গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলার ঘটনার পর কেটে গেছে মাত্র ১৫ দিন। হামলার নির্মমতা ও লক্ষ্যবস্তুর চরিত্র গোটা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সাধারণ পর্যটকদের, বিশেষত পুরুষদের টার্গেট করে চালানো হয় সেই হামলা, যেখানে তাঁদের স্ত্রীর চোখের সামনেই প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়। এই নির্মমতার জবাবই উঠে এল ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গিঘাঁটিতে চালানো ভারতীয় সেনার পাল্টা হামলা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামেই পরিচিতি পেয়েছে। সেনা সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই অভিযানের নামকরণে সায় দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পহেলগাঁওয়ের বিভীষিকাময় ঘটনার প্রতীক হিসেবে ‘সিঁদুর’-এর নামকরণ ধরা হচ্ছে এক শক্তিশালী বার্তা হিসেবেই।

কেন ‘সিঁদুর’?
হিন্দু বিবাহিত নারীদের কপালে থাকা সিঁদুর প্রতীক হয়ে থাকে তাঁদের বৈবাহিক জীবনের। কিন্তু পহেলগাঁওয়ের সেই জঙ্গি হামলায় যেভাবে নারীদের স্বামীদের হত্যা করা হয়, তা যেন এক এক করে মুছে দিয়েছিল সেই ‘সিঁদুর’। এই প্রেক্ষিতেই সেনা অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ হয়ে ওঠে প্রতিশোধ ও প্রতিকারের প্রতীক।
সেই ঘটনার পর ভাইরাল হওয়া ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল হরিয়ানার নৌসেনা আধিকারিক বিনয় নরওয়ালের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী হিমাংশী নরওয়ালের কান্নাভেজা মুখ ও নিথর দেহ আঁকড়ে ধরা ছবি। সেই ছবি যেন গোটা দেশের ক্ষোভ ও শোককে এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করে।
প্রত্যাঘাতের লক্ষ্যবস্তু :
সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি স্থানে জইশ-ই-মহম্মদ ও লস্কর-ই-তৈবা-র জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে এই প্রত্যাঘাত চালানো হয়। পাকিস্তানের বহওয়ালপুর অঞ্চলে থাকা জইশের শক্ত ঘাঁটি, যেখান থেকে এই হামলার ছক কষা হয়েছিল বলেই সন্দেহ, সেটিও ছিল এই অভিযানের মূল লক্ষ্য।
সেনা বিবৃতিতে বলা হয়, “ভারতের সশস্ত্র বাহিনী অপারেশন সিঁদুর শুরু করেছে। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী কাঠামোগুলিকে আঘাত করা হয়েছে। যেখান থেকে ভারতে হামলার পরিকল্পনা ও রূপরেখা তৈরি হয়।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পাকিস্তানের অবস্থান :
পাকিস্তান হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে শুরু থেকেই। তারা নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে। আমেরিকা, চিন, রাশিয়া-সহ অন্যান্য বিশ্ব শক্তি ভারত ও পাকিস্তানকে কূটনৈতিক মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের বার্তা দেয়।
তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিলেন, যার ফলস্বরূপ এই ১৫ দিনের মাথায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ রূপ নেয়।
‘অপারেশন সিঁদুর’ শুধু একটি সেনা অভিযান নয়, এটি এক প্রতীকী বার্তা— যে দেশ তার নাগরিকের রক্তপাত মেনে নেয় না। যেখান থেকে জঙ্গি হামলা হবে, সেখানেই জবাব দেবে ভারত। আর সেই জবাবের ভাষা হবে সুশৃঙ্খল, কৌশলী এবং পরিণামদায়ী। পহেলগাঁওয়ের নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারকে ন্যায়বিচার দেওয়ার পথে এই অপারেশন এখন হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের নতুন প্রতীক।