৬০ সেকেন্ডে মিলছে তৎকাল টিকিট!নেটদুনিয়ায় বিক্রি হচ্ছে আধার-ভেরিফায়েড পরিচয়পত্র

৬০ সেকেন্ডে মিলছে তৎকাল টিকিট

যাত্রীদের চাহিদা যেখানে প্রয়োজনের তুঙ্গে, সেখানেই তৈরি হয়েছে আর এক ‘কালোবাজারি বাজার’। হ্যাঁ, আমরা কথা বলছি তৎকাল টিকিটের! হঠাৎ যদি দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে হয়, অনেকেই ভরসা রাখেন তৎকাল কোটা-র ওপর। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, প্ল্যাটফর্ম খোলেই না ঠিকমতো, IRCTC অ্যাপ বারবার ক্র্যাশ করে, লগ-ইন হয় না, বুকিং তো অনেক পরের কথা।

তবে অবাক করার মতো বিষয় হল, কিছু কিছু এজেন্টের কাছে এই তৎকাল টিকিট যেন জলের মতো সহজ। একবার টাকা দিলেই মিনিটের মধ্যে মিলছে কনফার্ম টিকিট। প্রশ্ন উঠছে—কীভাবে এত সহজে সম্ভব?

বট বা ব্রাউজার এক্সটেনশন ব্যবহার করে তৎকাল টিকিট চুরি!

একাধিক প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, বিশেষ ধরনের বট বা ব্রাউজার এক্সটেনশন ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুরো টিকিট বুকিং প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়। এসব সফটওয়্যার এতটাই দ্রুতগতিতে কাজ করে যে চোখের নিমেষে লগইন, যাত্রী তথ্য, পেমেন্ট—সব কিছু হয়ে যায়। ফলে সাধারণ মানুষ পিছিয়ে পড়েন, কারণ তাঁরা করছেন ম্যানুয়াল বুকিং।

রেলমন্ত্রকের তথ্যমতে, তৎকাল বুকিং শুরুর প্রথম ৫ মিনিটে লগইনের ৫০% হয় বট-এর মাধ্যমে।

আধার-ভেরিফায়েড IRCTC আইডির বেচাকেনা চলছে!

১ জুলাই থেকে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে—শুধু আধার-অথেন্টিকেটেড ইউজার আইডি দিয়েই কাটতে হবে তৎকাল টিকিট। আর তার পর থেকেই বাজারে শুরু হয়েছে এইসব ইউজার আইডির অবৈধ বেচাকেনা।

হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের একাধিক গ্রুপে (প্রতিবেদনে অন্তত ৪০টি গ্রুপের উল্লেখ রয়েছে), এই ধরনের ভেরিফায়েড আইডি ৩৫০–৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লক্ষ্য কেবল এজেন্ট নয়, সাধারণ মানুষকেও টোপ দেওয়া হচ্ছে—যাঁরা প্রায়শই ট্রেনে যাতায়াত করেন, তাঁদের আর এজেন্টের কাছে না গিয়ে নিজেরাই যেন “এজেন্ট” হয়ে যান!

কোন কোন বট ব্যবহার হয়?

আধার-ভেরিফায়েড IRCTC আইডির বেচাকেনা চলছে!

টেলিগ্রামের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে এইসব সফটওয়্যার বা এক্সটেনশনের লিঙ্ক। কিছু জনপ্রিয় নাম:

  • 🐉 Dragon
  • ✈️ JetX
  • 🐢 Black Turbo

এই বট বা অ্যাপের দাম ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত!

নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ :

এই ধরনের সফটওয়্যারে ম্যালওয়্যার লুকিয়ে থাকতে পারে। একবার ডিভাইসে ঢুকলেই চুরি করে নিতে পারে আপনার—

  • ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য
  • আধার ও প্যান নম্বর
  • ব্যক্তিগত ছবি ও ডকুমেন্ট

এই তথ্য পরে ডার্ক ওয়েব বা কালোবাজারে বিক্রি হয়ে যেতে পারে। সাইবার অপরাধের সম্ভাবনাও বাড়ছে।

IRCTC-এর পদক্ষেপ যথেষ্ট কি?

IRCTC সন্দেহজনক IP অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে, এমনকি ব্লকও করে দেয়। কিন্তু হ্যাকার বা স্ক্রিপ্ট ব্যবহারকারীরা এখন ব্যবহার করছে VPN বা VPS (ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার), যার মাধ্যমে সহজেই নজরদারির হাত এড়িয়ে যাচ্ছে।

এত বড় পরিসরের জালিয়াতি শুধুমাত্র প্রযুক্তির মাধ্যমে আটকানো কঠিন। রেলমন্ত্রক ও সাইবার সেলকে একসঙ্গে কাজ করে কঠোর নজরদারি ও আইন প্রয়োগ করতে হবে। একইসঙ্গে সচেতন হতে হবে আমজনতাকেও। বট বা শর্টকাটের প্রলোভনে নিজের পরিচয় এবং নিরাপত্তা কেউ যেন বিকিয়ে না দেন।

RIma Sinha

Rima Sinha is a professional journalist and writer with a strong academic background in media and communication. She holds a Bachelor of Arts from Tripura University and a Master’s degree in Journalism and Mass Communication from Chandigarh University. With experience in reporting, feature writing, and digital content creation, Rima focuses on delivering accurate and engaging news stories to Bengali readers. Her commitment to ethical journalism and storytelling makes her a trusted voice in the field.

Recent Posts