এতদিন ধরে জন্ম শংসাপত্র পেতে যে ঢিলেমি বা জালিয়াতির অভিযোগ উঠছিল, এখন তার দিন শেষ। নবান্ন এবার এই প্রক্রিয়ায় একগুচ্ছ নতুন নিয়ম নিয়ে এসেছে, যা জন্ম শংসাপত্র প্রদানকে আরও স্বচ্ছ এবং সুরক্ষিত করবে। বিশেষত ভুয়ো শংসাপত্র তৈরি রুখতে রাজ্য সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
নতুন নিয়মের মূল দিকগুলি:
- হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেট ও বাবা-মায়ের পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক: এখন থেকে শিশুর জন্ম শংসাপত্র পেতে হলে হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটের সঙ্গে বাবা ও মায়ের পরিচয়পত্র জমা দেওয়া আবশ্যিক। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হল সঠিক ঠিকানা যাচাই করা এবং জালিয়াতি ঠেকানো।
- বাবা ও মা, উভয়ের পরিচয়পত্র লাগবে: আগে যেকোনো একজনের পরিচয়পত্র দিলেই চলত, কিন্তু এখন বাবা এবং মা, দুজনেরই আধার কার্ড, এপিক কার্ড (ভোটার আইডি) অথবা খাদ্যসাথী কার্ড প্রমাণ হিসেবে দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
- পঞ্চায়েত প্রধানের ক্ষমতা খর্ব, বিএমওএইচ-এর অনুমোদন আবশ্যিক: গ্রামাঞ্চলে জন্মানো শিশুর জন্ম শংসাপত্র ইস্যুর ক্ষেত্রে এক বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে শুধুমাত্র পঞ্চায়েত প্রধানের স্বাক্ষরে বার্থ সার্টিফিকেট মিলবে না। ব্লক মেডিক্যাল অফিসার অফ হেলথ (বিএমওএইচ)-এর অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কেন নবান্ন এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ?

সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাঠানখালি গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ রাজ্যের একাধিক পঞ্চায়েতের দেওয়া জন্ম শংসাপত্র নিয়ে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। একটি চক্র ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি করে আধার কার্ড, ভোটার তালিকায় নাম তোলা এবং জাল পাসপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করছিল বলে অভিযোগ। এই চক্রের জালিয়াতি রুখতেই নবান্ন এই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
নতুন নিয়মানুযায়ী প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করবে?
নতুন নিয়মানুযায়ী, শিশুর জন্ম শংসাপত্রের আবেদন জমা পড়ার সাথে সাথেই আশা কর্মীরা প্রত্যেক বাড়ি গিয়ে তথ্যের সত্যতা যাচাই করবেন। ওই রিপোর্ট বিএমওএইচ-এর কাছে জমা দিলে, সেই রিপোর্ট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখার পর বিএমওএইচ জন্ম-মৃত্যু নথিভুক্তির পোর্টালে অনুমোদন দেবেন, তবেই শংসাপত্র মিলবে।
এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি জন্ম-মৃত্যু নথিভুক্তির পোর্টালে সরাসরি সংযুক্ত থাকবে। এর ফলে কোনো রকম ভুয়ো আবেদন বা অসত্য তথ্য দিয়ে শংসাপত্র ইস্যু করা কঠিন হবে। পোর্টালের নিরাপত্তাও বাড়ানো হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো রকম জালিয়াতির সুযোগ না থাকে।
নবান্নের এই নতুন ঘোষণা নিশ্চিতভাবে জন্ম শংসাপত্র প্রদান প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে এবং জালিয়াতির প্রবণতা অনেকাংশে কমিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি সাধারণ মানুষের জন্য একটি স্বস্তির খবর, কারণ এর ফলে বৈধ শংসাপত্র প্রাপ্তি আরও সহজ এবং নিরাপদ হবে।