কলকাতার পূর্ব অঞ্চলের আনন্দপুর এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ সাহিল, যিনি মূলত মহিলাদের জামার ডিজাইন করতে পারদর্শী, সম্প্রতি এক অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছেন। ফ্যাশন ডিজাইনের আড়ালে এই যুবক শুরু করেন ATM জালিয়াতি। বিদেশি অপরাধের ধরন সোশাল মিডিয়ায় দেখে, সেই একই পদ্ধতি দেশে প্রয়োগ করে এটিএম থেকে টাকার কেলেঙ্কারি চালায়। লালবাজারের সাইবার থানার গোয়েন্দা পিয়ালি বড়ুয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
কিভাবে জালিয়াতির কাজ করতো সাহিল ?

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাহিল বিদেশ থেকে স্কিমার কেনার টাকা না থাকার কারণে নিজেই একটি অভিনব পদ্ধতি বের করে। এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ATM এর কার্ড প্রবেশ করানোর অংশ খুলে ফেলেছিল সে। সেই অংশটি পরে একটি অন্য ATM থেকে চুরি করা ‘ডিভাইস’-এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করে। এর সঙ্গে ছিল একটি মোবাইল ফোন, যা তিনি আঠা দিয়ে এটিএম-এর কি-প্যাডের ওপর আটকে রাখতেন। মোবাইলটি চালু অবস্থায় থাকতো এবং গ্রাহকের পিন নম্বরের ছবি বা ভিডিও ধারণ করতো।
অন্যদিকে, সাহিল কয়েকটি ভুয়া সিমকার্ড সংগ্রহ করে, সেগুলির মাধ্যমে জাল হেল্পলাইন নম্বর তৈরি করে এটিএমে আটকে দেয়। যখন গ্রাহক তার কার্ডটি প্রবেশ করাতো, তখন ওই ‘দিশি ডিভাইসে’ কার্ড আটকে গিয়ে, গ্রাহককে ফোন করে পিন নম্বর প্রদান করতে বলা হতো। পিন নম্বর প্রদান করার পরও যখন কার্ড বের হয়নি, তখন সাহিল ভিকটিমের পিন নম্বরটি সংগ্রহ করে তারেই টাকা তুলে নিতো।
গ্রেপ্তার এবং তদন্ত
এখন পর্যন্ত পুলিশ জানতে পেরেছে, সাহিল একাধিক এটিএমে এই ধরনের জালিয়াতি করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক ব্যক্তি ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা হারিয়ে ফেলেছে। যদিও সাহিল দাবি করেছে যে, তিনি প্রথমে জুতোর ব্যবসা করতেন এবং সেভাবে বিশেষ কিছু লাভ করতে পারেননি। এরপর মহিলাদের জামার ডিজাইন শুরু করেন, কিন্তু অতিরিক্ত টাকা আয়ের জন্য সোশাল মিডিয়ায় দেখানো বিদেশি অপরাধের পদ্ধতি অনুসরণ করে তিনি এই অপরাধে জড়ান।
রবিবার সাহিলকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে, বিচারক তাকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে গোয়েন্দারা তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন এবং তাকে জেরা করে আরও কারও involvement আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন।
গোয়েন্দাদের নজর

কলকাতা শহরের বিভিন্ন এটিএম থেকে এই ধরনের জালিয়াতি চালানোর পরে, এখন গোয়েন্দারা তার কর্মকাণ্ডের সঠিক পরিসর নির্ধারণের জন্য তদন্ত চালাচ্ছে। সাহিলের দাবি অনুযায়ী, তিনি একাধিক ATM-এ এই কাজ করেছেন, কিন্তু তার কতটা সফলতা ছিল, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। এদিকে, সাহিলের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে বিদেশি অপরাধীদের পদ্ধতি অনুসরণ করায়, গোয়েন্দাদের তদন্ত এখন বিদেশি চক্রের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে এমন সন্দেহ রয়েছে।
এখন পুলিশ আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য সাহিলের সঙ্গে জোরালো জেরা চালাচ্ছে, আর আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই জালিয়াতি চক্রের আরও সদস্যদের চিহ্নিত করা যাবে।