গতি বাড়ানো থেকে শুরু করে পরিকাঠামো উন্নয়ন, রেল এখন প্রতিদিনই নতুন নতুন চমক দিয়ে চলেছে। গত কিছু বছরে রেল পরিষেবায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে, যার মধ্যে অন্যতম হল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, যা রেলের গতিকে অনেকটাই বৃদ্ধি করেছে। এছাড়াও, বুলেট ট্রেনের প্রকল্পও শুরু হয়ে গেছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের ট্রেন যাত্রার দৃশ্যপট পালটে দিতে পারে। কিন্তু এবার রেলপথে যে নতুন প্রযুক্তি আসছে, তা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে যাত্রী পরিবহণের গতি। আর তা হলো হাইপারলুপ।

হাইপারলুপ এমন এক প্রযুক্তি, যা পৃথিবী জুড়ে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এর আগে এই প্রযুক্তি নিয়ে অনেক কথাবার্তা শোনা গিয়েছিল, তবে এবার তা বাস্তবায়নের পথে একধাপ এগিয়ে গেল। সম্প্রতি, রেল মন্ত্রকের সাহায্যে আইআইটি মাদ্রাজ একটি হাইপারলুপ ট্র্যাক তৈরি করেছে। এই ট্র্যাকটি ৪২২ মিটার লম্বা এবং এটি পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করা হয়েছে।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্স প্ল্যাটফর্মে এই ট্র্যাকের একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে জানিয়েছেন, “হাইপারলুপ টেস্ট ট্র্যাক” রেলপথ মন্ত্রকের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, সারা বিশ্বে এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ চলছে এবং এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার উপযোগী হলে এর ব্যবহার কোথায় হবে, সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
হাইপারলুপ সিস্টেম একটি বিশেষ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করবে, যেখানে চৌম্বকীয় বলের উপর ভিত্তি করে ট্রেন চলবে। এই প্রযুক্তি এমনভাবে কাজ করবে, যাতে ট্রেনটি এক ধরনের বিশেষ টিউবের ভিতর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। বিমান এবং বুলেট ট্রেনের তুলনায় এটি অনেক বেশি গতি দিতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি রূপায়িত হলে, পরিবহণ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। যাত্রীরা একদিকে যেমন অনেক সময় বাঁচাতে পারবেন, তেমনি এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়ার জন্য আরও কম সময় লাগবে।
আগামী দিনে, বেঙ্গালুরু-চেন্নাই রুটে হাইপারলুপ ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যদি এটি সফল হয়, তবে ভারতে হাইপারলুপ প্রযুক্তির বিস্তার ঘটবে এবং বিভিন্ন শহরের মধ্যে পরিবহণের গতি আরও বেড়ে যাবে। কলকাতা থেকে বারাণসী কিংবা অন্য দূরবর্তী শহরের মধ্যে যাত্রা হয়তো মাত্র আধঘণ্টায় করা সম্ভব হবে।

সাধারণত, এই ধরনের দ্রুতগতির ট্রেন যাত্রীদের জন্য অনেক সুবিধা নিয়ে আসবে। তাছাড়া, এটি পরিবহণ খাতে বিপুল পরিমাণ সময় ও খরচের সাশ্রয় করতে সক্ষম হবে। তবে, এই প্রযুক্তি যাতে সফলভাবে চালু করা যায়, তার জন্য আরও পরীক্ষামূলক কাজ প্রয়োজন।
বিভিন্ন দেশে হাইপারলুপ প্রযুক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, এবং ভারতে এটি যদি সফলভাবে রূপায়িত হয়, তবে এটি নিঃসন্দেহে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করবে, যা ভারতের রেল যাত্রাকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে।