৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পরিচিত এই অভিযানে সাফল্যের পর গোটা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে বাহিনীর প্রশংসার ঢল। বলিউড থেকে টলিউড, দক্ষিণের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি—সবখানেই দেশপ্রেমের ঢেউ উঠেছে। কিন্তু এই আবহেই একেবারে ভিন্ন সুর শোনা গেল প্রখ্যাত গায়ক ও গীতিকার কবীর সুমন-এর কণ্ঠে।
যুদ্ধ নয়, শান্তির পক্ষে কবীর সুমন :

এক সাক্ষাৎকারে কবীর সুমন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি যুদ্ধের ঘোর বিরোধী। তাঁর মতে, “যেই যুদ্ধ করুক, যেমন কারণেই করুক, আমি যুদ্ধের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ মানেই ধ্বংস। আমি গানে গানে যুদ্ধ বিরোধিতার কথা বলেছি, আজকের দিনে নিশ্চয় অনেক শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সেই গান মনে পড়বে।”
দেশপ্রেম নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য :
দেশপ্রেমের ধারণাকে ‘বুজরুকি’ বলে কটাক্ষ করেছেন গায়ক। তাঁর কথায়, “দেশপ্রেমে মানবপ্রেম নেই। প্রাণী, গাছপালা—কোনও কিছুর প্রতিই প্রেম নেই সেখানে। আমার অনুমতি কেউ নিয়েছিল যখন দেশ ভাগ হয়েছিল? দেশের মানুষ কি সেদিন কিছু বলতে পেরেছিল?” এই প্রশ্ন তুলে তিনি মূলত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের নামে মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া দায়বদ্ধতার সমালোচনা করেন।
নিরীহ প্রাণীর মৃত্যুতে বেদনাহত কবীর :

সেনা অভিযানে প্রাণহানি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গানওলা বলেন, “যে যুদ্ধ হচ্ছে, তাতে এই পৃথিবীর যাদের কোনও দোষ নেই, তারাই মারা যাচ্ছে। গাছ পুড়ে যাচ্ছে, পাখি, পোকামাকড় মারা যাচ্ছে, জল বিষিয়ে যাচ্ছে—এগুলো নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।” তাঁর মতে, যুদ্ধ শুধু মানুষ নয়, প্রকৃতিরও শত্রু।
ধর্মের নামে যুদ্ধকে স্বীকৃতি নয় :
ধর্মীয় কারণে যুদ্ধকে তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তাঁর মতে, ধর্মের নামে সংঘর্ষ কিংবা প্রাণহানি মানবতার পরিপন্থী।
যখন গোটা দেশ সেনাবাহিনীর সাহসিকতায় গর্বিত, তখন কবীর সুমনের এমন বক্তব্য নিঃসন্দেহে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট—তিনি মানবতা ও শান্তির পক্ষে, যুদ্ধের নয়। দেশপ্রেম বনাম মানবপ্রেমের এই বিতর্ক হয়তো আজ আরও একবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে সমাজকে।