কী ঘটেছে?
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মূল কারণ হলো অতিরিক্ত তুষারপাত ও হিমবাহের ধস। বরফের ভার অনেক সময় বাড়তে থাকে এবং এর ফলে জমে থাকা তুষার ও হিমবাহ ধসে পড়তে পারে, যা বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। মানা গ্রামটি এরকম বিপদজনক অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে বছরের বেশিরভাগ সময়ই তুষারপাত হয়।
এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত পরিবর্তনও এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এসব কারণে মানা গ্রামসহ আশপাশের এলাকা গুলোর পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
উদ্ধার অভিযান ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
বর্তমানে, উদ্ধারকারী দলগুলো গ্রামটির বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে কাজ করছে। তবে বরফে ঢাকা পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায়, এই অভিযান বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী এই কাজের জন্য বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে, এবং তারা আশা করছেন, শিগগিরই নিখোঁজদের উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

এছাড়া, এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরবর্তীতে বাঁচার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।
মানা গ্রাম ভারতের শেষ গ্রাম হিসেবে পরিচিত হলেও, এর প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিণতি আমাদের একটি কঠিন বার্তা দিয়েছে। পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঝুঁকি এখন আর শুধু বিচ্ছিন্ন এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এক বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরনের দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হলে আমাদের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রতি সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রস্তুতি গ্রহণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।