দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দির ঘিরে উৎসবের আমেজ এখনও কাটেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বড়সড় আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে। এর মধ্যেই শুরু হল এক তীব্র বিতর্ক—পুরীর পবিত্র নিমকাঠ ‘হাতিয়ে’ তৈরি হয়েছে দিঘার জগন্নাথ মূর্তি? এবার সরাসরি তদন্তের নির্দেশ দিলেন ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন।
বিতর্কের উৎস কোথায়?

২০১৫ সালে পুরীতে হয়েছিল নবকলেবর উৎসব। এই রীতিতে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার মূর্তিকে নতুন পবিত্র নিম কাঠ দিয়ে গড়া হয়। সেই সময় নাকি কিছু বাড়তি নিম কাঠ থেকে গিয়েছিল, আর সেই বাড়তি কাঠ দিয়েই দিঘার মন্দিরের মূর্তি তৈরি হয়েছে—এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন পুরীর এক দৈতাপতি রামকৃষ্ণ দশমহাপাত্র।
বাংলার মিডিয়ার সামনে তিনি নাকি নিজেই বলেছিলেন, “দিঘার মূর্তিগুলো ২০১৫ সালের পুরীর বাড়তি পবিত্র নিম কাঠ দিয়েই তৈরি।” যদিও পরে একটি সাংবাদিক বৈঠকে তিনি সম্পূর্ণ ঘুরে দাঁড়ান এবং দাবি করেন—“আমার কথাকে বিকৃত করে প্রচার করা হয়েছে। দিঘার মূর্তি সাধারণ নিম কাঠ দিয়ে তৈরি।”
তাহলে সত্যিটা কী? তদন্তে নামছে ওড়িশা প্রশাসন
এই দ্বিধা এবং বিতর্ক ঘিরেই এবার নড়েচড়ে বসেছে ওড়িশা সরকার। আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন নির্দেশ দিয়েছেন — পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দির প্রশাসক অরবিন্দ পাধি-কে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

বিশেষত ২০১৫ সালের নবকলেবর উৎসবে যে বাড়তি নিম কাঠ সংরক্ষিত ছিল, তা আদৌ দিঘায় ব্যবহৃত হয়েছে কি না, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে।
পুরী বনাম দিঘা: ‘ধাম’ নিয়ে উত্তাল বিতর্ক
দিঘার নতুন মন্দিরের উচ্চতা ২১৩ ফুট, যা প্রায় পুরীর ২১৪ ফুটের সমান। এই মন্দিরকেই এখন কেউ কেউ বলছেন “দ্বিতীয় জগন্নাথ ধাম।” এতেই ফুঁসে উঠেছেন পুরীর সেবাইত সমাজ এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা। সুদর্শন পট্টনায়ক, বিশ্ববিখ্যাত স্যান্ড আর্টিস্ট, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে বলেন—
“পৃথিবীতে একটাই জগন্নাথ ধাম, তা হল পুরী। অন্য কোথাও এমন দাবি বিভ্রান্তি তৈরি করবে।”
কে দিল নিম কাঠ? কোথা থেকে এল অনুমতি?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—যদি সত্যিই পুরীর বাড়তি নিম কাঠ দিঘায় গিয়ে থাকে, তবে সেটা কার অনুমতিতে গেল? কীভাবে গেল? পুরীর পবিত্র কাঠ কি কোনওভাবে বেসরকারি হাতে গিয়েছিল?
এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুরীর বহু সেবাইত ও ধর্মীয় নেতারা।

তদন্তের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে দেশবাসী
এই বিতর্কের কেন্দ্রে এখন দাঁড়িয়ে আছে একটাই প্রশ্ন—পুরীর পবিত্রতা কি রক্ষা হয়েছে? ওড়িশা সরকার এই তদন্তের মাধ্যমে সত্য সামনে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সকলে। যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হন, কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ওড়িশার আইনমন্ত্রী।