হৃদয়ে লুকিয়ে সংকেত! ব্লকেজ হচ্ছে কি না, ঘরেই বুঝে নিন এই লক্ষণগুলি দেখে

হৃদয়ে লুকিয়ে সংকেত! ব্লকেজ হচ্ছে কি না, ঘরেই বুঝে নিন

হার্ট ব্লকেজ এমন একটি গুরুতর সমস্যা যে, সময়মতো বুঝে গেলে প্রাণ রক্ষা পেতে পারে। চলুন শুরুতে এর কী কী লক্ষণ দেখা যায়, জেনে নেওয়া যাক।

হার্ট ব্লক কী?

আমাদের হৃদপিণ্ড একটি সুসংগঠিত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ করে। এর কার্যকারিতায় বৈদ্যুতিক আবেগ (electrical impulses) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মূলত, ডান অলিন্দের সাইনোএট্রিয়াল (SA) নোড থেকে এই বৈদ্যুতিক আবেগ উৎপন্ন হয়।

এরপর এই আবেগ অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার (AV) নোড-এর মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের নিচের প্রকোষ্ঠ, অর্থাৎ ভেন্ট্রিকলে পৌঁছায়। এই বৈদ্যুতিক সংকেত ভেন্ট্রিকলগুলোকে সংকুচিত হতে সাহায্য করে, যার ফলে হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করে সারা শরীরে পৌঁছে দিতে পারে।

কিন্তু যখন হার্ট ব্লক হয়, তখন এই বৈদ্যুতিক আবেগ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয় বা ব্যাহত হয়। এর ফলে ভেন্ট্রিকলগুলো ঠিকমতো বা স্বাভাবিক ছন্দে সংকুচিত হতে পারে না এবং রক্ত পাম্প করার প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। এই সমস্যার কারণে হৃদস্পন্দন ধীর বা অনিয়মিত হয়ে পড়ে, যা শরীরের স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালনকে প্রভাবিত করতে পারে।

সহজ ভাষায়, হার্ট ব্লক হল হৃদপিণ্ডের নিজস্ব বৈদ্যুতিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক ধরনের ‘ট্রাফিক জ্যাম’, যা হৃদপিণ্ডের পাম্প করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

হার্ট ব্লকেজের প্রথম লক্ষণ:

হালকা ব্যথা বা চাপ অনুভব করা, যা দৈহিক কসরতের পর বাড়তে পারে। বুকের মাঝে বা বাঁ দিকে এমন অস্বস্তি অনুভব করলে সতর্ক হন।

হার্ট ব্লক কী?

অন্যান্য লক্ষণগুলো জেনে নিন :

  • শ্বাস নিতে সমস্যা: সিঁড়ি চড়লে বা অল্পবিস্তর কসরত করলে যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, তাহলে এটা হৃদয় পর্যন্ত পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোর সংকেত হতে পারে। ছোট ছোট শ্বাস নেওয়া বা দম ফুরিয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে।
  • মাথা ঘোরা: রক্তপ্রবাহ কম হলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে। এর ফলে হঠাৎ করে মাথা ঘুরতে পারে, এমনকি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন।
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি: পুরো আরাম করার পরেও যদি ক্লান্তি থাকে, তাহলে এটা হার্টের দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে। দৈনন্দিন কাজ করতেও যদি অস্বাভাবিক ক্লান্তি লাগে, তবে খেয়াল করুন।
  • অকারণ ঘাম: কোনো পরিশ্রম না করেও যদি অতিরিক্ত ঘাম হতে থাকে, তাহলে এটা হৃদয়ে অনাবশ্যক চাপের কারণেও হতে পারে। বিশেষ করে রাতে ঘুমোনোর সময় বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঘাম হওয়া চিন্তার কারণ।
  • পায়ে ব্যথা: পায়ে রক্তপ্রবাহ কম হওয়ার কারণে, হাঁটার সময় পায়ে ব্যথা হতে পারে। একে ‘ক্লডিকেশন’ বলা হয় এবং এটাও হার্ট ব্লকেজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। পায়ের পেশিতে টান বা অসাড়তা অনুভব করতে পারেন।
  • হজমজনিত সমস্যা: বারবার গ্যাস, হজম না হওয়া, বুক-জ্বালার মতো সমস্যাও কখনো কখনো হার্ট ব্লকেজের লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের ব্যথাকে গ্যাসের ব্যথা বলে ভুল করা হয়।

এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনোটি যদি আপনার মধ্যে দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হন এবং কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে অবহেলা করবেন না।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts