শান্তিনিকেতনে শোকের ছায়া! মাটিতে মিশে যাচ্ছে অবনীন্দ্রনাথের ঐতিহ্যবাহী ভিটে

মাটিতে মিশে যাচ্ছে অবনীন্দ্রনাথের ঐতিহ্যবাহী ভিটে

শান্তিনিকেতনের বুকে সেজে থাকা একের পর এক ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস আজ বিলুপ্তির পথে এগিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি প্রখ্যাত শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি ভেঙে ফেলার কাজ চলছে। এ নিয়ে ক্ষোভ আর আক্ষেপে ফুঁসছে শান্তিনিকেতনের আপামর জনগণ।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো তথা বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় আচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন তাঁর ছেলে অলকেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই বাড়িতে জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছিলেন শিল্পী। তাঁর নামানুসারেই শান্তিনিকেতনের ওই এলাকার নামকরণ ‘অবনপল্লী’ হয়েছিল।

সেই ঐতিহ্যবাহী ‘আবাস’ নামক বাড়িটি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে, কারণ সেখানে নাকি বহুতল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এভাবেই কি কবির সাধের শান্তিনিকেতন অসাধু ঠিকাদার এবং জমি হাঙরদের দখলে চলে যাবে?

দীর্ঘদিন ধরে এই বাড়িতে কেউ থাকতেন না। মাঝে মাঝে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতি অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে এসে কিছুদিন থাকতেন। তিনি শেষ কবে এসেছিলেন, সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই। বাড়িটি তালাবদ্ধ অবস্থাতেই পড়েছিল, আর হঠাৎ করেই এই বাড়ি ভাঙার খবর প্রকাশ্যে আসতেই গোটা শান্তিনিকেতন জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে গেছে।

ঠাকুর পরিবারের আক্ষেপ :

শান্তিনিকেতনে শোকের ছায়া!

সুদৃপ্ত ঠাকুর এই ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, “শান্তিনিকেতনের বহু স্মৃতিই এইভাবে মুছে ফেলা হচ্ছে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ির আজকের দিনে কোনো মূল্য নেই। জমি ব্যবসায়ীদের কাছে অবনীন্দ্রনাথের বাড়ির চেয়ে জমির দাম অনেক বেশি। এটা নতুন কিছু নয়। বিশ্বভারতীতে আনন্দ পাঠশালার উলটো দিকে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর কোয়ার্টারও একসময় ধূলিসাৎ করা হয়েছে। শান্তিনিকেতনকে একটা অন্য রূপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, যা আমাদের মতো মানুষের পছন্দ নয়। অবনীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে জলাঞ্জলি দেওয়া হচ্ছে, এটা মর্মান্তিক। খুব খারাপ লাগছে।”

বাড়ি ভাঙার কাজে রত শ্রমিকদেরকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা স্পষ্টভাবে কোনোকিছু জানাতে পারেননি। তাঁরা বলেন যে, তাঁদেরকে বাড়িটি ভাঙার কাজ দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা সেই মতোই নিজেদের কাজ করছেন। তবে কার নির্দেশে বা কেন এই বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে, সে সম্পর্কে তাঁরা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

জানা গেছে, গত দুই দশক ধরে বোলপুর-শান্তিনিকেতনে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। কখনও ঐতিহ্যবাহী কোপাই নদীর তীর দখল, কখনও আদিবাসীদের জমি দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে বিলাসবহুল আবাসন, রিসর্ট, রেস্তোরাঁ, বহুতল, হোটেল, লজ প্রভৃতি। এইসব অভিযোগ পেয়েও প্রশাসনকে নির্বিকার ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়, এ নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। কিন্তু জমি মাফিয়াদের কোপে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী তথা লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ধ্বংসের মুখে। এমন একজন মহান মানুষের বাড়িও আজ জমি মাফিয়াদের থাবা থেকে রেহাই পেল না।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের শেষ সময় এই বাড়িতে বেশ কিছুদিন কাটিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ি ভাঙার কাজ জোরকদমে চলছে। জানা গেছে, বহুতল নির্মাণ হবে এখানে, আর এতেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্পর্কে প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে বোলপুর পৌরসভা ও শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ প্রখ্যাত শিল্পীর বাড়ি ভেঙে ফেলার অনুমতি দিল?

ঐতিহ্যবাহী বাড়ি ও স্মৃতিকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া নিয়ে রীতিমতো আক্ষেপ ও ক্ষোভ রয়েছে শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক, আশ্রমিক সকলেরই। এই ঘটনা শান্তিনিকেতনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তাকে মনে করিয়ে দেয়।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts