রক্তের এক নতুন রহস্য উন্মোচিত হল! প্রায় ১৫ বছর ধরে চলা নিরলস গবেষণার পর অবশেষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল এক ফরাসি মহিলার শরীরে আবিষ্কৃত এক অভিনব ব্লাড গ্রুপ। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের গুয়াদেলুপের এই ফরাসি মহিলা বর্তমানে ‘গোয়াদা নেগেটিভ’ নামক এই বিরল রক্তের গ্রুপের একমাত্র পরিচিত ধারক। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
ফ্রান্সের জাতীয় রক্ত পরিষেবা সংস্থা ‘এতাব্লিশমঁ ফ্রঁসে দু সাঁ (ইএফএস)’ শুক্রবার এই চাঞ্চল্যকর খবরটি জানিয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৫ বছর আগে, যখন ওই ফরাসি মহিলার বয়স ৫৪ এবং তিনি প্যারিসে বাস করতেন, তখন একটি অস্ত্রোপচারের আগে তার রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেই সময় সংগৃহীত রক্তের নমুনা গবেষকদের হাতে আসে, যা থেকেই শুরু হয় এক দীর্ঘ এবং জটিল অনুসন্ধান।
ইএফএস জানিয়েছে, এটি পৃথিবীর ৪৮তম রক্তের ‘গ্রুপ সিস্টেম’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গত জুনে মিলানে ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন (আইএসবিটি)’ এই নতুন ব্লাড গ্রুপকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে পৃথিবীতে ৪৭টি ভিন্ন রক্তের গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। রক্তের সঠিক গ্রুপ জানা না থাকলে রোগীর জীবন বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ইএফএস-এর গবেষক থিয়েরি পেয়রার্ড সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ২০১১ সালে ওই মহিলার রক্ত পরীক্ষার সময় তাতে ‘অস্বাভাবিক’ অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তখন গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ছিল না। ২০১৯ সালে বিজ্ঞানীরা এই ‘রহস্য’ কিছুটা ভেদ করতে সক্ষম হন। ডিএনএ সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে এই অজানা রক্তের গ্রুপের রহস্য উন্মোচিত হয়।

বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে, এই মুহূর্তে ওই মহিলাই পৃথিবীতে ‘গোয়াদা নেগেটিভ’ রক্তের গ্রুপের একমাত্র পরিচিত ধারক। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, তিনি তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে এই রক্তের গ্রুপ পেয়েছেন, এবং তাদের জিনে এক বিরল মিউটেশনের ফলেই এটি ঘটেছে।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ‘এবিও’ রক্ত গ্রুপের সিস্টেম আবিষ্কারের পর থেকে অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির ভিত্তিতে রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করা হতো। তবে ডিএনএ সিকোয়েন্সিংয়ের মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এখন বিজ্ঞানীরা বিশ্বজুড়ে খুঁজে দেখছেন যে, ‘গোয়াদা নেগেটিভ’ রক্তের গ্রুপ বহনকারী আরও কোনো ব্যক্তি আছেন কিনা। এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে রক্ত সঞ্চালন এবং জেনেটিক গবেষণায় নতুন পথ খুলে দেবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।